Wednesday, April 24, 2024

দ্বাদশে ফেল, টেম্পো চালক থেকে আইপিএস মনোজ শর্মা হওয়ার গল্প প্রকাশ পেল বইয়ের মাধ্যমে

রূপম দত্ত

ইচ্ছা ও অদম‍্য জেদ থাকলে কোনও কাজই অসম্ভব নয়, প্রমাণ করলেন আইপিএস মনোজ শর্মা।

‘টুয়েলফত ফেল, হারা ওহি, জো লড়া নেহি’ শীর্ষক বইয়ে বন্ধু মনোজের জীবনযুদ্ধের কথা তুলে ধরলেন তাঁরই বন্ধু অনুরাগ পাঠক। কীভাবে এক দ্বাদশ ফেল ছেলের জীবনের মোড় ঘুড়ে গিয়েছিল একটি ঘটনায়, তারই বর্ণনা পাওয়া যায় এই বইয়ে।

সেই বই থেকে জানা যায়, পড়াশোনায় একদমই ভালোছিলেন না মনোজ। টুকলি করে কোনও রকমে নবম, দশম ও একাদশ শ্রেণি পাশ করেছিলেন। কিন্তু দ্বাদশ শ্রেণিতে এসে টুকলি করতে না পারায় ফেল করেছিলেন তিনি। যখন সবাই সব সম্পর্ক শেষ করে তাঁকে অন্ধকারে ছেড়ে চলে গিয়েছিল ঠিক তখনই মনোজের পাশে দাঁড়িয়ে সাহস জুগিয়েছিল তাঁর প্রেমিকা। মনোজ বলেন, “ভেবেছিলাম টুকলি করে কোনওরকমে দ্বাদশ উতরে যাব, আর টাইপিং শিখে কোথাও একটা কাজ জুটিয়ে নেব। কিন্তু সেটা আর হয়ে ওঠেনি”।

অবিভক্ত মধ‍্যপ্রদেশের মুরেনা জেলায় জন্ম মনোজের। অনুরাগবাবুর বই “টুয়েলফত ফেল, হারা ওহি জো লড়া নেহি” শীর্ষক বইটিতে মনোজের এই প্রেরণাদায়ক কাহিনী উঠে এসেছে। সেইবার মহকুমা শাসকের কড়া নির্দেশের কারণে পরীক্ষায় নকল করতে না দেওয়ায় মনোজের জীবন পুরোই বদলে যায়। তাঁর কথায়, “টুকলি করতে না পেরে ভেবেছিলাম, এমন কোন ক্ষমতাবান ব্যক্তি যাঁর নির্দেশে টুকলি বন্ধ করে দেওয়া হল ? সেই সময় থেকেই সিদ্ধান্ত নিই, কোনও কিছু যদি করতেই হয়, তা হলে মহকুমা শাসকের মতো ক্ষমতাবান ব্যক্তিই হব।”

দ্বাদশ শ্রেণিতে ফেল করার পর মনোজ দাদার সঙ্গে কাজে ঢোকেন। প্রথম কাজ টেম্পো চালানো দিয়ে শুরু।একদিন পুলিশ টেম্পো আটক করায় সোজা চলে গিয়েছিলেন মহকুমা শাসকের দফতরে। তাঁর মনে হয়েছিল মহকুমা শাসক নিশ্চয় তাঁকে সাহয‍্য করবেন টেম্পো ছাড়ানোতে। তিনি বলেন, “মহকুমাশাসকের কাছে যে কাজের জন্য গিয়েছিলাম, সেই কাজের কথা দূরে সরিয়ে রেখে মহকুমাশাসক হতে গেলে কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়, সেই কথা জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তাঁর কথা শোনার পর স্থির করেছিলাম আমাকে মহকুমাশাসকই হতে হবে।”

এরপর জামাকাপড় নিয়ে বাড়ি ছেড়ে গোয়ালিওর চলে এসেছিলেন মনোজ। অজানা শহর। অচেনা লোকজন।হাতে টাকাপয়সাও বেশি ছিল না। ছিল না মাথা গোঁজার জায়গা টুকুও। দিন কাটিয়েছেন ভিখারিদের সঙ্গে রাস্তায় শুয়ে। কোনও দিন খাওয়া জুটতো তো, কোনও দিন সেটাও জুটতো না।

এইভাবে তাঁকে বেশিদিন কাটাতে হয়নি। মনের মধ‍্যে প্রবল কষ্ট করার ক্ষমতা, সাহস ও কিছু করে দেখানোর ইচ্ছা থাকলে ভাগ‍্যদেবীও তার সাথ দেন। মনোজের সঙ্গেই তাই ঘটলো। ভাগ‍্যদেবী প্রসন্ন হলেন। কয়েকদিনের মধ‍্যেই লাইব্রেরিয়ান হিসাবে কাজে যোগ দিলেন। পিওনের কাজ ও করতেন পাশাপাশি। মনোজ বলেন, “তাঁর জীবনে দু’জনের বই খুব প্রভাব ফেলেছিল। এক জন হলেন ম্যাক্সিম গোর্কি ও অন্য জন আব্রাহম লিঙ্কন। আর এই দু’জনের ভাবধারাই আমার জীবন বদলে দিতে সাহায্য করেছিল।” এরপর সোজা চলে আসেন দিল্লি। বিত্তশালী কয়েকটি পরিবারের বাড়িতে পোষ‍্য কুকুরের দেখাশোনা করতেন মাসিক ৪০০ টাকার বিনিময়ে। সেই টাকা দিয়েই মনোজ শুরু করেলেন পড়াশোনা। কলেজ উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুলিশের পরীক্ষায় বসেন প্রিলিমিনারি পাশ করেন কিন্তু চূড়ান্ত পরীক্ষায় ব‍্যর্থ হন। মনোজ বলেন, “প্রেমিকাকে বলেছিলাম, তুমি যদি আমার সঙ্গ দাও, তা হলে দুনিয়া বদলে দেব।” না, প্রেমিকা মুখ ফেরাননি। বরং সাহস জুগিয়েছেন। আর সেই সাহসে ভর করে চতুর্থ বারের চেষ্টায় আইপিএস পরীক্ষায় পাশ করেন মনোজ। ২০০৫ সালে মহারাষ্ট্র ক্যাডারের আইপিএস হন মনোজ। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হিসাবে মহারাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে নিযুক্ত হন।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Stay Connected

3,541FansLike
3,210FollowersFollow
2,141FollowersFollow
2,034SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles