রাতের আকাশে সফল উৎক্ষেপন অগ্নি ৫ এর। ভারতের প্রথম পারমাণবিক অস্ত্র সম্পন্ন আন্ত:মহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হলো অগ্নি ৫। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ৫৫০০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম। ভারতে অগ্নি ৫ এর সফলতা এখন চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে চীনের কপালে।
কিছু সপ্তাহ আগেই অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, নাগাল্যান্ড সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বেশ কিছুটা অংশ এবং উড়িষ্যার বঙ্গোপসাগর থেকে নিচে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত মোট সাড়ে ৫ হাজার কিলোমিটার এলাকা ১৫ এবং ১৬ ডিসেম্বর নো ফ্লাই-জোন ঘোষনা করেছিল ভারত সরকার। গতকালই এই সতর্কতার কারণ স্পষ্ট হলো। অগ্নি ৫ এর উৎক্ষেপন।
গতকাল ওড়িশার চাঁদিপুরের আবদুল কালাম আইল্যান্ড থেকে রাতের আকাশে প্রথমবার সফল পরীক্ষা হল অগ্নি ৫ মিসাইলের। গতকাল অগ্নি ৫ উৎক্ষেপন অগ্নি সিরিজের পঞ্চম সংস্করণ। ২০১২ সালে প্রথম অগ্নি সিরিজের এর পরীক্ষা শুরু হয়েছিলো। প্রত্যেক বারের পরীক্ষায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে অগ্নিকে আগের থেকেও আরও শক্তিশালী বানানো হয়। অগ্নির প্রত্যেকবারের সংস্করণের দায়িত্বে রয়েছে ডিফেন্স এন্ড রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (DRDO)।
এক ঝলক চোখ বুলিয়ে নেব অগ্নি ফাইভ এর বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের দিকে:
১) অগ্নি ৫ ফায়ার অ্যান্ড ফরগেট ব্যালেস্টিক মিশাইল:
প্রথমে ব্যালেস্টিক মিসাইল সম্পর্কে আপনাদের একটু ধারণা দেওয়া দরকার, সাধারণত ব্যালিস্টিক মিশাইলের ধর্ম হল এটা মাটি থেকে উৎক্ষেপনের পর ঊর্ধ্ব আকাশে উঠে যায় এবং সেখান থেকে মাধ্যাকর্ষণের টানে সরাসরি নিচের দিকে নেমে এসে নিজের লক্ষ্যকে ধ্বংস করতে সক্ষম । এই ধরনের মিসাইল এর যাত্রাপথ উল্টো ‘ইউ’ আকৃতির হয়ে থাকে। ব্যালিস্টিক মিশাইলের অন্য একটি ধর্ম হলো এটি সাধারণ মিসাইল এর থেকে অনেক বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম। ভারতের তৈরি অগ্নি ৫ বালেস্টিক মিসাইল হওয়ার পাশাপাশি এতে ব্যবহার করা হয়েছে ফায়ার এন্ড ফরগেট প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির ফলে ক্ষেপণাস্ত্রটিতে একবার লক্ষ্য সেট করে উৎক্ষেপণ করলে সেটি নিজের লক্ষ্য বস্তুকে ধ্বংস করেই শান্ত হবে।
২) ভারতের প্রথম পারমানবিক ক্ষমতা সম্পন্ন আন্তর্দেশীয় ব্যালাস্টিক মিসাইল অগ্নি ৫ :
সাধারণত ৫ হাজার কিলোমিটারের বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারলে কোনো মিসাইলকে আন্তর্দেশীয় ব্যালাস্টিক মিসাইল বলা হয়। এ.এন.আই এর তথ্যঅনুযায়ী,ভারতের তৈরি অগ্নি ৫ প্রায় সাড়ে পাচ হাজার কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে আঘাত হানতে সক্ষম। ফলে ভারত অগ্নি ৫ এর সফল উৎক্ষেপণের দ্বারা আন্তর্দেশীয় ব্যালেস্টিক মিসাইল সম্পন্ন দেশগুলির তালিকায় নিজের নাম জুড়েছে। ইন্টিগ্রেটেড গাইডেড মিসাইল ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামের(IGMDP) প্রযুক্তিও রয়েছে এই মিসাইলটির মধ্যে।
৩) দেশীয় প্রযক্তিতে হালকা ক্ষেপণাস্ত্র:
ডিআরডিও তরফ থেকে প্রত্যেকবারই অগ্নি মিসাইলকে আধুনিকতার সাথে সাথে দূরত্ব বাড়াতে হালকা করতে হচ্ছে। এবারের অগ্নি ৫ আগের বছরের থেকে আরও অনেক হালকা ও বেশী দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম। এর ফলে এই মিশালকে সহজেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পরিবহন করা সম্ভব হবে। এ.এন.আই এর তথ্য থেকে জানা যায় অগ্নি ৫ এর অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ফলে সাবমেরিন থেকেও উৎক্ষেপণ করা সম্ভব এই ক্ষেপণাস্ত্রটি।
অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াংয়ে কয়েকদিন আগেই সংঘর্ষ লেগেছিল ভারত-চিন সেনার। এর মধ্যেই অগ্নি ৫ পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ নিয়ে তৈরি হল কৌতুহল বেড়েছে চিন মহলে। দূরত্বের বিচারে বলতে গেলে অগ্নি ৫ চীনের বেইজিং সহ একাধিক অংশে আঘাত হানতে সক্ষম। এর ফলে চীনের চিন্তা আরও বাড়ছে।
অগ্নি ৫ এর উৎক্ষেপনের ঠিক আগেই ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করেছিল চীনের একটি স্পাই জাহাজ ইয়াং ওয়াং ৫। তবে সূত্র অনুসারে, উৎক্ষেপণের বেশ কিছু সময় আগেই তা এখান থেকে বেরিয়ে যায়। আগের বছর অগ্নি সিরিজের পরীক্ষা নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিরোধও করেছিল চীন। তাই এবারের অগ্নি ৫ এর উৎক্ষেপণ চীনকে আরও আশঙ্কার দিকে ঠেলে দিয়েছে।