Friday, April 19, 2024

Muslin: বিলুপ্ত হওয়া এশিয়ার বিস্ময় ঢাকাই মসলিনকে কীভাবে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে, জেনে নিন

ঢাকার মসলিন (Muslin) ২০০ বছর ধরে এই পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান কাপড় ছিল এবং পরে সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে যায়। এটা কীভাবে ঘটল?

ঢাকার মসলিনের যাত্রা দীর্ঘ সময়ের ছিল। এক সময় এটি বিশ্বের সেরা কাপড় হিসাবে বিবেচিত হত এবং সবচেয়ে মূল্যবানও ছিল। তবে সময়ের সাথে সাথে এই কাপড়ের মান নেমে যায়। আজকাল, আবার এই কাপড়ের গৌরব পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা চলছে। ঢাকার মসলিনটি ষোলো ধাপ পেরিয়ে প্রস্তুত করা হত। এটি তৈরি করা হত কার্পাস গাছের তুলো থেকে তৈরি সূক্ষ্ম সুতো দিয়ে, যা বাংলাদেশের (পূর্ববর্তী  বাংলা) মেঘনা নদীর তীরে চাষ করা হত।

কয়েক হাজার বছর ধরে এই কাপড়টি সারা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পছন্দের কাপড় ছিল। এই মসলিনের কাপড়ের পোশাক প্রাচীন গ্রিসে দেবদেবীর মূর্তি গুলিকে পরানো হত। অনেক দেশের সম্রাজ্ঞীর পোশাক মসলিন দিয়ে তৈরি করা হত। মুঘল সম্রাট এবং আমির-উমরাও, যারা ভারতীয় উপমহাদেশে শাসন করেছিলেন তাদের পোশাকও তৈরি করা হত এই কাপড় দিয়ে।

ঢাকার মসলিনের ভক্ত ছিল গোটা বিশ্ব:

এই মসলিন কাপড়টি বিভিন্ন ধরনের ছিল। এর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দরবারের কবিরা এর নাম দিয়েছিলেন ‘বাফত হাওয়া’ অর্থাৎ বোনা বাতাস। বলা হতো যে এই উৎকৃষ্ট কাপড়টি বাতাসের মতো হালকা ছিল।

এটি এত মসৃণ ছিল যে ৩০০ ফুট লম্বা কাপড়ের টুকরোকে একটি আংটির মধ্যে দিয়ে বের করে নেওয়া যেত। একজন ভ্রমণকারী লিখেছিলেন, ৬০ ফুট লম্বা কাপড়কে ভাঁজ করে নস্যির একটি ছোট্ট বাক্সে রাখা যেত।

ঢাকার মসলিন কাপড় এত মসৃণ ছিল যে ৩০০ ফুট লম্বা কাপড়ের টুকরোকে একটি আংটির মধ্যে দিয়ে বের করে নেওয়া যেত।

মসলিন সাধারণত শাড়ি বা জামা (কুর্তা) তৈরিতে ব্যবহৃত হত, তবে ব্রিটেনে এটি অভিজাতদের পোশাক হয়ে গিয়েছিল। এই কাপড়টি এতটাই স্বচ্ছ ছিল যে কখনো কখনো এটি পরিধানকারী উপহাসের বিষয় হয়ে উঠতেন।

তবে এই কারণে ঢাকার মসলিনের জনপ্রিয়তা কমেনি। যাঁরা এটি কেনার ক্ষমতা রাখতেন, তারা এই কাপড় পরতেন। এটি ছিল সেই যুগের সবচেয়ে ব্যয়বহুল কাপড়। ১৮৫১ সালের দিকে, এক গজ মসলিন কাপড়ের দাম ৫০ থেকে ৪০০ পাউন্ডের মধ্যে ছিল।

এখনকার সময়ে এই কাপড়ের দাম ৭ হাজার থেকে ৫৬ হাজার পাউন্ড। এর অভিজাত প্রশংসাকারীর কোনো অভাব ছিল না। এর মধ্যে রয়েছেন ফ্রান্সের কুইন মেরি অ্যান্টিয়েট থেকে সম্রাজ্ঞী বোনাপার্ট এবং জেন অস্টেনও। কিন্তু এই কাপড়টি যখন সদ্য জাগ্রত ইউরোপে পৌঁছায় ততদিনে এটি হারিয়ে যেতে শুরু করেছিল।

১৬ টি ধাপে মসলিন প্রস্তুতের প্রক্রিয়া:

