গৌরব গুপ্ত: ভারতের সবথেকে জনবহুল শহরগুলির মধ্যে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে কলকাতার। জনসংখ্যার বাড়তি ভিড়ের সাথে সাথে বাড়তে থাকে দুর্ঘটনার প্রবনতা। এবার দুর্ঘটনার পায়ে লাগাম দিতে কলকাতা পুলিশ নিয়েছে এক অভিনব পদক্ষেপ। শহরের জেব্রা ক্রসিং এ লাগানো হল ‘সিগন্যাল অন সারফেস’ নামক বিশেষ এক ধরনের আলো, এই সিগন্যালে রয়েছে এলইডি স্ট্রিপ।
আমাদের রাজ্যের রাজধানী শহর কলকাতা। ভারতের ইতিহাসে এ শহরের অবদান অনেক, একসময় ইংরেজদের ট্রেডিং হাব ছিলো এই শহর। আজ সারা ভারতের সবথেকে জনবহুল শহরগুলির মধ্যে অন্যতম এটি, জনসংখ্যার সাথে বাড়ন্ত যানজট একটা বড়ো মাথা বেথ্যার কারণ। যানজটের ফলে তৈরী হচ্ছে দূর্ঘটনার প্রবণতা। প্রশাসন ইতিমধ্যেই সেফ ড্রাইভ-সেভ লাইফ এর মত একাধিক অভিযান চালিয়েছে দুর্ঘটনা কমাতে, এতে দূর্ঘটনার হার কিছুটা কমলেও একেবারে শেষ হয়ে যায় নি, আর এই সংখাটিও নেহাত কম নয়।
কলকাতার রাস্তায় প্রায় সব গুরুত্বপূর্ন জায়গা গুলিতেই ট্রাফিক সিগন্যাল রয়েছে, রয়েছে জেব্রা ক্রসিং, তা সত্বেও পথ চলতি মানুষ তার পরোয়া করে না। কোনও ক্ষেত্রে দু চাকা বাইক বা চার চাকা গাড়িও সিগন্যাল অমান্য করে থাকে, আর এতেই ঘটে দুর্ঘটনা। প্রশাসনিক অভিযানের ফলে কোলকাতায় বিগত ৪-৫ বছরের তুলনায় এবছর দূর্ঘটনার হার অনেক কম, কিন্তু এতেই সন্তুষ্ট নয় প্রশাসন। তাই সচেতনতা বাড়াতে ও দুর্ঘটনা কমাতে এবার হাজির নয়া প্রযুক্তি।
কলকাতার রাস্তায় বসানো এই ‘সিগন্যাল অন সারফেস’ লাইট রাস্তার ওপরেই দেখিয়ে দেবে সিগনালের লাল, হলুদ ও সবুজ রঙ। এখন ট্রাফিক সিগন্যাল এ চোখ না গেলেও অসুবিধা নেই, একদম পিচ রাস্তার ওপরই বসানো হয়েছে এই বিশেষ লাইট। এতে শুধু গাড়ি বা বাইক চালকরা নয়, উপকৃত হবে পথচলতি মানুষরাও। রাস্তা থেকেই ব্লিঙ্ক করবে সিগনাল। লাল বা সবুজ রঙের ইঙ্গিতই বুঝিয়ে দেবে পথচারীদের কখন রাস্তা পার করতে হবে আর কখন থামতে হবে।
পরীক্ষামূলকভাবে কিছু দিন আগেই ডালহৌসির হেয়ার স্ট্রিট, কাউন্সিল হাউস স্ট্রিট, পার্কস্ট্রিট ও জওহরলাল নেহেরু রোড ক্রসিং-এ এই আলো লাগানো হয়েছে। এবং আগামী কিছুদিনের মধ্যেই কলকাতার ট্রাফিক পুলিশ পরীক্ষামূলক ভাবে রাসেল স্ট্রিট, রবীন্দ্র সদন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় এই বিশেষ আলো লাগাবে।
আধুনিক এই আলো কতটা উপযোগী ও টেকসই সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে। এই প্রশ্নে ডিসি (ট্রাফিক) জানিয়েছেন, বিগত চার মাস ধরে এই লাইট পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে একাধিক ভারী বাস, ট্রাক এর উপর দিয়ে গিয়েছে, লাইটের কোনও ক্ষতি হয় নি। অর্থাৎ এই বিশেষ লাইট ভারী যানবাহনের ওজন নিতে সক্ষম। প্রশ্ন করা হয় বর্ষাকালে কোলকাতার অন্য চিত্র ফুটে ওঠে, প্রচণ্ড বৃষ্টি তো বটেই সঙ্গে রাস্তায় জমা জলের সঙ্গে কি মোকাবিলা করতে পারবে এই আলো? এর উত্তরে ডি সি বলেন, সিল্যান্ট দিয়ে আলো সিল করা হয়েছে ফলে জল ঢোকার কোনো সম্ভাবনা নেই। এছাড়া এই আলোর জন্য ১২ ভোল্টের বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয়েছে তাই বিদ্যুৎ লিক হওয়ারও ভয়ও নেই। ডিসি এও জানিয়েছেন সামনের ক্রিসমাসে পার্কস্ট্রিটে মানুষের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে দুটি সিগনালেই এই লাইট ব্যবহার করা হবে। সফলতা পেলে শহরের সব গুরুত্বপূর্ন জায়গা গুলিতেই লাগানো হবে এই ‘সিগন্যাল অন সারফেস’।