করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে স্কুল । কবে থেকে স্কুল খুলবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে স্কুল পড়ুয়াদের পড়াশোনা যাতে কোনোভাবে মাঝপথে থেমে না যায় এবং তাঁরা যেন ঠিকমতো পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে তারজন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে পড়ুয়াদের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এবার ইয়াস বিধ্বস্ত এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ পড়ুয়াদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিল ‘বর্ধমান ফুডিজ ক্লাব’ (Burdwan Foodies Club)।
মে মাসে হওয়া ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে পূর্ব মেদিনীপুর বিভিন্ন জায়গা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সেখানকার ছোট ছোট গ্রামগুলিও। আজ পূর্ব মেদিনীপুরের চাঁদপুর গ্রামে পৌঁছে গিয়েছিল বর্ধমান ফুডিজ ক্লাব। সেখানকার স্কুল পড়ুয়াদের জন্য একটি বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করেছিল তাঁরা। ১০১ জন পড়ুয়া অংশগ্রহণ করেছিল এই পরীক্ষায়। এই পরীক্ষায় যেসব পড়ুয়া ভালো ফল করবে তাঁদেরকে স্কলারশিপ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে । বোধড়া টেংরামারীর স্কুলে এই বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছিল। অনেকদিন পর স্কুলের পোশাক পড়ে স্কুলে আসতে পেরে তাঁরা খুব খুশি বলে জানায় পড়ুয়ারা।
এই কর্মসূচিতে ফুডিজ ক্লাবকে সহযোগিতা করেছে ইচ্ছে উড়ান গ্রুপ। ইচ্ছে উড়ান গ্রুপের এক সদস্য বর্ধমানবাসী এবং বর্ধমান ফুডিজ ক্লাবের সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ঝড়ের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য গত একমাস ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন বর্ধমান ফুডিজ ক্লাবের সদস্যরা। তাঁরা এখানে প্রথমে গত মাসের ৩ তারিখে এসেছিলেন। আজ ৩ জুলাই, এক মাস পর তাঁরা আবার এই বিশেষ কর্মসূচির জন্য এখানে এসেছেন। প্রথমবার তারা যখন এখানে এসেছিলেন তখন এখানে একটি কমিউনিটি কিচেনের ব্যবস্থা করেছিলেন। এই কিচেনেটি যতটা সম্ভব দেখাশোনা করার চেষ্টা করে চলেছে আমরা।”
এদিনের এই বিশেষ কর্মসূচিতে ফুডিজ ক্লাবের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ফুডিজ ক্লাবের পক্ষ থেকে গিয়েছেন মৈনাক মুখার্জি, সুরজিৎ ধর, অরিন্দম পালিত, নিরঞ্জন বেহারা, নীলাক্ষী সিনহা, শুভব্রত হালদার এবং সুচিস্মিতা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান এবং উপপ্রধান। এদিন বৃত্তি পরীক্ষার পাশাপাশি পড়ুয়াদের হাতে খাতা, পেন, স্যানিটাইজার, মাস্ক তুলে দেওয়া হয় এবং দুপুরের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।
বর্ধমান ফুডিজ ক্লাবের পক্ষ থেকে সুরজিৎ ধর জানান, “দীঘা কে আমরা সাধারণত পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে চিনি, কিন্তু দীঘার অবস্থা এখন অনুকূল নয়। শুধু দীঘা নয়, দীঘার আশেপাশের গ্রাম গুলিও ইয়াসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা আজকে বোধড়া টেংরামারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসেছি। এখানে আজ ১০১ জনের বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। যারা এই পরীক্ষা ভালো ফল করবে তাদের ১০০০ টাকা করে বৃত্তি দেওয়া হবে। তবে এই বৃত্তি একবারের জন্য দেওয়া হচ্ছে না, বৃত্তি প্রাপ্ত পড়ুয়ারা যতদিন স্কুলে পড়াশোনা করবে ততদিন এই বৃত্তি তাদের দেওয়া হবে। এই উদ্যোগ নেওয়ার কারণ হল ইয়াসের কারণে দীঘার উপকূলবর্তী এলাকার গ্রামগুলি বিপুল পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, অনেকেই নিজের বাসস্থান হারিয়েছে। যেখানে তাদের কাছে মাথা উপর ছাদ নেই, সেখানে তাঁরা পড়াশোনা করবে কীভাবে। তাদের পাশে বিএফসি দাঁড়াতে চাইছে, কারণ শিক্ষার থেকে বড় সাধনা কিছু হয় না। বিএফসি তাদের পাশে আছে যারা পড়াশোনা করতে চায় এবং এগিয়ে যেতে চায়।”
বর্ধমান ফুডিজ ক্লাবের পক্ষ থেকে মৈনাক মুখার্জি বলেন, “এখানে বৃত্তি পরীক্ষার পাশাপাশি দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করেছি আমরা। একটি কমিউনিটি কিচেন শুরু করা হয়েছিল ১ মাস আগে। এই কমিউনিটি কিচেন এর মাধ্যমে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ জনের জন্য দুবেলা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই কমিউনিটি কিচেনটি আরও দু সপ্তাহ ধরে চালানো হবে। আজকের মেনু ভাতের সঙ্গে মাছ এবং আলু পটলের তরকারি।” এছাড়াও তিনি বলেন, “খালি পেটে পড়াশোনা হয় না, তাই তাদের পড়াশোনার সঙ্গে খাবারেরও ব্যবস্থা করেছি আমরা।”
বর্ধমান ফুডিজ ক্লাবের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বোধড়া টেংরামারী বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, “আমাদের এই অঞ্চলে প্রায় ১২-১৩ টি স্কুল আছে। প্রতিটি স্কুলের উচ্চ শ্রেণির পড়ুয়াদের সঙ্গে প্রাইমারি অর্থাৎ প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য যদি এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়, তবে তাদের মধ্যে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে তোলা সম্ভব হবে।”