বিশ শতকের শুরুতে, ঢাকার মসলিন বিশ্বের প্রতিটি কোণ থেকে একপ্রকার প্রায় অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। যেটুকু কাপড় বেঁচে ছিল তা মানুষের ব্যক্তিগত সংগ্রহ হিসেবে থেকে গিয়েছিল এবং কিছু সংগ্রহশালায় রেখে দেওয়া হয়েছিল।

এর সূক্ষ্ম কার্যকারিতাকে ভুলে যাওয়া হয়েছে এবং গোসিপিয়াম আরবেরিয়াম (বোটানিকাল নাম) বা ‘ফুটি কার্পাস’ এই স্থানীয় নামের কার্পাস তুলো থেকে তৈরি সুতোও হঠাৎ বিলুপ্ত হয়ে যায়। এটিই একমাত্র তুলো ছিল, যার থেকে সুতো তৈরি করে এই মসলিন কাপড় তৈরি করা হত।

ঢাকার মসলিনের জন্য ব্যবহৃত সুতো যে কার্পাস তুলো থেকে তৈরি করা হত, সেই কার্পাস তুলোর গাছগুলি মেঘনা নদীর (বাংলাদেশ) তীরে চাষ করা হত। গাছগুলিতে বছরে দুবার ড্যাফোডিলের মতো হলুদ ফুল ফুটতো। এই ফুল থেকে সাদা হালকা তুলো বের হত। এটি কোনো সাধারণ সুতো ছিল না।

দক্ষিণ আমেরিকায়, অনেকটা এই রকম প্রজাতির গোসিপিয়াম হিরসটমের (আজ বিশ্বের ৯০ শতাংশ সুতির কাপড় তৈরি করা হয়) থেকে তৈরি সুতোর তুলনায় ফুটি কার্পাস থেকে তৈরি হওয়া সুতো কিছুটা গাঁট যুক্ত এবং দুর্বল হত। মেশিনগুলি দ্বারা তৈরি সস্তা পোশাকের জন্য এই সুতো উপযুক্ত ছিল না। এই সুতোগুলি দিয়ে মেশিনের সাহায্যে কাপড় বানানোর সময় সুতো গুলি সহজেই ছিঁড়ে যেত।

প্রকৃতপক্ষে, স্থানীয় মানুষরা হাজার বছর ধরে বিকশিত সাধারণ কৌশলগুলির মাধ্যমে সুতো তৈরির এই কঠিন কাজকে নিজেদের আয়ত্তে করে নিয়েছিলেন। ঢাকার মসলিন ১৬ টি ধাপ পেরিয়ে তৈরি হত। এই প্রক্রিয়াটি এতটাই বিশেষ ছিল যে এর প্রতিটি পদক্ষেপ কেবল ঢাকার আশেপাশের গ্রামবাসী দ্বারা সম্পন্ন করা হত।

এটি একটি সম্প্রদায়ভুক্ত কাজ ছিল, যার মধ্যে যুবক ও বৃদ্ধ, মহিলা এবং পুরুষ সকলেই যুক্ত থাকত। প্রথমে ছোট তুলোর বলকে বোয়াল মাছের দাঁতের চিরুনি দিয়ে পরিষ্কার করা হত। এর পর সুতো তৈরির কাজ করা হত।

ঢাকার মসলিন ১৬ টি ধাপ পেরিয়ে তৈরি হত।

সুতোটি প্রস্তুত করার জন্য প্রচুর আর্দ্রতার প্রয়োজন ছিল যাতে এটি প্রসারিত করা যায়। এই কারণেই নৌকায় এই কাজটি করা হত। এই কাজটি খুব সকালে বা পড়ন্ত বিকেলে করা হত, যখন সর্বাধিক আর্দ্রতা থাকত। প্রবীণ ব্যক্তিরা সুতো কাটতেন না কারণ তাদের দৃষ্টি শক্তি কমে যাওয়ায় কারণে তারা সূক্ষ্ম সুতো সঠিকভাবে দেখতে পেতেন না।

২০১২ সালে, মসলিন সম্পর্কিত একটি বইয়ের লেখিকা ও ডিজাইন ইতিহাসবিদ সোনিয়া আশমোর বলেছেন, সুতির সুতোর মাঝখানে মাঝখানে সূক্ষ্ম গিঁট থাকত, যা পুরো সুতোটিকে একসাথে জুড়ে রাখত। যার ফলে সুতোর পৃষ্ঠতলে একটা খসখসে ভাব থাকত, যা খুব সুন্দর স্পর্শানুভূতি দিত।

