শিশুদের জন্য করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন ‘কোভাক্সিন’-এর ক্লিনিকাল ট্রায়ালিংয়ের স্ক্রিনিং পর্ব সোমবার থেকে দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সে (AIMS) শুরু করা হয়েছে। এই ধাপের অধীনে, AIMS-এ ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিছু বাচ্চার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। একই সঙ্গে, AIMS (পাটনা) -এ ক্লিনিকাল ট্রায়াল প্রক্রিয়ার উপরেও কাজ চলছে।
AIMS (পাটনা) মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট প্রফেসর সিএম সিং জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে তার হাসপাতাল থেকে মোট তিনটি বাচ্চাকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ভারতে এখনও অবধি মোট ২৫ টি বাচ্চাকে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে এবং তাদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
এই ঘটনাটি এমন সময়ে ঘটছে যখন আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেন, সিঙ্গাপুর সহ অনেক দেশ তাদের বাচ্চাদের জন্য ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে। সর্বশেষ ঘটনাটি চীনে দেখা যায়, যেখানে তিন বছরের বেশি বয়সের বাচ্চাদের জন্য করোনা ভ্যাকসিন অনুমোদন করা হয়েছে। ফাইজার (Pfizer) এবং মোডের্নার (Moderna) মতো বেশ কয়েকটি সংস্থা বাচ্চাদের উপর তাদের পরীক্ষাও শেষ করে দিয়েছে। ব্রিটেন সরকারের পক্ষ থেকে ফাইজার ব্রিটেনের জন্য অনুমোদন পেয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে প্রশ্ন হল সরকার কি বাচ্চাদের জন্য ফাইজার আনানোর কথা বিবেচনা করছে।
এনআইটিআই আয়োগ (NITI Aayog)-এর সঙ্গে যুক্ত ডাঃ ভি কে পল জানান, ভারতে বাচ্চাদের টিকা দেওয়ার জন্য প্রায় ২৫-২৬ কোটি টিকার প্রয়োজন, তবে কিছু মানুষ ভ্যাকসিন পাবে এবং কিছু মানুষ ভ্যাকসিন পাবে না, এরকম ব্যবস্থা করা ঠিক হবে না।
এছাড়াও তিনি জানান, কোভ্যাক্সিনের পাশাপাশি জাইডাস (Zydus) নামে একটি ভ্যাকসিনও শিশুদের উপর পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ দুটিই দেশীয় ভ্যাকসিন।
করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় বাচ্চাদের অভিভাবকদের মনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে, যেমন বাচ্চাদের ভ্যাকসিনে বিশেষ কী আছে, এটি কতটা কার্যকর হবে।
বিবিসি-র মাধ্যমে আইসিএমআর (ICMR)-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল এন কে গাঙ্গুলি জানান, প্রধানমন্ত্রী মোদী সোমবার জানিয়েছিলেন ভারতে এখনও পর্যন্ত মোট ২৩ কোটি ভ্যাকসিনের ডোজ দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, করোনা ভ্যাকসিন হিসেবে ভারতে কোভিশিল্ড (Covishield) এবং কোভ্যাক্সিন (covaxin) দেওয়া হচ্ছে এবং দুটোই খুব নিরাপদ।
এমন পরিস্থিতিতে মানুষের মনে একটি সাধারণ প্রশ্ন উঠছে, বাচ্চাদের উপর যে ভ্যাকসিন পরীক্ষা করা হচ্ছে তা এই একই ভ্যাকসিন নাকি অন্য?
যার উত্তরে ডাঃ গাঙ্গুলি জানান, এখন যেই ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে সেই ভ্যাকসিন এবং বাচ্চাদের ভ্যাকসিন একই বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরও ব্যাখ্যা করে জানান, “এটি আলাদা ভ্যাকসিন নয়। প্রথমে ভ্যাকসিনটি ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের দেওয়া হয়, পরে এটি বয়সের গ্রুপ অনুসারে বিভক্ত করা হয়। কারণ বয়স্ক ব্যক্তিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হয় না। এরপর যখন ভ্যাকসিনের সুরক্ষা এবং কার্যকারিতা সম্পর্কিত তথ্য তৈরি হয়, তখন এটি গর্ভবতী মহিলা এবং শিশুদের মতো সংবেদনশীল জনগোষ্ঠীকে দেওয়া হয়। এমনকি বাচ্চাদের মধ্যে, ভ্যাকসিনটি প্রথমে কৈশোর বয়সী বাচ্চাদের দেওয়া হয় এবং পরে এটি ছোট বাচ্চাদের দেওয়া হয়।
দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয় না, কারণ প্লাসেন্টা এবং মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার জন্য সাধারণত তাদের ভ্যাকসিনের দরকার হয় না। অল্প বয়স্ক বাচ্চারা সাধারণত বাড়িতে থাকে, বাড়িতে রান্না করা খাবার খায়, যার কারণে এই প্রক্রিয়াটি গৃহীত হয়, তবে ভ্যাকসিনটি একই হয় যা বয়স্কদের দেওয়া হয়।”
বাচ্চাদের দেওয়া ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়াল সম্পর্কেও মানুষের মধ্যে যথেষ্ট কৌতূহল রয়েছে। ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্য বাচ্চাদের কীভাবে নির্বাচন করা হয়?
এবিষয়েএকটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলের সঙ্গে কথা বলার সময় দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সের সঙ্গে যুক্ত ডাঃ সঞ্জয় কুমার রাই জানান, “এই প্রক্রিয়াটির অধীনে স্বাস্থ্যকর স্বেচ্ছাসেবকরা অর্থাৎ যেসব বাচ্চারা নিজের ইচ্ছায় ভ্যাকসিন নিতে রাজি হয় তাদের এই ট্রায়ালের জন্য নেওয়া হয়। প্রথমে কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা হয় বাচ্চারা সুস্থ আছে কি না। বাচ্চারা স্বাস্থ্যকর হলে তাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।”
এমন পরিস্থিতিতে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল ভ্যাকসিন কবে আসবে?
এবিষয়ে এনটিআই আয়োগ (NITI Aayog)-এর সঙ্গে যুক্ত ভি কে পলের মতে, শিশুদের ভ্যাকসিনটি খুব তাড়াতাড়ি পাওয়া যাবে। তবে ডাঃ গাঙ্গুলি মনে করেন, শিশুদের ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রক্রিয়াতে কোনও তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়।
তিনি জানান, শিশুদের ভ্যাকসিনের বিষয়ে কোনও তাড়াহুড়ো করা উচিত নয় এবং দেশের বাচ্চাদের জন্য পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন না পাওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়াটি এড়ানো উচিত।