Wednesday, December 11, 2024
More

    Alexander the Great : ইতিহাসের অন্যতম সফল সম্রাট, মাত্র কুড়ি বছর বয়সে হয়েছিলেন রাজ মুকুটের অধিকারী

    প্রথম পর্ব:

    শৈশব থেকেই তাঁর কিছু দক্ষতা ছিল, যা দেখার পর তাঁর সম্বন্ধে সবার ধারণা হয়েছিল যে তিনি ইতিহাসের এক অসাধারণ ব্যক্তি হিসাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

    মাত্র ১২ বছর বয়সে, তিনি একটি বন্য এবং আক্রমণাত্বক ঘোড়াকে বশে করেছিলেন। তারপর থেকে বুসেফেলাস নামে ওই বিশাল, বুনো ঘোড়াটি সারাজীবন ওই ১২ বছর বয়সী বালকটির সঙ্গে কাটিয়ে ছিল। এই বালকটি বড় হয়ে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট নামে পরিচিত হয়েছিলেন এবং প্রাচীন যুগের অন্যতম বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব রূপে গণ্য হয়েছিলেন।

    আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট, সিকান্দার-ই-আজম নামেও পরিচিত। ম্যাসিডোনিয়ায় সিকন্দরের জন্ম ৩৫৬ খ্রিস্টপূর্বে হয়েছিল। ম্যাসিডোনিয়া হল উত্তর গ্রিস থেকে বালকান পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা। সিকন্দরের পিতাকে তাঁর নিজের সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা এক প্রহরী হত্যা করেছিলেন, তাঁর পিতার মৃত্যুর পর নতুন রাজা কে হবে তার জন্য লড়াই শুরু হয়।

    এই সংগ্রামে তিনি তাঁর সমস্ত প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করে, ২০ বছর বয়সে রাজা হয়েছিলেন। এরপর আলেকজান্ডার ১২ বছর রাজত্ব করেন। তিনি তাঁর সৈন্যদের নিয়ে ১২ হাজার মাইলের বিজয় যাত্রা করেছিলেন।

    মধ্য এশিয়ায় গ্রীক সংস্কৃতি:

    সিকন্দর তখন পারস্য সাম্রাজ্যের রাজা তৃতীয় দারিয়সকে পরাজিত করে গ্রীক সংস্কৃতিটি মধ্য এশিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। সিকন্দরের রাজত্বকালে তাঁর সাম্রাজ্য পশ্চিমে গ্রীস থেকে পূর্ব পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, ইরাক এবং মিশর পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছিল। সিকন্দরকে ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী, দক্ষ নেতা এবং সামরিক অধিনায়ক হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

    সিকন্দর রাজত্ব করার আগে ম্যাসিডোনিয়া কেবল একটি ভৌগলিক ক্ষেত্রের নাম ছিল, তখন এই ক্ষেত্রটি মজবুত ভাবে গঠিত সাম্রাজ্য ছিল না। তবে সিকন্দরের পিতা দ্বিতীয় ফিলিপ এই ক্ষেত্রেটিকে সংযুক্ত রাজ্যের রূপ দিয়েছিলেন।

    সিকন্দরের মা অলিম্পিয়াস তার বাবা দ্বিতীয় ফিলিপের তৃতীয় বা চতুর্থ স্ত্রী ছিলেন এবং পরিবারে গুরুত্ব ছিল যথেষ্ট, কারণ তিনি পরিবারের প্রথম পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। অর্থাৎ সিকন্দরের রূপে তিনি রাজ্যের উত্তরাধিকারীর জন্ম দিয়েছিলেন।

    অ্যারিস্টটল থেকে শিক্ষা:

    ব্রিটেনের রিডিং ইউনিভার্সিটির ক্লাসিকের অধ্যাপক রিচেল মায়ার্স বলেছিলেন, আলেকজান্ডারকে সেই সময়ের সবচেয়ে ভালো শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল। যখন তিনি ১৩ বছর বয়সী ছিলেন, তখন তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে অ্যারিস্টটলের মতো দার্শনিকরাও যুক্ত ছিলেন।

    “সিকন্দর অ্যারিস্টটলের কাছ থেকে গ্রীক সংস্কৃতির উপর শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। এ কারণেই তাঁকে দর্শন শেখানো হয়েছিল এবং সমস্ত শিক্ষিত গ্রীকদের মতো তিনিও প্রাচীন গ্রীক কবি হোমারের উপর দক্ষতা অর্জন করেছিলেন, যিনি ইলিয়াড এবং ওডিসির মতো মহাকাব্য লিখেছিলেন।”

    “হোমারের কাব্য ইলিয়াড, সিকন্দরের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যুদ্ধের সময় এই কাব্যের কিছু অংশ তিনি তাঁর বালিশের নীচে রেখে ঘুমোতেন।”

