বিরল এক জেনেটিক রোগের শিকার মহারাষ্ট্রের নাসিকের (Nashik) শিশু শিবরাজ দাওয়ারে আমেরিকার একটি কোম্পানির কাছ থেকে বিনামূল্যে ১৬ কোটির জীবনদায়ী ইঞ্জেকশন পেল, যা চিকিৎসা জগতের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যয়বহুল ওষুধ। শিবরাজ দাওয়ারের বাবা-মা জানিয়েছেন, তাঁদের ছেলেই স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (SMA) (Spinal Muscular Atrophy) আক্রান্ত প্রথম ভারতীয় রোগী, যে লটারির মাধ্যমে জোলজেন্সমা (Zolgensma) নামক জিন প্রতিস্থাপন থেরাপির এই ওষুধটি পেয়েছে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, শিবরাজের বাবা-মা জানান, শিবরাজের দ্বিতীয় জন্মদিনের কিছুদিন আগে পাওয়া জীবনদায়ী এই ইঞ্জেকশনটি চিকিৎসকদের মতে এসএমএ রোগীদের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী ওষুধ। প্রাথমিক রোগ নির্ণয়ের পর শিবরাজকে মুম্বাইয়ের হিন্দুজা হাসপাতালে রেফার করা হয়েছিল। শিবরাজের বাবা বিশাল দাওয়ারে আরও জানান, হিন্দুজা হাসপাতালের নিউরোলজিস্ট ডা. ব্রজেশ উদানি বলেছিলেন যে একমাত্র ‘জোলজেন্সমা’-ই তাঁর ছেলের জীবন বাঁচাতে পারে। নাসিকের একটি ফটোকপির দোকানের মালিক বিশাল দাওয়ারের পক্ষে ওষুধের দাম বাবদ বিপুল এই অর্থের ব্যবস্থা করা একপ্রকার অসম্ভব ছিল। তখন ড. উদানি-ই তাঁদের জানান, আমেরিকায় এমন একটি সংস্থা আছে যারা বিনামূল্যে ওষুধের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্য লটারির ব্যবস্থা করে থাকে। ড. উদানির পরামর্শ মতো তাঁরা এই লটারিতে আবেদন করেন এবং ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২০-তে লাকি ড্র-এ শিবরাজ নির্বাচিত হয়। সেই মতো, ২০২১-এর ১৯শে জানুয়ারী হিন্দুজা হাসপাতালে শিবরাজকে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়।
শিবরাজের আগের চিকিৎসক ডক্টর রমন্ত পাতিল পিটিআই-কে জানান, “এসএমএ-১ (SMA 1) এক প্রকার জিনগত ব্যাধি। প্রতি ১০,০০০ শিশুর মধ্যে একজন এই রোগে আক্রান্ত হয়। এটি শিশুর চলাচল করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয় এবং পেশীগুলিকে ক্রমশ অচল করে দেয়। শেষে শিশুকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দেয়।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শিবরাজের আগে হায়দ্রাবাদের এক দম্পতি তাঁদের এসএমএ আক্রান্ত তিন বছর বয়সী ছেলের ইঞ্জেকশন কিনতে প্রায় সাড়ে তিন মাসের মধ্যে গণ-তহবিলের (Crowd-funding) মাধ্যমে ১৬ কোটি টাকা জোগাড় করেন।
গত বছর, নোভার্টিস নামক সুইজারল্যান্ডের এক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি জানায় যে তারা জোলজেন্সমার জন্য মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে অনুমোদন পেয়েছে। তারা আরও জানায় যে জোলজেন্সমা এসএমএ-র জন্য এককালীন চিকিৎসা (one-time treatment)। এটি এমন এক মারণ রোগ যা ১০,০০০ শিশুর মধ্যে একজনকে আক্রমণ করে এবং তার ফলে আক্রান্তের মৃত্যু ঘটে, অথবা ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে দুই বছর বয়সের মধ্যে স্থায়ী ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন হয়।
শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, ছোট্ট শিবরাজ ইঞ্জেকশন নেওয়ার পর এখন ভালোই আছে, এমনকি আস্তে আস্তে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতিও হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁর চিকিৎসকরা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সম্প্রতি পুণের বাসিন্দা বছর খানেকের বেদিকা শিন্দেরও এই ভয়ানক রোগটি ধরা পড়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত জোলজেন্সমা ইঞ্জেকশন নেওয়ার প্রায় দু’মাস পরে গত রবিবার সন্ধ্যায় তাঁর মৃত্যু ঘটে। সেদিক থেকে শিবরাজকে ভাগ্যবান বলে মনে করছেন অনেকেই।
আরও পড়ুন
Pegasus-এর আক্রমণ হতে পারে আপনার ফোনেও, জেনে নিন বাঁচতে কী করবেন আর কী করবেন না?