এশিয়ার চমৎকার ছিল এই মসলিন:

ঢাকার মসলিন এতই অসাধারণ ছিল যে এই এলাকায় আসা লোকেরা বিশ্বাস করতে পারতেন না যে এটা মানুষ নিজের হাত দিয়ে তৈরি করেছেন। কিছু লোক তো এও বিশ্বাস করত যে এটি জল পরীরা, পরীরা বা ভূতেরা তৈরি করে।

বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ক্রাফ্ট কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট রুবি গজনভী জানান, মসলিন এত হালকা এবং নরম যে এর তুলনাই হয় না। আজ এই কাপড় আর কোথাও দেখা যায় না।

২০১৩ সালে, ইউনেস্কো জামদানি তাঁতকে একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে সুরক্ষিত করেছিল।

একটি ফটো এজেন্সি চালান এবং ‘রিসরেক্ট দ্য ফ্যাব্রিক’ প্রজেক্টের লিডার সইফুল ইসলাম বলেছেন, “আজকাল যে মসলিন আসছে তার থ্রেড কাউন্ট ৪০ থেকে ৮০ এর মধ্যে হয়। যেখানে ঢাকার মসলিনের থ্রেড কাউন্ট ৮০০ থেকে ১২০০ এর মধ্যে হয়। এর গুণমান জানার জন্য এই উদাহরণটাই যথেষ্ট।” এই অনন্য মসলিন এখন থেকে এক শতাব্দী পূর্বে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

মসলিন শিল্প কীভাবে নষ্ট হয়েছিল?

আশমোর বলেছেন, মোঘল আমল মসলিনের জন্য সবচেয়ে ভালো সময় ছিল। মোগল সম্রাট এবং তাদের রানিরা মসলিনকে সুরক্ষিত রেখে ছিলেন। সেই দিনগুলিতে পারস্য (বর্তমানে ইরান), ইরাক, তুরস্ক এবং মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলিতে মসলিনের ব্যবসা করা হতো।

ঢাকার মসলিন এত স্বচ্ছ ছিল যে বহু ভাঁজ হওয়া সত্ত্বেও, শরীরের অঙ্গ এই কাপড়ের মধ্যে থেকে দেখা যেত।

ঢাকার মসলিন এত স্বচ্ছ ছিল যে বহু ভাঁজ হওয়া সত্ত্বেও, শরীরের অঙ্গ এই কাপড়ের মধ্যে থেকে দেখা যেত।

জনশ্রুতি আছে, একবার আওরঙ্গজেব তাঁর মেয়েকে মসলিন পরে দরবারে আসার জন্য তিরস্কার করেছিলেন। যদিও তিনি সাত বার ভাঁজ করা মসলিনের পোশাক পরেছিলেন।

যে দিনগুলিতে লন্ডনের লোকেরা মসলিনের পোশাক পরে গর্ব অনুভব করতেন, সেই সময়ে মসলিনের কারিগররা ঋণের ভারে ডুবে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছিলেন।

‘Goods from the East, 1600-1800’ নামের একটি বইতে বলা হয়েছে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৮ তম শতাব্দীর শেষদিকে মসলিন তৈরির সূক্ষ্ম প্রক্রিয়ায় নাক গলানো শুরু করে।

প্রথমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মসলিনের স্থানীয় ক্রেতাদের সরিয়ে নিজেরাই এটি কেনা শুরু করে। আশমোর বলেছেন, তাঁরা উৎপাদনের উপরে নিজেদের জোড় শক্ত করেছিল এবং তারপর পুরো ব্যবসা দখল করে নেয়। এরপর তারা তাঁতিদের কম খরচে আরও বেশি কাপড় তৈরি করতে বলা শুরু করে।

ইসলাম বলে, “তবে এটি কঠিন ছিল, কারণ ফুটি কার্পাস তুলো থেকে সুতো বানিয়ে কাপড় তৈরি করার জন্য একটি নির্দিষ্ট দক্ষতার প্রয়োজন হতো। এটি খুব শ্রমনির্ভর এবং ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া এবং কখনো কখনো একটি পুরো দিনের কাজের শেষে মাত্র আট গ্রাম কাপড় উৎপাদিত হতো।”

