রিপোর্ট অনুযায়ী, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যৌথভাবে সীমান্ত এলাকায় একটি বাঁধ উদ্বোধনের পর তেহরানে ফিরছিলেন রাইসি এবং আমিরাবদোল্লাহিয়ান। জানা গিয়েছে, উড়ান শুরুর ৩০ মিনিট বাদে ঘন মেঘের মাঝে হারিয়ে গিয়েছিল রাইসির কপ্টারটি। কপ্টারটি ওড়ার আধ ঘণ্টা পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর একটি পাহাড়ের মাথায় কপ্টারের ভগ্নাবশেষ মেলে।প্রেসিডেন্টের সেই কনভয়তে মোট তিনটি হেলিকপ্টার ছিল। এর মধ্যে বাকি দুটি হেলিকপ্টার অবশ্য সুরক্ষিত ছিল। সেই দুর্ঘটনার পরই উদ্ধারকারী দল পার্বত্য এলাকায় তল্লাশি শুরু করে। খারাপ আবহাওয়া ও তুষারপাতের কারণে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছতে সময় লাগে উদ্ধারকারী দলের। পরে উদ্ধারকাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় রাশিয়া। বিশেষ প্রশিক্ষিত উদ্ধারকারী দল সহ হেলিকপ্টার পাঠিয়েছিল মস্কো। পরে ইরানের রেড ক্রেসান্টের প্রধান জানান, ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টারের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। উদ্ধারকারী দল সেই দিকে এগোচ্ছে। কিন্তু অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। পরে ইরানের সংবাদমাধ্যম জানায়, ভেঙে পড়া হেলিকপ্টারে কারও বেঁচে থাকার চিহ্ন পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, পাহাড়ে ভেঙে পড়ার পরে চপারটিতে আগুন ধরেছিল। জানা যায়,তুরস্কের ড্রোনের সাহায্যে পাহাড়ের মাঝে জ্বলন্ত কিছু লক্ষ্য করা গিয়েছিল। সেখানে গিয়েই সেই হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ চিহ্নিত করা যায়।ইরানের জাতীয় টিভি চ্যানেল জানায়, ”ইরানের পরিচারক আয়াতোল্লাহ ইব্রাহিম রইসি দেশের মানুষের সেবা করতে করতে শহিদ হয়েছেন।” চপার ভেঙে পড়াকে ‘দুর্ঘটনা’ বলেই জানিয়েছে সে দেশের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।
২০২১ সাল থেকে ইরানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইব্রাহিম রাইসি। তাঁর শাসনামলেই ইরানি-কুর্দি নারী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর দেশজুড়ে ব্যাপক নাগরিক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। মনে করা হচ্ছিল, ইরানের পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা হতে পারতেন রাইসি। এদিকে রাইসির মৃত্যু নিশ্চিত করার পরই ইরানের ক্যাবিনেট একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, ‘কোনও ধরনের বাধা ছাড়াই ইরান সরকার কাজ চালিয়ে যাবে। এই অনুগত জাতিকে আশ্বস্ত করতে চাই যে আয়াতোল্লাহ রাইসির অক্লান্ত চেতনায় সেবার পথে অব্যাহত ভাবে হাঁটতে থাকব আমরা।
রইসির মৃত্যুর পর প্রশ্ন উঠেছে, সেই আসনে বসবেন কে? ইরানের সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর পর অন্তর্বর্তিকালীন ভাবে ওই ভূমিকায় থাকার কথা ভাইস প্রেসিডেন্টের। ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মোখবর সাময়িক ভাবে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব সামলাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে তাঁকেও সাংবিধানিক প্রক্রিয়া মেনে কাজ করতে হবে। ইরানের সংবিধানে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্টের আচমকা মৃত্যু হলে ভাইস প্রেসিডেন্ট সাময়িক ভাবে ওই দায়িত্ব সামলাবেন। তিনি সরকারের তিন সদস্যের কাউন্সিলের এক জন সদস্য হিসাবেই ওই দায়িত্ব পাবেন। কাউন্সিলে ভাইস প্রেসিডেন্ট ছাড়াও রয়েছেন ইরানের পার্লামেন্টের স্পিকার এবং বিচার বিভাগের প্রধান। প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর ৫০ দিনের মধ্যে এই কাউন্সিল দেশে নতুন করে নির্বাচনের আয়োজন করবে। তার মাধ্যমেই স্থির হবে, ইরানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন।
এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জানিয়েছেন, ইরানের পাশে রয়েছেন তিনি। ভারত-ইরানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান সারা জীবন মনে রাখা হবে। রইসির কপ্টার যখন নিখোঁজ হয়েছিল, তখন উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন মোদী।
Read more How to Join NSG: কীভাবে যোগ দেবেন NSG-তে ? জানুন বিস্তারিত