    ইলিয়াড হ’ল একটি মহাকাব্য, যার মাধ্যমে ট্রয় নগরী এবং গ্রীকদের মধ্যে যুদ্ধের শেষ বছরের গল্পের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সিকান্দার এবং এই গল্পের নায়ক অ্যাক্সেসের মধ্যে একটি মজবুত মানসিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল।

    এছাড়াও তিনি গ্রীক চরিত্র হারকিউলিস দ্বারাও ব্যাপক প্রভাবিত ছিলেন এবং যুদ্ধের সময় এই চরিত্রগুলিকে তিনি মনে রাখতেন।

    অতুলনীয় শাসক:

    সিকন্দরের উপর সারাজীবন অ্যারিস্টটলের শিষ্য হওয়ার প্রভাব ছিল। রিচেল মায়ার্স বলেছিলেন, “আপনারা হয়তো ভাবতে পারেন, গ্রীক আভিজাত্য থেকে একজন সাহসী ছেলেকে অতুলনীয় শাসক হিসাবে পরিণত করার দুর্দান্ত সুযোগ ছিল অ্যারিস্টটলের কাছে। সম্পূর্ণ ভাবে এমন না ঘটলেও, সিকন্দর গ্রীক রাজ্যগুলির সঙ্গে যেভাবে আচরণ করতেন, তার মধ্যে অ্যারিস্টটলের শিক্ষার খুব ভালো প্রভাব ছিল। একটি ঘটনা এই শিক্ষার চিত্র তুলে ধরেছে।”

    “সিকন্দর গ্রীকের কোরিন্থ শহরের বিখ্যাত দার্শনিক ডায়োজিনেসের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, তাঁর কাজের জন্য তাকে শুভ কামনা জানানোর উদ্দেশ্যে। যখন সিকন্দর সেখানে পৌঁছান তখন ডায়োজিনেস বসে ছিলেন। সিকন্দর ডায়োজিনেসকে জিজ্ঞাসা করলেন তিনি তাঁর জন্য কী করতে পারেন। জবাবে ডায়োজিনেস বলেছিলেন, সামনে থেকে সরে যাও, কারণ তোমার জন্য সূর্যের আলো আমার কাছে আসতে পারছে না।”

    ডায়োজিনেসের এই উত্তর শোনার পরও নিজের সহনশীলতা বজায় রাখা অ্যারিস্টটলের শিক্ষারই ফলাফল ছিল।

    সিকন্দরের দুর্বলতা:

    সিকন্দর ক্ষমতায় আসার কথা বর্ণনা করে, বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসিকের অধ্যাপক ডায়না স্পেন্সার বলেছিলেন, “যেমনটি আমরা জানি, সিকন্দরের বাবা দ্বিতীয় ফিলিপের বেশ কয়েকটি স্ত্রী ছিলেন, যার মধ্যে একজন ছিলেন ক্লিওপেট্রা নামে এক মহিলা। তিনি সিকন্দর এবং তাঁর মায়ের জন্য নানারকমের সমস্যা তৈরি করেছিলেন। যার ফলে সিকন্দর এবং তাঁর মা উভয়ই মনে করতে শুরু করেছিলেন যে তাঁরা পুরোপুরি ম্যাসিডোনিয় ​​নন। এই ঘটনাটি তাদের মর্যাদাকে আঘাত করছিল এবং রাজনৈতিকভাবেও ক্ষতিকারক ছিল। সিংহাসন পাওয়ার লড়াইয়ে সিকন্দরের দুর্বলতা ছিল এই ঘটনাটি।”

    ডায়না স্পেন্সার বলেছিলেন, “দ্বিতীয় ফিলিপের নতুন স্ত্রী ক্লিওপেট্রা হতে পারতেন নতুন রানী। সেই কারণে ক্লিওপেট্রা সিকন্দরের রাজা হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারতেন।”

    রাজনৈতিক সত্যতা:

    এটা একটি রাজনৈতিক সত্যি ছিল যে পুরোপুরি মেসিডোনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন একজন নতুন পুরুষ উত্তরসূরি হাজির হলে সিকন্দরের সমস্যা হতে পারত। অনেক ঐতিহাসিক এই অবস্থার মনোবৈজ্ঞানিক পটভূমি উপস্থাপন করেছেন।

    ডায়না স্পেন্সারের মতে, সিকন্দর ছয় মাসের জন্য নিজেই রাজ্য ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন এবং তাঁর মাও কয়েক মাসের জন্য রাজ দরবার থেকে নিজেকে দূরে রেখেছিলেন। কিছু সময় পরে, পিতা পুত্রের মধ্যে তিক্ততা হ্রাস পায় এবং সিকন্দর ফিরে আসে, তবে সম্পর্কের স্থবিরতা সিকন্দরের উত্তরসূরি হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

    “এই পরিস্থিতিতে একটি ঘটনা ঘটেছিল, যা সিকন্দরকে সিংহাসনে বসিয়েছিল। এটা সেই সময় ছিল যখন সম্ভবত কোনও খাঁটি মেসিডোনিয় রক্ত তাঁর উত্তরসূরি হওয়াকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগে তিনি সবকিছু নিজের আয়ত্তে আনতে পেরেছিলেন।

