R D Burman Birth Anniversary: রাহুল দেব বর্মণ (Rahul Dev Burman) অর্থাৎ আর ডি বর্মণ (R. D. Burman) ভারতীয় সিনেমার জগতে সুরের জাদুকর ছিলেন তিনি। আর ডি বর্মণকে সকলে ভালোবেসে পঞ্চম দা বলে ডাকতেন। ৬০ থেকে ৮০ এর দশক পর্যন্ত অনেক সুপারহিট গান উপহার দিয়েছিলেন আর ডি বর্মণ। তাঁর জন্ম হয়েছিল ১৯৩৯ সালের ২৭ জুন। তিনি তাঁর সঙ্গীতের মাধ্যমে শুধু দেশ নয়, গোটা বিশ্বে ভারতীয় সিনেমার সঙ্গীতকে এক আলাদা পরিচয় দিয়েছিলেন। পঞ্চম দা (Pancham Da), যিনি হিন্দি সিনেমাতে টানা তিন দশক ধরে রাজত্ব করেছিলেন, তিনি তাঁর সুরের জাদুতে ৩৩১টি সিনেমাকে সঙ্গীতমুখর করে তুলেছিলেন। পঞ্চম তাঁর সঙ্গীত পরিচালনার জন্য যেমন বিখ্যাত ছিলেন তেমনি তাঁর কণ্ঠের জন্যও বিখ্যাত ছিলেন।তাঁর জন্ম হয়েছিল ব্রিটিশ শাসিত ক্যালকাটায় (Calcutta), (বর্তমানে কলকাতা, Kolkata)। তবে তাঁর আদিবাস ছিল বর্তমান ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে৷ তিনি ছিলেন ত্রিপুরার চন্দ্রবংশীয় মানিক্য রাজপরিবারের সন্তান। তাঁর বাবা শচীন দেববর্মণ (Sachin Dev Burman) হিন্দি সিনেমার অন্যতম প্রধান সুরকার এবং তাঁর মা মীরা দেববর্মণ (Meera Dev Burman) একজন গীতিকার ছিলেন। তাঁর দাদু নবদ্বীপচন্দ্র দেববর্মন (Nabadwipchandra Dev Burman) ত্রিপুরার রাজপুত্র ছিলেন এবং তাঁর ঠাকুরমা ছিলেন মণিপুরের রাজকন্যা নির্মলা দেবী।
রাহুল দেব বর্মণ বাংলা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেছিলেন। নয় বছর বয়সে তিনি তাঁর প্রথম গান ‘এ মেরি টোপি পলট কে আ’ (Ae Meri Topi Palat Ke Aa) কম্পোজ করেছিলেন। এই গানটি তাঁর বাবা শচীন দেব বর্মণ ১৯৫৬ সালে ‘ফান্টুশ’ (Funtoosh) ছবিতে ব্যবহার করেছিলেন। বলা হয় যে ‘সর যো তেরা চকরায়ে ইয়া দিল ডুবা জায়ে’ (Sar Jo Tera Chakraye Ya Dil Dooba Jaye) গানের সুরটি রাহুল দেব শৈশবেই তৈরি করেছিলেন, যা তাঁর বাবা ১৯৫৭ সালে গুরু দত্তের ‘প্যাসা’ (PYASA) ছবিতে ব্যবহার করেছিলেন। সিনেমার জগতে প্রবেশ করার আগে পঞ্চম দা অর্কেস্ট্রাতে হারমোনিয়াম বাজাতেন। তবে মুম্বইয়ে আসার পর তিনি বিখ্যাত সরোদ বাদক ওস্তাদ আলী আকবর খান এবং পন্ডিত সমতা প্রসাদের কাছ থেকে তবলা বাজানো শিখেছিলেন।
