আমরা একবিংশ শতকে দাড়িয়ে পৃথিবীর এক অন্য রূপকে প্রত্যক্ষ করছি। কয়েকবছরে করোনার মতো মহামারী গোটা বিশ্বকে গ্রাস করেছিলো অনায়াসে। এই বিভীষিকা কাটিয়ে সবে আমরা আবার মাথা উচুঁ করে বাঁচতে শিখছি, তখনই আবার মাথাচারা দিচ্ছে নতুন আর এক মস্তিষ্ক ভক্ষক। এটি এক ধরনের অ্যামিবা। নাম নাইগ্লেরিয়া ফাওলেরি। সাধারণত এদের পছন্দের বাসস্থান মানব মস্তিষ্ক, সঙ্গে এটাই এদের খাদ্য। দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রথমবার এই অ্যামিবা আক্রান্ত রোগীর রিপোর্ট ফাইল হয়েছে। এই অ্যামিবার কোনো সঠীক চিকিৎসা নেই। তাই মৃত্যু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনিবার্য। নতুন অ্যামিবার প্রসার বিশ্বব্যাপী চিকিৎসকমহলে চিন্তা বাড়াচ্ছে।
‘নেগ্লেরিয়া ফাউলেরি’ নামটির সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত বা অপরিচিত। এটি একজাতীয় অ্যামিবা যা বিশ্ববাসীকে আরও এক মৃত্যু মন্বন্তর দেখাতে পারে।১৯৬২ সালে এই রোগটি প্রথম ডকুমেন্ট করা হয়েছিলো অস্ট্রেলিয়ার চেক স্লোভাকিয়ায়। তারপর আমেরিকা, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান সর্বত্র ছড়াতে থাকে। ২০১৮ সাল অব্দি মোট ৬০ বছরে এই রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৪৫০ জন। যার মধ্যে বেচেঁ ফিরেছেন মাত্র ৭ জন। এর কোনো সঠীক চিকিৎসা জানা নেই চিকিৎসকদের, তাই মৃত্যুর হার খুবই বেশি। ভারত, আমেরিকা, থাইল্যান্ড, সহ এখন দক্ষিণ কোরিয়াতেও প্রথমবার খোঁজ মিলল নাইগ্লেরিয়া ফাউলেরির সংক্রমণ।
দক্ষিণ কোরিয়ায় গত ২১ শে ডিসেম্বর নেগ্লেরিয়া ফাউলেরিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এক ব্যাক্তি। ৫০ বছর বয়সী মানুষটি থাইল্যান্ডে চার মাস সময় কাটিয়ে দেশে ফিরে আসেন ১০ই ডিসেম্বর, এবং তার ১১ দিনের মধ্যেই মারা যান। KDCI দক্ষিণ কোরিয়ার রোগ ও স্বাস্থ্যসচেতন সংস্থা জানিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় এই প্রথম নেগ্লেরিয়া ফাউলেরি আক্রান্তের প্রমাণ মিলেছে। তবে সংক্রমণ ঠেকাতে সাবধানতা অবলম্বনেরও নির্দেশ দিয়েছে তারা।
- এই অ্যামিবা কোথায় থাকে:
বিশেষত প্রাকৃতিক গরম জলের লেক, পরিষ্কার জলের লেক, এবং বিভিন্ন জলাশয়ে এই অ্যামিবা পাওয়া যায়। এই ধরনের জলাশয় গুলি এই জাতিয় অ্যামিবার প্রাথমিক অবস্থান।
- অ্যামিবা কিভাবে মানবদেহে প্রবেশ করে :
মানবদেহে নাকের মধ্যে দিয়ে এই অ্যামিবা মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়। সাধারনত বিভিন্ন জলাশয় গুলিতে যখন আমরা স্নান করতে বা সাঁতার কাটতে নামি তখনই অনেক সময় নাকের মধ্যে দিয়ে জল ঢুকে পরে শরীরে। এই জলের সাথে মিশে নাকের মধ্যে দিয়ে আমাদের শরীরে ঢোকে এই অ্যামিবা। একবার মানবদেহে ঢুকতে পারলে এরা সোজা পৌঁছায় আমাদের মস্তিষ্কে। মানব মস্তিষ্কই এখন এদের স্থায়ী বাসস্থান।
- লক্ষণ কী:
নাইগ্লেরিয়া একবার মানবদেহে প্রবেশ করলে মৃত্যু অব্দি এর থেকে নিস্তার পাওয়া প্রায় অসম্ভব। মানবদেহে অ্যামিবার সংক্রমনের পর থেকে মৃত্যু অব্দি বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেমন প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা, বমি, দিবাস্বপ্ন, প্রভৃতি। এছাড়া এই অ্যামিবা সংক্রমিত হলে এটি স্পাইনাল কর্ডকেও অচেতন করতে পারে।
- এই রোগ থেকে বাঁচার উপায়:
নেগ্লেরিয়া ফাউলেরির সংক্রমণ থেকে বাঁচতে গেলে বেশ কিছু সাবধানতা মানতে পারেন- নাক দিয়ে জল ঢোকা আটকাতে হবে, নাক দিয়ে জল ঢুকলে তা তৎক্ষনাৎ বের করে দিতে হবে। বিশেষ করে কোনো লেক জাতীয় জলাশয়ে স্নান করলে বা সাতার কাটলে নাক দিয়ে জল ঢোকা বন্ধ করতে পারলেই এই সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব।
তবে এই রোগের প্রতিকার নেই একথা বলা যাবে না। প্রাথমিক অ্যামেবিক মেনিনগোয়েনসেফালাইটিস বা প্যাম এর সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বিভিন্ন ওষুধ ব্যাবহার করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে অ্যামফোটেরিসিন B, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, ফ্লুকোনাজল, রিফাপিন, মিলতেফোসিন, দেক্সামেথাসন প্রভৃতি। এগুলি সঠিক সময়ে সময়ে রোগীকে দিলে সুস্থ হওয়ায় আশা থাকে।