কোভিড-১৯ মহামারী কোটি কোটি মানুষের জীবন এবং জীবিকাকে এলোমেলো করে দিয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিক, দিনমজুর এবং ফুটপাথ বিক্রেতারা অনেকেই লকডাউনের কারণে তাদের আয়ের একমাত্র উৎস হারিয়েছেন। তবে এমন কঠিন পরিস্থিতিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেক বিখ্যাত মানুষজন থেকে সাধারণ মানুষ জনও। কিন্তু এমনও কিছু মানুষ জন রয়েছেন তারা সাহায্য করার পরে নিজেরাই নিজেদের প্রচারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছবি তুলে ধরেছেন। সেখানে এমন কিছু মানুষ আছেন যারা কোনো লাভ বা জনপ্রিয় হওয়ার আশা না করেই দরিদ্রদের জন্য আর্থিক সহায়তা করেন। আজ এমন এক মহিলার গল্প জানব, যিনি নিজে গরীব হওয়া সত্ত্বেও নিজের সামর্থ্য মতো আর্থিক সহায়তা করতে পিছপা হননি। যিনি নিজের ৬০০ টাকা মাসিক পেনশনের মধ্যে থেকে ৫০০ টাকা তুলে দিয়েছিলেন তার খাদ্য সরবরাহকারী স্বেচ্ছাসেবকদের হাতে।
যদিও তার অবদান অনেকের কাছেই নগণ্য বলে মনে হতে পারে, তবে পরিচারিকার কাজ করে জীবিকা নির্বাহকারী ৭০ বছর বয়সী মহিলা কমলাম্মা-র কাছে এর মূল্য অনেকখানি ।
মাইসুর কে.জি. কোপালের কাছে অবস্থিত চেন্নাগিরিকোপ্পালু-র বাসিন্দা কমলাম্মা। কোভিড মহামারী শুরু হওয়ার পর কমলাম্মা যেখানে কাজ করতেন সেই বাড়ির মালিক তাকে তার বয়সের কারণে তাদের বাড়িতে কাজ না করার কথা বলায় তিনি তার চাকরি হারান। যদিও তার দুটি পুত্র, তবে কমলাম্মা সবসময় স্বনির্ভর জীবনযাপন করেছেন এবং স্বামীর মৃত্যুর পরেও কারও উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকেননি। তিনি সরকারি পেনশন হিসেবে মাসে ৬০০ টাকা পান, লকডাউন চলার কারণে উপার্জনের অন্য কোনো উপায়ও ছিল না তার।
তাঁর দুর্দশার কথা শুনে এক স্থানীয় নেতা মহাদেব, রোটারি হেরিটেজ মাইসুরের তালাকাদু মঞ্জুনাথের সঙ্গে এবিষয়ে কথা বলেন। ক্লাবটি মহিলাদের খাওয়ানোর জন্য চেন্নাগিরিকোপ্পালু এবং অন্যান্য শহরাঞ্চলে বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ – “অন্নদান” চালু করেছিল।
মঞ্জুনাথ ক্লাবের স্বেচ্ছাসেবীদের জানান, কমলাম্মাকেও উপযুক্ত খাবার সরবরাহ করার জন্য এবং তারপর থেকে তিনি প্রতিদিন খাবারের প্যাকেট পেতে থাকেন। এরপর কমলাম্মা ৬০০ টাকা পেনশন পাওয়ার পর একদিন মহাদেবকে জানান, তিনি কোভিড ত্রাণ খাদ্য কর্মসূচির জন্য ৫০০ টাকা অনুদান করতে চান এবং তিনি রোটারি স্বেচ্ছাসেবীদের হাতে সেই অর্থ তুলে দিয়ে জানান, তিনি কেবলমাত্র সামান্য কিছু মূল্য দান করে এমন একটি ভালো কাজে নিজের অবদান রাখতে চান।
সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে ডি.এন. রাঘু রাঘভেন্দ্র জানান, “আমরা রোটারি হেরিটেজ মাইসুর সদস্যরা আমাদের ‘অন্নদান’-এর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলাম, সেইসময় ৭০ বছরেরও বেশি বয়সী এক প্রবীণ মহিলা, কমলাম্মা আমাদের কাছে এসেছিলেন। খাবারের খোঁজে এসেছেন এই ভেবে আমরা খাবারের প্যাকেটগুলি তার দিকে এগিয়ে দিতেই তিনি নিতে অস্বীকার করেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল কোনো দ্বিধায় ছিলেন তিনি, পরমুহূর্তেই নিজের সাহস জুগিয়ে কাপড়ের আড়ালে লুকিয়ে রাখা কিছু বের করে বললেন, আমি আপনাকে ৩০ দিনের বেশি সময় ধরে আমার অঞ্চলে খাবার সরবরাহ করতে দেখছি, তাই আমি অনুভব করেছি আমার মাসিক পেনশন ৬০০ টাকার মধ্যে ৫০০ টাকা আপনাকে দেওয়া উচিত। এটি সামান্য পরিমাণ মূল্য, তাও দয়া করে গ্রহণ করুন।”
“আমরা হতবাক এবং বিব্রত হয়ে পড়েছিলাম যে কিছু মুহূর্ত আগে আমরা তাকে খাবার দিতে যাচ্ছিলাম। এই কঠিন সময়ে ওই অর্থ নিজের কাছে রাখার জন্য আমরা বেশ কয়েকবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমরা যেন তা গ্রহণ করি। তাই আমরা ওনার সিদ্ধান্তকে সন্মান জানানোর উদ্দেশ্যে ৫০০ টাকা গ্রহণ করি”, বলে জানান রাঘু রাঘভেন্দ্র।
কমলাম্মা তার মাসিক উপার্জনের ৯০ শতাংশ দান করেন, তাই তিনি টাটা, আম্বানি, অজিম প্রেমজি বা নারায়ণ মূর্তির চেয়ে কম নন।এই ঘটনার মাধ্যমে এক মায়ের হৃদয়ের বিশালতা প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পান বহু মানুষ।