Durga Puja 2021: বেজে উঠেছে আগমনীর সুর। দেবী দুর্গার আরাধনায় সেজে উঠেছে চারিদিক। শরতের আকাশ, কাশফুল, শিউলি ফুলের সমারোহে সেজে উঠেছে প্রকৃতিও। থিমের ছোঁয়া হোক কিংবা সাবেকি পুজোর রীতি, মাতৃ আরাধনার আয়োজনে ব্যস্ত সকলে।আজকে জানব ২০০ বছরেরও বেশি পুরনো বর্ধমানের কাঞ্চন নগরের ব্রাহ্মণ বাড়ির দুর্গাপুজোর ইতিহাস সম্পর্কে।
শুধুমাত্র দুর্গাপুজোর চারদিন মহিষাসুরমর্দিনী হিসেবে নয়, সারা বছর ধরে ‘শুভ মা‘ রূপে দেবী দুর্গার পুজো করা হয় বর্ধমানের (Burdwan) কাঞ্চন নগরের (Kanchan Nagar) ব্রাহ্মণ বাড়িতে। প্রায় ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্রাহ্মণ বাড়িতে পূজিত হচ্ছেন ‘শুভ মা’। দেবী দুর্গার ‘শুভ মা’ রূপের পুজো শুরু হয়েছিল পোদ্দার পাড়ার হরিপদ পালের বাড়িতে। হরিপদ পালের কোনও উত্তরাধিকারী না থাকায় তিনি এই পুজোর দায়িত্ব তুলে দেন তাঁরই পরিচিত ভবতারণ বিদ্যাভূষণকে। তারপর থেকেই অর্থাৎ ১৩৪৫ সাল থেকে এই পুজো তাঁতিপাড়ায় হয়ে আসছে। দুর্গাপুজোর চারদিন ছাড়াও এখানে বারোমাস ধরে দেবী মূর্তির পুজো করা হয়। তবে ১২ বছর অন্তর এখানকার দেবী মূর্তি বিসর্জন করে নতুন দেবী মূর্তি তৈরি করা হয়। এছাড়াও বিশেষ নিয়ম রয়েছে এই পুজোর আচার আচরণে।
মঙ্গলময়ী ‘শুভ মা’ তাঁতিপাড়ায় একচালায় স্বপরিবারে পূজিত হন। আগে এই পুজোয় বলি প্রথার প্রচলন থাকলেও, ‘শুভ মা’-এর পুজো ব্রাহ্মণ বাড়িতে শুরু হওয়ার পর থেকে বলি প্রথা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ষষ্ঠীর দিন ষষ্টি কল্পনা দিয়ে শুরু হয় পুজো। দুর্গাপুজোর চারদিন তিনবেলার জন্য ভোগের আয়োজন করা হয়। এই পুজোর বিশেষত্ব হল, অষ্টমীর খ্যানের সময় মায়ের বিশেষ আরতি ১৫টি রত্নদ্বীপ দিয়ে করা হয়। এছাড়াও ১০৮ টি প্রদীপ জ্বালিয়ে ‘শুভ মা’ রূপী দেবী দুর্গার পুজো দেওয়া হয়। তবে এখন বলি প্রথা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান কাঞ্চন নগরের ব্রাহ্মণ পরিবারের সদস্যরা।
বর্তমানে কাঞ্চন নগরের ব্রাহ্মণ পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যা রেণুকা দেবী বলেন, এই পুজোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন তাঁর শ্বশুর। হরিপদ পাল সম্পর্কে রেণুকা দেবীর শ্বশুরের মামা হতেন। হরিপদ পালের বংশধর না থাকায় ওনার শ্বশুর ভবতারণ বিদ্যাভূষণকে এই পুজোর ভার দিয়ে যান। আগে পোদ্দার পাড়ায় পালেদের বাড়িতে এই পুজো হত। বর্তমানে কাঞ্চন নগরের ব্রাহ্মণ বাড়িতে এই পুজো স্থানান্তর করা হয়। তাঁর শ্বশুরের কাছে রেণুকা দেবী শুনেছেন দেবী একবার স্বপ্নাদেশ দিয়ে জানিয়েছিলেন তিনি ‘শুভ মা’ রূপে সারা বছর পুজো নিতে চান। সেই কারণেই এখানে দেবী মূর্তির বিসর্জন করা হয় না। ১২ বছর অন্তর মূর্তি পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু এই ১২ বছরের মধ্যে যদি মূর্তির কোনও ক্ষতি হয় তবে শাস্ত্রমতে নতুন মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। নতুন মূর্তি তিন বছর আগে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
রেণুকা দেবী আরও বলেন, যখন পাল বাড়িতে পুজো হত তখন মোষ বলি ও চ্যাং মাছ বলি দেওয়ার নিয়ম ছিল। এখন বলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাল বাড়িতে এখনও দেবীর থান রয়েছে, তবে সেখানে আর পুজো হয় না। ব্রাহ্মণ বাড়িতে পুজোর চারদিন এলাকার মানুষজনদের নিয়ে মহাধুমধামে পুজো করা হয়। মায়ের ভোগ পাড়ার মানুষজনদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
আরও পড়ুন
ছোট হাতের দুর্গা নামে খ্যাত বীরভূমের কীর্ণাহারের সরকার বাড়ির দুর্গা প্রতিমা
Durga Puja 2021: বক্রেশ্বরের সতীপীঠে দুর্গারূপে পূজিত হন মনপাত দেবী