    যুদ্ধ কৌশল ও রণনীতিতে পারদর্শী:

    পারস্য সাম্রাজ্যের সীমানা ভারত থেকে মিশর এবং উত্তর গ্রীসের সীমানা পর্যন্ত প্রসারিত ছিল। তবে এই মহান সাম্রাজ্যের সমাপ্তি ঘটেছিল সিকন্দরের হাতে।

    পারস্য সাম্রাজ্যের তুলনায় ছোট কিন্তু প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর হাতে রাজা তৃতীয় দারিয়সের পরাজয়কে ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট হিসাবে দেখা হয়।

    এই যুদ্ধের ফলে একটি প্রাচীন অতি ক্ষমতাসম্পন্ন শাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে এবং একটি নতুন ও বিশাল সাম্রাজ্যের মধ্যে দিয়ে গ্রীক সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিস্তার ঘটে।

    ঐতিহাসিকদের মতে, সিকন্দরের জয়ের কৃতিত্বের ভাগীদার তাঁর বাবাও, যিনি তাঁর জন্য একটি দুর্দান্ত সেনাবাহিনী রেখে গিয়েছিলেন। যার নেতৃত্ব অত্যন্ত অভিজ্ঞ এবং অনুগত সেনাপতিদের হাতে ছিল।

    যদিও এক ধূর্ত এবং দক্ষ শত্রুকে তাঁর এলাকায় গিয়ে পরাজিত করা, একজন নেতা হিসেবে সিকন্দরের বুদ্ধিমত্তা এবং যুদ্ধ কৌশল ও রণনীতির উপর এক আশ্চর্যজনক দক্ষতার পরিচয় ছিল।

    আলেকজান্ডারের সেনাবাহিনী:

    মেসিডোনিয়ায় প্রথম থেকে এমন শক্তিশালী সামরিক বাহিনী ছিলনা। গ্রীসে অ্যাথেন্স, স্পার্টা এবং থিবেস রাজ্যগুলি ঐতিহাসিকভাবে শক্তির উৎস ছিল। এই রাজ্যের শাসকেরা মেসিডোনিয়ার মানুষদেরকে বন্য বা বার্বিয়ান হিসাবে অভিহিত করত।

    সিকন্দরের পিতা দ্বিতীয় ফিলিপ এককভাবে মেসিডোনিয়ার সেনাবাহিনীকে এমন প্রভাবশালী সেনাবাহিনী করেছিলেন, যার ভয় সেই প্রাচীন যুগে বহু দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। ফিলিপ মেসিডোনিয়ার পুরো সমাজকে এক পেশাদার সেনাবাহিনীর সঙ্গে পুনর্গঠিত করেছিলেন। সুদক্ষ পদাতিক সৈন, অশ্বারোহী, জাভিলিনাস এবং তিরন্দাজরা এই সেনাবাহিনীর অংশ ছিল। ফিলিপের মৃত্যুর পর সিকন্দর এই সেনাবাহিনী উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন। আলেকজান্ডার সর্বদা বুদ্ধিমান রণকৌশলবিদ ছিলেন।

    তিনি জানতেন গ্রীসে ভয় ও বল দ্বারা শাসন করা সম্ভব নয়। তিনি এক শতাব্দী পূর্বে পারস্য সাম্রাজ্যের দ্বারা গ্রীস আক্রমণের ঘটনাটি রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে পারস্য সাম্রাজ্যে তাঁর আক্রমণকে দেশপ্রেমের সঙ্গে যুক্ত করে তা সঠিক বলে প্রমাণ করেছিলেন।

    পারস্য সাম্রাজ্যে প্রবেশ :

    আলেকজান্ডার একটি প্রচার শুরু করেছিলেন। যাতে বলা হয়েছিল, মেসিডোনিয়ার মানুষ পুরো গ্রীসের তরফ থেকে পারস্য সাম্রাজ্যের উপর আক্রমণ করছে, যদিও এক শতাব্দী আগের পারস্য সাম্রাজ্য এবং গ্রীসের মধ্যেকার যুদ্ধে মেসিডোনিয়া জড়িত ছিলনা।

    খ্রিস্টপূর্ব ৩৩৪ বিসি-তে সিকন্দরের সেনাবাহিনী পারস্য সাম্রাজ্যে প্রবেশ করেছিল।

    দ্বিতীয় পর্বের জন্য নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন

    Alexander the Great : কিংবদন্তি সমরকৌশলী এক সম্রাট,মাত্র ৩২ বছর বয়সেই হয়েছিলেন বৃহৎ সাম্রাজ্যের অধিপতি 

    https://www.bonglifeandmore.com/alexander-the-great/

    Related Articles

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

    Stay Connected

    3,541FansLike
    3,210FollowersFollow
    2,141FollowersFollow
    2,034SubscribersSubscribe
    - Advertisement -

    Latest Articles