পৃথিবীতে হয়তো এমন কোনও মানুষ নেই যার কোনও দিন মাথা যন্ত্রণার সমস্যা হয়নি। তবে তাদের মধ্যে অনেক জন রয়েছে যাদের হঠাৎ করে মাথা যন্ত্রণা শুরু হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিভিন্ন কারণে মাথার যন্ত্রণা (Headache) হতে পারে। অস্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল থেকে চিন্তা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পরিমাণে জল না খাওয়া, অবসাদ ও ক্লান্তির মতো আরও অনেক কারণ রয়েছে মাথার যন্ত্রণা সমস্যা হওয়ার। তবে হঠাৎ করে মাথা যন্ত্রণা শুরু হলে অনেক মানুষকেই বলতে শোনা যায় যে তার মাইগ্রেনের (Migraine) সমস্যা থাকার কারণে এমন হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মাইগ্রেনের সমস্যা এবং সাধারণ মাথার যন্ত্রণা (Migraine vs Headache) মধ্যে কী পার্থক্য রয়েছে তা বহু মানুষেরই সঠিকভাবে জানা নেই। সঠিকভাবে জানা নেই বলে চিকিৎসাও (Treatment) সঠিকভাবে হয় না তাদের।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ মাথার যন্ত্রণা হওয়ার বেশ কিছু লক্ষণ ও কারণ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ অতিরিক্ত চিন্তার কারণে মাথার যন্ত্রণা হতে পারে। এই সময় দুশ্চিন্তা, অবসাদ, খিদে না পাওয়া, কম ঘুম হওয়া এই রকম অনেক সমস্যা হতে পারে। এছাড়া সাধারণ মাথা যন্ত্রণা হলে মাথার কোনও একটি দিকে অসহ্য যন্ত্রণা হওয়া, চোখের পিছনে ব্যথা করা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখ থেকে জল পড়া, অ্যালার্জি এবং হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। কখনও কখনও সাধারণ মাথা যন্ত্রণা হলে বমি হওয়া, চোখে ব্যথা করা, আলো এবং কোনও শব্দের কারণেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। মারাত্মক আকারে মাথার ব্যথা হলে ব্রেন টিউমর, স্ট্রোক, ঘুমের সমস্যা, মাথায় – ঘাড়ে – কাঁধে প্রবল ব্যথার লক্ষণও দেখা দেয় বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা।
অন্যদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি স্নায়বিক রোগ হল মাইগ্রেন। মাইগ্রেনের সমস্যা যাদের রয়েছে তাদের প্রতি মাসে কয়েকবার মাথা ব্যথা করতে পারে। এমনকি মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলে একজন ব্যক্তির মাসের ১৫ দিনেরও বেশি দিন মাথা ব্যথা হতে পারে। মাইগ্রেন পুরুষদের তুলনায় তিনগুণ বেশি হয় মহিলাদের। মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলে সেই ব্যক্তি মাথার একপাশে জোড়ালো বা মাঝারি যন্ত্রণা অনুভব করবে। এই মাথা ব্যথা স্থায়ী হতে পারে ৪-৭২ ঘন্টা। এই সময় বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, মাথা ঘোরা, আলো ও কোনও শব্দ সহ্য করতে না পারার মতো সমস্যা দেখা দেয়। অ্যালকোহল, চকোলেট, পনির, বাদাম, প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে অথবা ঘুমের ব্যাঘাত, নির্দিষ্ট গন্ধ, উজ্জ্বল আলো, পিরিয়ড, মেনোপজ, মানসিক চাপ, ভ্রমণ এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হতে পারে।
মাইগ্রেনের চারটি পর্যায় রয়েছে। মাথা যন্ত্রণা শুরু হওয়ার কয়েক ঘন্টা আগে প্রড্রোম ফেজ (Prodrome Phase) নামক প্রথম পর্যায় শুরু হয়। এই সময় একজন ব্যক্তি হতাশাগ্রস্ত এবং খিটখিটে হয়ে পড়ে। তার বারবার হাঁচি হয় এবং খাওয়ার ইচ্ছে বেড়ে যায়। দ্বিতীয় পর্যায়টি হল অরা পর্ব (Aura Phase )। এই সময় একজন ব্যক্তি তার চোখের সামনে দেখতে পায় আলোর তির্যক রেখা। এছাড়া এই সময়ে শরীর অসাড় হয়ে গেছে এবং ঝাঁকুনি দিচ্ছে বলে মনে হয় সেই ব্যক্তির। তৃতীয় পর্যায়ে মাথা ব্যথা শুরু হয়, যা ৪-৭২ ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। চতুর্থ পর্যায় হল মাইগ্রেন হ্যাংআউট ফেজ (Hangout Phase)। এই সময় একজন ব্যক্তি সাধারণত খিটখিটে, অসুস্থ এবং বিভ্রান্ত বোধ করে থাকে। ছোট বাচ্চাদেরও মাইগ্রেনের সমস্যা হতে পারে। শিশুদের মাইগ্রেন হলে মাথাব্যথা হয় না, কিন্তু তাদের এই সময় পেটব্যথা এবং বমি হয়। খুব ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে, পেটব্যথা হতে পারে মাইগ্রেনের প্রথম লক্ষণ। শিশুর বাবা অথবা মা দুজনের মধ্যে একজনের যদি মাইগ্রেনের সমস্যা থাকে, তাহলে এই সমস্যা তাদের সন্তানের হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ এবং মাইগ্রেনের সমস্যা বাবা ও মা উভয়ের মধ্যে যদি থাকে, তাহলে তাদের সন্তানের এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা ৭৫ শতাংশ থাকে।
আরও পড়ুন