“অনেক সময় কারিগরদের অগ্রিম টাকা দেওয়া হতো কোনো নির্দিষ্ট মানের কাপড় বুনতে, তবে কাপড়টি সেই মানের না হলে টাকা ফেরত দিয়ে দিতে হতো। তড়িঘড়ি করে কাজ করার ফলে ভালো মানের কাজ হতো না, তার উপর আরও বেশি করে কাপড় উৎপাদন করার জন্যও চাপ দেওয়া হতো।”

পরবর্তীকালে ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা মেশিন দিয়ে এটি বৃহৎ আকারে উৎপাদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যাতে সর্বোচ্চ লাভ পাওয়া যায়। তবে সাধারণ কার্পাস থেকে তৈরি মসলিন, হাতে বোনা ঢাকার মসলিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারছিল না।

হাতে বোনা ঢাকার মসলিন।

এভাবে কয়েক দশক ধরে এই শিল্পের অপব্যবহার এবং আমদানি করা কাপড়ের চাহিদা কমার কারণে ঢাকার মসলিন শিল্পের অবসান ঘটে। পরবর্তীকালে, এই অঞ্চলে যুদ্ধ, দারিদ্র্য এবং ভূমিকম্পের কারণে, বেঁচে থাকা তাঁতিরাও নিম্নমানের কাপড় তৈরি করতে শুরু করেছিলেন এবং কিছু তাঁতি মসলিন কাপড় তৈরি করার কাজ ছেড়ে শুরু করেছিলেন কৃষিকাজ করা। শেষ পর্যন্ত মসলিন শিল্পের একেবারে অবসান ঘটে।

ঢাকার মসলিন পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা:

বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া ইসলাম ২০ বছর আগে লন্ডন চলে গিয়েছিলেন। ২০১৩ সালে, তিনি ঢাকার মসলিন সম্পর্কে জানতে পারেন। তবে ঢাকার মসলিন পুনরুদ্ধারের সবচেয়ে বড় বাধা ছিল ফুটি কার্পাস গাছের বিলুপ্তি।

ইসলাম কিউ রয়েল বোটানিকাল গার্ডেনে একটি পুস্তিকা খুঁজে বের করেন, যার মধ্যে ফুটি কার্পাসের পাতা শুকিয়ে রাখা হয়েছিল। এখান থেকে তিনি এর ডিএনএ সিকোয়েন্সিং করেন। ইসলাম বাংলাদেশে ফিরে এসে মেঘনা নদীর পুরোনো মানচিত্র অধ্যয়ন করে গত দুশো বছরে কীভাবে এর স্রোত পরিবর্তন হয়েছে তার সন্ধান করেন। তারপর একটি নৌকা নিয়ে নদীর তীরের কমপক্ষে বারো কিলোমিটার প্রস্থে সমস্ত বন্য গাছপালা অনুসন্ধান করেন। বিশেষত সেই গাছপালা যা পুস্তিকার চিত্রের সঙ্গে সাদৃশ্যযুক্ত ছিল।

শেষ পর্যন্ত তিনি ফুটি কার্পাসের মতন ৭০ শতাংশ অনুরূপ চারা পেয়েছিলেন। এটি ফুটি কার্পাসের পূর্ব প্রজাতির ভেবে ইসলাম এবং তাঁর দল ফুটি কার্পাসের চাষ করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সফল হননি।

অবশেষে, তিনি ভারতীয় তাঁতিদের সঙ্গে দেখা করে সাধারণ কার্পাস এবং ফুটি কার্পাসকে মিশিয়ে হাইব্রিড সুতো প্রস্তুত করে সফলতা অর্জন করেন।

এখনও অবধি, তাঁর দল এই হাইব্রিড মসলিন দিয়ে অনেক শাড়ি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

এই শাড়িগুলি বিশ্বজুড়ে প্রদর্শিত হয়েছিল। কিছু শাড়ি বিক্রি হয়েছিল কয়েক হাজার পাউন্ডে। ইসলাম যেভাবে এই নতুন মসলিনকে স্বাগত জানাতে দেখলেন, তাতে এই কাপড়ের সফল ভবিষ্যৎ দেখতে শুরু করেছেন তিনি।

কে জানে যে শীঘ্রই এক নতুন প্রজন্ম এই কাপড়টি বুনতে পছন্দ করবে এবং এই সুন্দর কাপড় তার পুরোনো গৌরব ফিরে পেতে সক্ষম হবে।

আরও পড়ুন

দেব আনন্দ-সুরাইয়ার প্রেম কেন পূর্ণতা পায়নি,কী ছিল কারণ ?

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Stay Connected

3,541FansLike
3,210FollowersFollow
2,141FollowersFollow
2,034SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles