বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে এমন অনেক প্রেমের গল্প রয়েছে, যা পূর্ণতা পায়নি। তেমনই একটি অপূর্ণ প্রেমের গল্প ছিল হিন্দি সিনেমার বিখ্যাত অভিনেত্রী সুরাইয়া (Suraiya) এবং সুপারস্টার দেব আনন্দ (Dev Anand)-এর। দুজনের মধ্যে ছিল অপরিসীম ভালোবাসা, কিন্তু সেই ভালোবাসার মানুষ দুটি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আগেই, আলাদা করে দেওয়া হয়েছিল তাদের। যদিও দুজনের ভালোবাসার উদাহরণ আজও মানুষকে দেওয়া হয়। সুরাইয়ার জন্মদিন উপলক্ষে আজ আমরা আপনাদেরকে এই প্রেমের গল্পের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব।
সুরাইয়া (Suraiya), যিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রের সুপারস্টার এবং গায়িকা ছিলেন। ১৯২৯ সালের ১৫ জুন পাঞ্জাবের একটি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সুরাইয়া (Suraiya)। তিনি মাত্র ৭ বছর বয়সে চলচ্চিত্র জগতে পা রেখেছিলেন এবং ১২ বছর বয়স থেকে গান গাওয়া শুরু করেছিলেন। ১৯৩৬ থেকে ১৯৬৩ সালের মধ্যে সুরাইয়া ৬৭ টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন এবং ৩৩৮ টি গান গেয়েছিলেন। সুরাইয়া (Suraiya) হিন্দি সিনেমার বিশিষ্ট অভিনেত্রীদের মধ্যে একজন ছিলেন।
১৯৪০ এবং ১৯৫০- এর দশকে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকের অধিকারিণী ছিলেন অভিনেত্রী সুরাইয়া। সবাই তার অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে যেতেন। অনুরাগীরা যতটা তার অভিনয় দেখে মুগ্ধ হতেন, ততটাই তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ ছিলেন। সুরাইয়া তার অভিনয়ের জন্যে অনেক পুরষ্কার জিতেছিলেন। একই সঙ্গে, তাঁর অভিনয় এবং সৌন্দর্যের কারণে তিনি মালিকা-ই-হুসন (বিউটি কুইন), মালিকা-ই-তারান্নুম (মেলোডি কুইন) এবং মালিকা-ই-আদাকারি (অভিনয়ের রানি) নামে খ্যাত হয়েছিলেন।
অনুরাগীদের পাশাপাশি হিন্দি সিনেমার একজন সুপারস্টারও সুরাইয়ার প্রেমে পড়েছিলেন। সেই অভিনেতা আর কেউ নন, সুপারস্টার দেব আনন্দ (Dev Anand) ছিলেন। ‘বিদ্যা’ ছবির সেটে দুজনের প্রথম দেখা হয়েছিল। সেই সময় সুরাইয়া (Suraiya) একজন বড় তারকা ছিলেন, তখন দেব আনন্দ সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছিলেন। তিনি তাঁর আত্মজীবনী অর্থাৎ Autobiography-তে নিজের এবং সুরাইয়ার প্রেমের কাহিনী উল্লেখ করেছেন।
দেব আনন্দ (Dev Anand) তার আত্মজীবনী ‘রোমানসিং উইথ লাইফ’ (Romancing with life)-এ তিনি তাঁর প্রেমের গল্প সম্পর্কে বলেছিলেন, একসঙ্গে কাজ করার সময় দেব আনন্দ (Dev Anand) ও সুরাইয়া (Suraiya) দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব গভীর হয়ে ওঠে এবং ধীরে ধীরে এই বন্ধুত্ব প্রেমে রূপান্তরিত হয়।
দেব আনন্দ বলেছিলেন, “সুরাইয়াকে না দেখলে আমি শান্তি পেতাম না এবং সুরাইয়া ছাড়া এক একটা মুহূর্ত কাটানো আমার পক্ষে খুব মুশকিল হয়ে যেত। সুরাইয়ার পরিবারের সদস্যরা যত বেশি বিধিনিষেধ বাড়িয়েছিলেন, আমাদের ভালবাসা ততই গভীর হয়েছিল। সুরাইয়ার পরিবারের সদস্যরা আমাদের দেখা করতেও বারণ করে দিয়েছিল।”
তাদের সম্পর্কের মধ্যে সবচেয়ে বড় বাধা ছিলেন সুরাইয়ার দিদা, যিনি এই সম্পর্কটিকে অস্বীকার করেছিলেন। কারণ তাঁরা দুজন ভিন্ন ধর্মের ছিলেন। সুরাইয়ার দিদা তাঁর উপর সারাক্ষণ নজর রাখতেন। তাদের মধ্যেকার দুরত্ব বারানোর জন্য সুরাইয়ার পরিবারের সদস্যরা নানারকমের চেষ্টা করতেন। যার পরে দুজনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে সিনেমার দৃশ্য শুট করার সময় তারা বাস্তবে বিয়ে করবেন। এমন পরিস্থিতিতে তাদের বিয়ের জন্য একটি দৃশ্য শুট করা হয়েছিল।
জিত ছবির শুটিং চলাকালীন দেব আনন্দ ও সুরাইয়ার বিয়ের দৃশ্যের শুটিং চলছিল । দৃশ্যটি কেবল লোক দেখানোর জন্য হলেও বাস্তবে এটি আসল বিবাহ হতে চলেছিল। আসল পণ্ডিতদের বিয়ের জন্য ডাকা হয়েছিল, কিন্তু হঠাৎ এমন কিছু ঘটেছিল যে কারণে বিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। তারা দুজনে বাস্তবে বিয়ে করছেন, এই খবর একজন সহকারী পরিচালক সুরাইয়ার দিদাকে জানিয়ে দিয়েছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে সুরাইয়ার দিদা তাকে সেট থেকে টেনে নামিয়ে জোর করে বাড়িতে নিয়ে চলে যান।
একটি সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় সুরাইয়া জানিয়েছিলেন তিনি কেন বাধ্য হয়ে দেব আনন্দকে ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সাক্ষাৎকার চলাকালীন তিনি বলেছিলেন, প্রতিদিন তাদের চলচ্চিত্র জগতের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সুরাইয়ার বাড়িতে ডাকা হত, দেব আনন্দকে বিয়ে না করার বিষয়ে সুরাইয়াকে রাজি করানোর জন্য। তাঁরা সুরাইয়াকে বলতেন দেব আনন্দকে বিয়ে করা তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল হবে। সুরাইয়া আরও বলেছিলেন, একবার অভিনেত্রী নাদিরার প্রথম স্বামী নকশাব সুরাইয়ার সামনে কুরান নিয়ে এসে সুরাইয়াকে বলেছিলেন, কুরানে হাত রেখে শপথ করে বলতে যে দেব আনন্দকে বিয়ে করবে না।
শুধু তাই নয়, সুরাইয়া (Suraiya) জানান, নকশাব আরও বলেছিলেন, তারা দুজনে বিয়ে করলে দেশে দাঙ্গা শুরু হতে পারে। সুরাইয়া (Suraiya) একথা শুনে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু দেব আনন্দের প্রাননাশের হুমকি দেওয়া হলে সুরাইয়ার সাহস ভেঙে যায় এবং তাকে তাঁর দিদা ও মামা হুমকি দিয়েছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে সুরাইয়া দেব আনন্দের থেকে দূরত্ব বজায় রাখাই ভাল বলে মনে করেছিলেন। তবে সুরাইয়া (Suraiya) তাঁর জীবনে দেব আনন্দের স্থান অন্য কাউকে দেননি এবং সারাজীবন অবিবাহিত থেকেছেন। মুম্বাইয়ের মেরিনলাইনে অবস্থিত তাঁর ফ্ল্যাটে তিনি একাকী জীবন কাটিয়েছেন।