Durga Puja 2021: নদিয়ার (Nadia) নবদ্বীপের (Nabadwip) বিখ্যাত ও প্রাচীনতম বনেদি বাড়ির পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম শহরের একেবারে উত্তরপ্রান্তে অবস্থিত যোগনাথতলার ভট্টাচার্য বাড়ির লালদুর্গা পুজো। প্রচলিত দুর্গা মূর্তির থেকে এই দুর্গা মূর্তি অনেকটাই আলাদা। দেবী এখানে রক্তবর্ণা, তাই লোকমুখে তিনি ‘লালদুর্গা’ নামে অধিক পরিচিতা। পাশাপাশি এখানে প্রতিমার আরেকটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য চিরাচরিত রীতি ব্যতিরেকে কার্তিক ও গণেশের বিপরীত অবস্থান।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, এই পুজো প্রায় ৩৬০ বছরের প্রাচীন। ভট্টাচার্য পরিবারের আদি নিবাস ছিল বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা জেলার মিতরা গ্রামে। তবে বিগত ১২০ বছরেরও বেশী সময় ধরে নবদ্বীপের যোগনাথতলায় এই পুজো হয়ে আসছে। এই বাড়ির দশভুজার গায়ের রঙ রক্তবর্ণ হওয়ার পেছনে রয়েছে এক অলৌকিক ঘটনা। সপ্তদশ শতাব্দীর কথা। নবমীর দিন চণ্ডীপাঠ করছিলেন ভট্টাচার্য পরিবারের তৎকালীন গৃহকর্তা রাঘবরাম। পুজোর বিশেষ তিথি পেরিয়ে যাচ্ছে দেখে একটু দ্রুতই পাঠ করছিলেন তিনি। সেই সময় রাঘবরামের তৃতীয় পুত্র রামভদ্রের কানে পিতার চণ্ডীপাঠ ত্রুটিপূর্ণ বলে মনে হয়। তখন তিনি পিতাকে সেই বিষয়ে অবগত করালে পিতা রাঘবরাম চণ্ডীপাঠ স্থগিত রেখে পুত্রকে চণ্ডীপাঠ করতে বলেন। পিতার আদেশে ছেলে চণ্ডীপাঠ করতে বসলেন পূর্বদিকে মুখ করে। শুরু হল পিতা–পুত্রের একসঙ্গে চণ্ডীপাঠ। আর তখনই ঘটে গেল এক আশ্চর্য ঘটনা! সেই সময় হঠাৎই দিক পরিবর্তন করে দেবী প্রতিমা দক্ষিণমুখী থেকে ঘুরে পশ্চিমমুখী হয়ে একেবারে রাঘবপুত্রের মুখোমুখি হয়ে যান। এর পাশাপাশি, দেবীর গায়ের রঙ ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হতে থাকে। তিনি ক্রমশ লাল বর্ণ ধারণ করতে থাকেন। অপরদিকে রাঘবপুত্রের সারা শরীর রক্তশূন্য হয়ে সম্পূর্ণ ফ্যাকাসে হতে থাকে। এইভাবে চণ্ডীপাঠ শেষ হওয়ার পর রামভদ্রের মৃত্যু হয়। দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জনের সময় দেবীর সঙ্গে রামভদ্রও নদীর জলে বিলীন হয়ে যান। সেই থেকে আজও এখানে পুজোয় চণ্ডীপাঠ নিষিদ্ধ এবং প্রতিমা রক্তবর্ণা ও পশ্চিমমুখী।
প্রাচীন রীতিনীতি মেনেই আজও পুজো হয় এই বাড়িতে। অতীতে বলিদানপ্রথা থাকলেও বর্তমানে শুধুমাত্র কুমড়ো বলি হয়। মাকে এখানে মহাষ্টমী ও মহানবমীর দিন থোড় ও বোয়াল মাছের বিশেষ ভোগ দেওয়ার রীতি আছে। এই বাড়ির পুজোতে বোধনের আগেই কল্পারম্ভ হয়। কল্পারম্ভের পর হয় বোধন। বাইরের কোনও পুরোহিত নয়, বরং বংশপরম্পরায় পরিবারের সদস্যরা নিজেরাই শাস্ত্রমতে দেবীর পুজো করেন।
পারিবারিক এই পুজো আর পাঁচটা বনেদি বাড়ির পুজোর মতো শুধুমাত্র পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং দূরদূরান্ত থেকে অগণিত ভক্ত ভক্তিভাবের টানে প্রতি বছর এখানে পুজো দিতে আসেন। তবে বর্তমান কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে গত বছরের মতো এবারেও পরিবারের সদস্য ব্যতিত বাইরের কোনও পুজো নেওয়া হচ্ছে না।
আরও পড়ুন