গৌরব গুপ্ত: সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন, তার আগেই আগেই কেপে উঠছে বীরভূমের মাটি। গ্রাম থেকে উদ্ধার হচ্ছে ঝুরি ঝুরি তাজা বোমা। বোমার আঘাতে ঝরছে রক্ত, অন্ধকারে ডুবছে আগামীর মুখ। এই দ্বন্দ্ব দুই ভিন্ন রাজনৈতিক দলের হার জিতের নয়, তা রাজ্যের শাষক দলেরই দুই গোষ্ঠীর ক্ষমতা দখলের দ্বন্দ্ব।
সাঁইথিয়ার বহড়াপুর গ্রামে রাজ্যের শাসক দল তৃণমল এর অভ্যন্তরে চলছে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব। গোটা বীরভূমের বেতাজ বাদশা, যিনি নিজের ইশারায় নাচাতেন বীরভূম সেই অনুব্রত এখন জেলে, তার বিরুদ্ধে চলছে একাধিক দুর্নীতির কেস। এই সুযোগেই মাথাচাড়া দিচ্ছে দলের অন্যান্য কর্মী সমর্থকরা। এলাকার দখল কার হাতে থাকবে এই নিয়ে একই দলের কর্মীদের মধ্যে মণমালিন্য চলছিলো। এই সূত্রে গতকাল বাইক রাখার মত সামান্য একটা ঘটনা কে কেন্দ্র করে তৈরি হয় বিবাদ।
গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ধীরে ধীরে রূপ নেয় ভয়াবহতার। শুরু হয় একে অন্যের প্রতি বোমাবাজি। রাস্তার ওপর রক্তের ছাপ। বোমের আঘাতে কারো উড়েছে পা, আবার কেউ হয়েছেন গুরুতর আহত। সাধারন জনজীবন ব্যাহত হয়েছে এলাকায়। পুলিশি তৎপরতায় বোমাবাজি থামলেও এখনও স্বাভাবিক হয়নি পরিস্থিতি। ইতিমধ্যে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ১২ জনকে। সাঁইথিয়ার বহড়াপুর এখন পুরুষশুন্য। মহিলারা আতঙ্কে তাদের বাচ্ছাদের চিন্তায়। ঘর ছেড়ে পালিয়ে বাঁচছেন অনেকেই। গ্রাম বাংলার শ্যামলতা এখন শ্মশানের নিষ্ঠুরতায় পরিণত হয়েছে।
বীরভূম জেলায় শাসক দলের এক ব্লক সভাপতি সাবির আলী, ও বহড়াপুরের স্থানীয় নেতা তুষার মন্ডল এই গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের প্রধান খলনায়ক। একই সাথে তৃনমূল করলেও এদের রয়েছে দুটি আলাদা দল। এলাকার দখল কার হাতে আসবে এই দ্বন্দ্বের বারুদ অনেকদিন ধরেই ছড়িয়েছিল। গতকালের একটি সামান্য ঘটনা এই বারুদে স্ফুলিঙ্গের কাজ করে। একের পর এক চলতে থাকে বোমাবাজি, রাস্তার উপর ছড়িয়ে পড়েছে বিস্ফোরিত বোমের খোলস। দেওয়ালে রয়েছে রক্তের দাগ। এখানে একই দলের দুই কর্মী একে অপরের প্রাণ কারতে উদ্যত। গতকালের বোমাবাজির পর গ্রাম আজ নিস্তব্ধ।
এখনো অব্দি পুলিশ বম্ব স্কয়ার্ডের সাহায্যে উদ্ধার করেছে একাধিক তাজা বোমা, গ্রেপ্তারও হয়েছে একাধিক। বোম গুলি বম্ব স্কয়ার্ড গ্রামের শেষে ফাঁকা মাঠে নিষ্ক্রিয় করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গ্রাম জুড়ে চলছে পুলিশি মহড়া। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন দুজন। ১৪ বছরের এক কিশোরের গোটা শরীরে আঘাত রয়েছে স্প্লিন্টারের। অন্যদিকে শেখ সাদ্দাম নামের এক তৃনমূল কর্মীর বোমের আঘাতে উড়ে গেছে ডান পা। আহত দুই ব্যক্তিকে ভর্তি করা হয়েছে সিউড়ি সদর হাসপাতালে । বোমাবাজি থামলেও আতঙ্ক কাটেনি। একে একে মহিলারা গ্রাম ছাড়ছেন শুধু নিজের নয় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দিশা পরিবর্তনে।