Monday, May 6, 2024
More

    সার্ভিক্যাল ক্যান্সার-এ মৃত্যুর নিরিখে প্রথম স্থানেই ভারত

    Loading

    ভারতে দৈনিক বাড়ছে সার্ভিক্যাল ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা। সমগ্র এশিয়ায় সার্ভিক্যাল ক্যান্সারে আক্রান্ত দেশগুলির মধ্যে ভারতের স্থান প্রথম এবং দ্বিতীয় স্থানে চিন। পরিসংখ্যান চিন্তায় ফেলছে চিকিৎসক মহল থেকে সাধারন মানুষ সকলকেই।

    করোনার মতো মহামারী এতদিন ঘুম উড়িয়েছিল সকলের। এবার ক্যান্সারের পালা। দ্য গ্লোবাল ক্যান্সার অবজারভেটরি (GLOBOCAN) ২০২০ এর গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, সমগ্র বিশ্বব্যাপী ৬,০৪,১২৭ টি সার্ভিকাল ক্যান্সারের নতুন কেস রিপোর্ট করা হয় যার মধ্যে ৩,৪১,৮৩১ জন মারা যান।

    গ্লোবোক্যান এর তথ্য অনুসারে, এই পরিসংখ্যানের প্রায় ২৩ শতাংশই রিপোর্ট হয়েছে ভারতে। সার্ভিক্যাল ক্যান্সারে মৃত্যুর হার ৪০ শতাংশের মধ্যে ২৩ শতাংশ হয় ভারতে এবং ১৭ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয় চিনে।

    এই গবেষণাটি ভৌগলিক এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সাময়িক দিকগুলির একত্রীকরণে বানানো।

    এবার এই রোগ সম্পর্কে কিছু বিস্তারিত আলোচনা করা যাক,

    হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস(HPV) থেকে জন্ম নেয় সার্ভিক্যাল ক্যান্সার। এই ভাইরাস ধীরে ধীরে ক্যান্সারে পরিণত হতে প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর সময় নেয়। নারী দেহের গর্ভপাতের স্থানে এই ক্যান্সার লক্ষ্য করা যায়। সাধারণত ৪০ বছরের উপরের মহিলারাই সার্ভিক্যাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তবে অল্প বয়সী মেয়েদের মধ্যেও এই ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা যেতে পারে।

    • সর্ভিক্যাল ক্যান্সারের কারন:-

    মেয়েদের মধ্যে এই রোগ দেখা দেওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে,

    ১) অল্প বয়সেই শারীরিক সম্বন্ধ তৈরি করা: অল্প বয়সে যদি মেয়েরা যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলে, তাহলে এইচ পি ভি ভাইরাস সংক্রমণের দ্বারা সার্ভিক্যাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা থাকে।

    ২) একধিক ব্যক্তির সাথে শারিরীক সম্বন্ধ তৈরি করা:  মেয়েরা যদি বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলে তাহলে ভাইরাসের সংক্রমণ সহজেই বাড়তে পারে। এর ফলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও বেড়ে যায়।

    ৩) এইচআইভি(HIV) বা অন্য কোন ভাইরাসের ফলে শারীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া: হিউম্যান ইমিউনিটি ভাইরাস বা অন্য ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে সহজেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হলে আবারও ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা থেকেই যায়, ফলে সহজেই ক্যান্সার সংক্রমিত হওয়া সম্ভব।

    ৪) একাধিকবার গর্ভপাত: মহিলাদের একাধিকবার সন্তান প্রসব করলে গর্ভপাতের স্থানে ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে, এক্ষেত্রেও সার্ভিক্যাল ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি থাকে। 

    • সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের উপসর্গ:-

    ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরও বেশ কিছুটা সময় থাকে এই ক্যান্সার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে। কি কি উপসর্গ দেখলে আপনি এখনই এই ক্যানসার হওয়া থেকে সতর্ক হতে পারবেন,তাই এখানে দেওয়া রইল-

    ১) অত্যাধিক রক্তস্রাব হওয়া।

    ২) ঋতুস্রাব ছাড়াও মাসের মাঝে মধ্যেই রক্তস্রাব হওয়া।

    ৩) যৌনমিলনের পর রক্তস্রাব হওয়া।

    এই লক্ষণ গুলির দেখা পেলে আর সাধারন ভেবে এড়িয়ে যাবেন না, এক্ষুনি ডাক্তারএর সাথে যোগাযোগ করুন। এর ফলে ক্যান্সার শরীরে বাসা বাধার আগেই নষ্ট করা সম্ভব হবে।

    • এই রোগের থেকে প্রতিকারের উপায়:-

    সাধারণত এইচ পি ভি ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এইচ পি ভি ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। অল্প বয়সী মেয়েরা (১৫ বছরের মধ্যে) এই ভ্যাকসনে সবথেকে বেশি উপকার পেয়ে থাকে। তবে বিবাহিত মহিলারাও এই ভ্যাকসিন নিতে পারেন, এক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের প্রভাব খুব শক্তিশালী নাও হতে পারে। সাধারণত ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত মহিলারা এই ভ্যাকসিন নিতে পারেন।

    ডাক্তাররা এই রোগকে শনাক্ত করতে একধরনের টেস্ট করান যাকে বায়োপ্সি বলা হয়। বায়োপ্সি টেস্ট এর দ্বারা জানা যায় ক্যান্সার সংক্রমণের আগের স্টেজে আছে না ক্যান্সার সংক্রমণ হওয়া শুরু হয়ে গেছে। এরপর এমআরআই বা আল্ট্রাসনোগ্রাফির দ্বারা সংক্রমণ কতদূর ছড়িয়েছে তা দেখা হয়। ক্যান্সার প্রথম স্টেজে থাকলে সাধারণত একটা সার্জারির মাধ্যমে এর থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এতে ১৫-২০ দিনের মধ্যেই রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। কিন্তু ক্যান্সার সংক্রমণ যদি তার দ্বিতীয় বা তৃতীয় পর্যায়ে চলে যায় তবে রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপির দ্বারা ক্যান্সার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।

    দ্য গ্লোবাল ক্যান্সার অবজারভেটরি (GLOBOCAN) ২০২০ এর তথ্য ঘাটলে দেখা যায় সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে: বিশ্বব্যাপী সার্ভিকাল ক্যান্সারের ৫৮ শতাংশেরও বেশি সংক্রমণ এশিয়ায় হয়েছিল, তারপরে আফ্রিকা ২০ শতাংশ, ইউরোপ ১০ শতাংশ এবং লাতিন আমেরিকা ১০ শতাংশ। সার্ভিকাল ক্যান্সারের মৃত্যুর হারেও এগিয়ে এশিয়া। এশিয়ায় সার্ভিক্যাল ক্যান্সারে মৃত্যুর হার ৪০ শতাংশ। যার মধ্যে ভারতে মৃত্যুর হার ২৩ শতাংশ এবং চীনে ১৭ শতাংশ।

    সঠিক সময়ে উপসর্গ ধরা পড়লে ক্যান্সার তৈরি হওয়ার আগেই তাকে সমূলে বিনাশ করা সম্ভব। ভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিলে এখন আর সময় নষ্ট না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং নিজেকে একটি সুস্থ জীবনের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলুন।

    Related Articles

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

    Stay Connected

    3,541FansLike
    3,210FollowersFollow
    2,141FollowersFollow
    2,034SubscribersSubscribe
    - Advertisement -

    Latest Articles