দীপঙ্কর সাহা
(আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ)
ভারতের অর্থনীতিতে চিনের নির্ভরতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিক প্রবণতায় দেখা যাচ্ছে যে, চিন থেকে আমদানির ওপর ভারতের নির্ভরতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চিন ভারতের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে চিন এই স্থান অধিকার করেছে। এই প্রবণতা ভারত, চিন বাণিজ্যিক সম্পর্কের গভীতরা প্রকাশ করে না বরং এটি ভারতের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরনির্ভরশীলতা ও ভারতের স্বনির্ভরতার উপর একটি সুদূরপ্রসারী প্রশ্ন রেখে যায়।
২০২০ সালের পর থেকে চিন থেকে ভারতের আমদানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যার হার প্রায় ৫৬%। এই বৃদ্ধির প্রধান কারণ হচ্ছে বিভিন্ন খাতে চিনা পণ্যের অতিমাত্রায় চাহিদা এবং চিনা পন্যের স্বল্প মূল্য। প্রযুক্তি, ইলেকট্রনিক্স, রাসায়নিক দ্রব্য, এবং ভোগ্যপণ্যের মতো খাতে চীনা পণ্যের উপর ভারতের নির্ভরতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
চীনা আমদানির এই দ্রুত বৃদ্ধির ফলে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতিও ক্রমশ বাড়ছে। চিনের সাথে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি ৭৫% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ভারতের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাণিজ্য ঘাটতির এই বৃদ্ধি ভারতের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের উপর চাপ সৃষ্টি করছে এবং দেশের মুদ্রার মানের ওপর প্রভাব ফেলছে।
এই ঘাটতির ফলে স্থানীয় উৎপাদন শিল্পেও প্রভাব পড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে, ভারতীয় নির্মাতারা চিনা পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছেন না, যার ফলে স্থানীয় উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাচ্ছে।
চিনা পণ্যের স্বল্প মূল্য ভারতের বাজারে তাদের চাহিদা বাড়ানোর অন্যতম প্রধান কারণ। চিনের বৃহৎ উৎপাদন ক্ষমতা এবং নিম্ন উৎপাদন খরচের কারণে তারা বিভিন্ন পণ্য সস্তায় সরবরাহ করতে সক্ষম। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় ভোক্তারা চিনা পণ্য ক্রয়ে আকৃষ্ট হচ্ছেন, যা চিনা আমদানির পরিমাণ বাড়াচ্ছে। চিনা আমদানির ওপর ভারতের ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা একটি জটিল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি করছে। একদিকে, এটি ভারতের ভোক্তাদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের পণ্য সরবরাহ করছে, অন্যদিকে, এটি দেশের স্বনির্ভরতা এবং উৎপাদন সক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ভারতের নীতিনির্ধারকদের উচিত একটি সুষম বাণিজ্য নীতি গ্রহণ করা, যা একদিকে চিন থেকে পণ্যের আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাবে এবং অন্যদিকে স্থানীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করবে।
Read more INDIAN ARMY: সফল DRDO-র অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইলের পরীক্ষা।