ডেনমার্ক (Denmark) সংসদ ৩৫,০০০ লোকের থাকার জন্য এবং কোপেনহেগেন (Copenhagen) বন্দরকে সমুদ্রের বেড়ে চলা জলস্তরের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কৃত্রিম দ্বীপ তৈরির প্রকল্প অনুমোদন করেছে।
লিনেটেহোলম্যান (Lynetteholmen) নামে এই বিশাল দ্বীপটি রিং রোড, হারবার টানেল (harbour tunnel) এবং মেট্রো লাইনের মাধ্যমে ডেনমার্কের মূল ভূখণ্ডের সাথে সংযুক্ত হবে। এর আকার এক বর্গমাইল অর্থাৎ ২.৬ বর্গ কিলোমিটার হবে এবং এই বছরের শেষের মধ্যেই এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে জানা গেছে।
তবে প্রকল্পটিকে পরিবেশবিদদের বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তারা এই নির্মাণের সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
এই প্রকল্পের নির্মাণকারীরা জানান, বন্দরকে ক্রমবর্ধমান সমুদ্র জলস্তর এবং ঝড়ের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষার জন্য এই নতুন দ্বীপের চারপাশে একটি বাঁধ তৈরি করা হবে।
যদি এই দ্বীপটি প্রস্তুত করার কাজ তার নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুসারে শুরু হয়, তবে ২০৩৫ সালের মধ্যে এর ভিত নির্মাণের বেশিরভাগই প্রস্তুত হয়ে যাবে এবং ২০৭০ সাল নাগাদ এই দ্বীপটি পুরোপুরি তৈরি হয়ে যাবে বলে জানান তারা।
পরিবেশবিদরা দ্বীপটি নির্মাণের বিরুদ্ধে একটি মামলা ইউরোপীয়ান আদালতে (European Court of Justice) (ECJ) দায়ের করেছেন।
পরিবেশবিদদের অনুমান অনুসারে, এই প্রকল্পের কাজ শুরু হলে, এর জন্য কাঁচামাল বহনকারী প্রায় ৩৫০ টি ট্রাক প্রতিদিন কোপেনহেগেন (ডেনমার্কের রাজধানী) দিয়ে যাবে, যা কেবল শহরের রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যাই বৃদ্ধি করবে না, তার সঙ্গে দূষণও বাড়িয়ে তুলবে।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, প্রায় ৪০০ টি ফুটবল ক্ষেত্রের আকারের এই কৃত্রিম দ্বীপটি নির্মাণের জন্য প্রায় ৮০ মিলিয়ন (৮ কোটি) টন মাটির প্রয়োজন হবে।
পরিবেশবিদরা সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র এবং জলের গুণমানের উপর প্রকল্পের সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ডেনমার্কের সংবাদ সম্প্রচারকারী ডিআর-এর খবর অনুযায়ী, শুক্রবার যখন বিলটি পাশ হয়েছিল, তখন রাজধানীতে অবস্থিত সংসদ ভবনের বাইরে আন্দোলন চলছিল। আন্দোলনকারীরা এই পরিকল্পনার বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করার দাবি জানিয়েছিলেন। তবে সংসদের ৮৫ জন সদস্য এর পক্ষে ছিলেন এবং ১২ জন এই প্রকল্পের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন।
আন্দোলনকারীরা ডিআর-এর মাধ্যমে জানান, এই কৃত্রিম দ্বীপটি নির্মাণের সময় ভারী লরিগুলি কোপেনহেগেন দিয়ে যাবে, ফলে এখানকার বাসিন্দাদের বিভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। এছাড়াও অন্য কয়েকজন প্রতিবাদকারী জানান, নভেম্বরে হওয়া স্থানীয় নির্বাচনের আগে এই দ্বীপটি নির্মাণের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হয়নি।
ডেনমার্ক সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি দেশের ইতিহাসে অন্যতম বৃহত্তম নির্মাণ প্রকল্প।
পরিবেশবিদদের উদ্বেগের প্রেক্ষিতে, ডেনিশ রোড ট্রান্সপোর্ট অফ গুডস ( Danish Road Transport of Goods) (ITD)-এর জন্য তৈরি অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ক্যারিনা ক্রিস্টিনসন জানান, “পণ্য বহনের জন্য পরিবহনের অন্যান্য পদ্ধতি রয়েছে যা পরিবেশের খুব বেশি ক্ষতি করে না। তবে এর জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।”
ক্যারিনা আরও জানান, বৈদ্যুতিক ট্রাকগুলি থেকে শব্দদূষণ হয় না এবং তাদের থেকে কার্বনও নির্গত হয় না। ভবিষ্যতের জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প হিসাবে প্রমাণিত হতে পারে বলে জানান তিনি।