রিমা মণ্ডল ও সুপর্ণা দাস, বং লাইফ অ্যান্ড মোর ডেস্কঃ ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে এই রাজ্যে তৃণমূল জোর ধাক্কা খেয়েছিল। উত্থান হয়েছিল বিজেপির। ২০১৯ সালে ২২ টি আসন জিতে তৃণমূল এবং বিজেপি ১৮ টি আসনে জয়ী হয়েছিল। এই ভোটে তৃণমূল প্রায় ২৯ টি আসন জিতেছে। বিজেপির গতবারের তুলনায় ভোটও অনেক কমেছে। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে মোট সাত দফায় ৪২ টি আসনে ভোটগ্রহণ করা হয়েছিল। নির্বাচন শুরুর দেড়মাস পর প্রকাশিত হয় ফলাফল। বেশিরভাগ বুথ ফেরত সমীক্ষায় বিজেপিকে এই রাজ্যের একক বৃহত্তম দল হিসেবে দেখানো হয়েছিল। কিন্তু ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা যায় রাজ্যে ৪২ টি আসনের মধ্যে মোট ২৯ টি আসনে জয় লাভ করেছে তৃণমূল। ১টিতে কংগ্রেস। বাকি ১২ টি আসনে জয় লাভ করেছে বিজেপি। কিন্তু কেন এই ফলাফল ? উত্থান হয়েও আবার পতন হতে হল ? বাংলা জয়ের স্বপ্ন বিজেপির কাছে অধরা রয়ে গেল ? নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার কয়েক দিন কেটে গিয়েছে। তাহলে এবার ঠাণ্ডা মাথায় আলোচনা করা যাক কী কী কারণে বিজেপিকে এই বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হল ? এই রাজ্যে তৃণমূল সরকার একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত হলেও কেন তার প্রভাব ভোট বাক্সে পড়েনি ?
এই নির্বাচনের ফলাফলের বিশ্লেষণের দুটি দিক আছে। একটি হল তৃণমূল কিভাবে আসন সংখ্যা বাড়াতে পারল আর অন্যটি হল বিজেপি কেন খারাপ ফলাফল করল । রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের জনকল্যাণমুখী প্রকল্পগুলি মহিলা, সংখ্যালঘু, ছাত্র, যুবদের পাশে টেনে এনেছিল আগেই। কয়েকবছর ধরে তৃণমূল কংগ্রেস প্রচার চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার বহু উন্নয়নমূলক প্রকল্পের অর্থ আটকিয়ে রেখেছে। এরফলে সাধারণ মানুষ কর্মসংস্থান প্রকল্পে কাজ করেও পারিশ্রমিক পাচ্ছে না। এই প্রকল্পগুলিকে সাধারণ মানুষের কাছে আরও বেশি করে প্রচার করার পাশাপাশি কেন্দ্রের মোদী সরকার কীভাবে বাংলার প্রাপ্য আটকে রেখে বঞ্চনা করছে, আবার তৃণমূল কংগ্রেস তাদের প্রচারে বলেছে বিজেপি সরকার যদি আসে তাহলে তারা বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পগুলি বন্ধ করে দেবে। বহু মানুষ এই তত্ব বিশ্বাস করেছে। এইসব প্রচার তৃণমূলকে নির্বাচনে সাফল্য এনে দিতে সহায়তা করেছে।
তৃণমূল জয়ের নেপথ্যে সবচেয়ে বড় অবদান হিসেবে দেখা হচ্ছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পকে। এই প্রকল্পে নারীরা মাসে ৫০০ টাকা পেত। নির্বাচনের আগে তা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়। দুই কোটির বেশি নারী এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে যখন রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের টলমল অবস্থা, সেই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আচমকা এই প্রকল্প শুরু করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। ভোটে জিতেই চালু হয়ে যায় লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। রাজনৈতিক মহলের বড় অংশ মনে করেন, তৃণমূলকে সরকারে ফেরাতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পই তুরূপের তাস। মমতা ব্যানার্জী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তাঁর রাজনৈতিক ভাবমূর্তি এবং লোকপ্রিয়তা তৃণমূলের জন্য একটি বড় সুবিধা ছিল।
লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বড় টার্গেট ছিল বিজেপির। কিন্তু বলার অপেক্ষা রাখে না যে সেই টার্গেট পূরণ হয়নি। প্রাথমিক ভাবে বাংলা থেকে ৩৫ আসনের লক্ষ্যের কথা জানিয়েছিল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তারপর সেটা কমে ৩০ হয়। আর রেজাল্ট বের হলে আদতে দাঁড়ায় ১২টি আসনে। যার কারণ বিজেপি পোলারাইজেশন করে বিরোধীদের ভোটগুলিকে একদিকে করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু NRC, CAA ইশুতে ‘বিজেপিকে মুসলিম বিরোধী’ হিসাবে প্রচার করতে সফল হয়েছে বিরোধীরা। মুসলিম ভোট এক তরফা ভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে পড়েছে। সেই ভোট পেয়েছে তৃণমূল।
২০১৯-র থেকে যা অনেকটাই কম। ফলাফল স্পষ্ট হওয়ার পর সাংবাদিক সম্মেলনে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বঙ্গ বিজেপির শীর্ষসারির নেতা শুভেন্দু অধিকারী নিজেদের টার্গেট এবং তা পূরণ না হওয়ার নানা কারণ তুলে ধরেন। লক্ষ্য পূরণ না হওয়ার কারণ হিসেবে শুভেন্দু বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি, যে ভয় ভীতির পরিবেশ, কয়েক লক্ষ ভোটারকে আটকে দেওয়া, সীমাহীন পুলিশি অত্যাচার, জুলুম, মিথ্যা মামলা এসব কারণ রয়েইছে। মুখ্যমন্ত্রী সহ তাঁর দলের ছোট-বড় নেতারা প্রকাশ্যে বলেছেন যে তৃণমূল কংগ্রেস যদি জিততে না পারে, নানা প্রকল্প তথা বেনিফিটগুলো বন্ধ করে দেবে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও একই লক্ষ্যের কথা বলেছিলেন, সেটাও মনে করিয়ে দেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘আমরা যে লক্ষ্যস্থির করেছিলাম, বাংলায় সেই সংখ্যা পাইনি। কিন্তু আমরা এই নির্বাচনে শতকরা যত ভাগ ভোট পেয়েছি, তাতে খুশি। প্রচুর মানুষ পশ্চিম বাংলায় ভারতীয় জনতা পার্টির উপর আস্থা রেখেছেন।
Read molre Fact check: প্রশান্ত কিশোর যোগ দিলেন বিজেপি তে? ভাইরাল চিঠিটি ফেক