আরডি বর্মণ সঙ্গীত পরিচালক সলিল চৌধুরীকেও নিজের গুরু মানতেন। আর ডি বর্মণ ১৯৫৯ সালে নিরঞ্জন পরিচালিত ‘রাজ’ (Raaz) সিনেমায় সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে প্রথম সুযোগ পান, তবে কোনো কারণবশত সিনেমাটি শেষ করা যায়নি। ছবিটি বন্ধ হওয়ার আগে তিনি গীতা দত্ত (Geeta Dutt) ও আশা ভোঁসলের (Asha Bhosle) কণ্ঠে দুটি গানে সুর দিয়েছিলেন। বিখ্যাত কমেডিয়ান অভিনেতা মেহমুদ (Mehmood) ১৯৬১ সালে ‘ছোটে নবাব’ (Chhote Nawab) ছবিতে সুরকার হিসাবে এসডি বর্মণকে নিতে চেয়েছিলেন তবে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তখন মেহমুদের নজর পড়ে এসডি বর্মণের পাশে বসে থাকা রাহুলের উপর। তিনি তখন তবলা বাজাচ্ছিলেন। মেহমুদের তাঁর তবলা বাজানো পছন্দ হওয়ায় তিনি রাহুল দেব বর্মণকে ছবির সুরকার হিসাবে সাইন করিয়েছিলেন। ১৯৬৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মেহমুদের ‘ভূত বাংলা’ (Bhoot Bungla) ছবিতে পঞ্চম দা অভিনয়ও করেছিলেন।
আর ডি বর্মণের নাম রাহুল দেব থেকে পঞ্চম হওয়ার পেছনে অনেক গল্প রয়েছে। পঞ্চম নামের আগে তাঁর আরেক নাম ‘তুবলু’ ছিল। সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহের কারণে তিনি এই নামটি তাঁর দিদার কাছ থেকে পেয়েছিলেন। পঞ্চম নামের পেছনের গল্পটি হল, তিনি ছোটবেলায় যখন কাঁদতেন, তখন সেটি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পঞ্চম স্বর, ‘পা’-এর মতো শোনা যেত। আর ডি বর্মণ হিন্দি সিনেমাতে প্রায় প্রতিটি বিখ্যাত পরিচালক, প্রযোজক এবং অভিনেতার সঙ্গে কাজ করেছিলেন এবং হিন্দি সিনেমাকে বড় বড় হিট ছবি দেওয়ার ক্ষেত্রে পঞ্চম দা-র সুর সহায়কের ভূমিকা পালন করেছিল। তবে, হিন্দি সিনেমাতে সুপারস্টার রাজেশ খান্নার অভিনয়, কিশোর কুমারের কণ্ঠ এবং পঞ্চম দা-র সঙ্গীত আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এই তিন জন জুটি বেঁধে প্রায় ৩২ টি ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছিলেন।
১৯৮৮ সালে, আর ডি বর্মন হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং বাইপাস সার্জারির জন্য লন্ডনের প্রিন্সেস গ্রেস হাসপাতালে (The Princess Grace Hospital) ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। হাসপাতালে থাকা সত্ত্বেও পঞ্চম দা বিছানায় শুয়েও অনেক সুর তৈরি করেছিলেন। ১৯৮৯ সালে তিনি হাসপাতাল থেকে বিধু বিনোদ চোপড়ার (Vidhu Vinod Chopra) সিনেমা ‘পরিন্দা’ (Parinda)-র গান তৈরি করেছিলেন। পঞ্চম দা, যিনি শোলে (Sholay), ইয়াদো কি বারাত (Yaadon Ki Baaraat), মিলি (Mili), সনম তেরি কসম (Sanam Teri Kasam), মাসুম (Masoom), কারাভান (Caravan), খেল খেল মে ,(Khel Khel Mein) এবং বুড্ডা মিল গায়ার (Buddha Mil Gaya) মতো সুপারহিট হিন্দি সিনেমার জন্য সুর দিয়েছেন, ১৯৯৪ সালের ৪ জানুয়ারি মুম্বাইয়ে প্রয়াত হন তিনি।