অ্যাথলেটিক্সে ভারতের পতাকা উত্তোলনকারী মিলখা সিং গতকালই বিদায় জানিয়েছেন বিশ্বকে। মিলখা সিং করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। এক মাসে ধরে করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার পর শুক্রবার রাতে প্রয়াত হন মিলখা সিং। প্রয়াণকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর । তাঁর পরিবারে তাঁর পুত্র গল্ফার জীব মিলখা সিং এবং তিন মেয়ে রয়েছে। এর আগে তাঁর স্ত্রী এবং ভারতীয় ভলিবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক নির্মল কৌরও করোনা সংক্রমণের কারণে প্রয়াত হয়েছিলেন।
মিলখা সিং ‘ফ্লাইং শিখ’ নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর এই নামের পেছনের গল্পটি খুব আকর্ষণীয়। ২০১৬ সালে ইন্ডিয়া টুডের এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই গল্পটি জানিয়ে ছিলেন। ১৯৬০ সালে পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক অ্যাথলিট প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য মিলখাকে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। মিলখা দেশভাগের দুঃখ ভুলতে পারেননি, তাই তিনি পাকিস্তানে যেতে চাননি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর কথায় তিনি পাকিস্তানে যেতে রাজি হন। পাকিস্তানে সেই সময় আবদুল খালিক দ্রুততম রানার ছিলেন।
প্রতিযোগিতার সময়, প্রায় ৬০০০০ পাকিস্তানি ভক্ত আবদুল খালিকের মনোবল বাড়ানোর জন্য উল্লাস করছিলেন, কিন্তু তাও খালিক মিলখার গতির সামনে জিততে পারেননি। মিলখার জয়ের পরে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মার্শাল আইয়ুব খান তাঁর নাম রেখেছিলেন ‘ফ্লাইং শিখ’।
মিলখা সিং ১৯২৯ সালের ২০ নভেম্বর গোবিন্দপুরের (বর্তমান পাকিস্তান) এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি তাঁর পিতামাতার মোট ১৫ জন সন্তানের মধ্যে একজন। তাঁর পরিবার পার্টিশনের ট্র্যাজেডির শিকার হয়েছিল। সেই সময় তাঁর বাবা-মা সহ আট ভাইবোনকেও হত্যা করা হয়। এই ভয়াবহ দৃশ্য দেখে মিলখা সিং পাকিস্তান থেকে ট্রেনের মহিলা বগিতে লুকিয়ে দিল্লি চলে আসেন।
দেশ ভাগের পর দিল্লির শরণার্থী শিবিরে নিজের দুঃখের দিনগুলি স্মরণ করে মিলখা বলেছিলেন, “পেট ফাঁকা থাকলে কেউ কীভাবে দেশ সম্পর্কে চিন্তা করতে পারে? যখন আমি রুটি পেয়েছিলাম, তখন দেশের কথা ভাবতে শুরু করি।” ক্ষুধার্ত হওয়ার কারণে জন্ম নেওয়া ক্রোধ তাকে শেষ পর্যন্ত তাঁর গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, “আপনার বাবা-মাকে যদি আপনার চোখের সামনে মারা হয়, তাহলে কি সেই দৃশ্য কখনও ভোলা যায় … কখনও নয়।”
চারবার এশিয়ান গেমসের স্বর্ণপদক প্রাপ্ত মিলখা ১৯৫৮ সালের কমনওয়েলথ গেমসে হলুদ পদক জিতেছিলেন। তবে তাঁর সেরা পারফরম্যান্সটি ছিল ১৯৬০ সালের রোম অলিম্পিকে, যেখানে তিনি ফাইনালে ৪০০ মিটার দৌড়ে চতুর্থ স্থান অর্জন করেছিলেন। তিনি ১৯৫৬ এবং ১৯৬৪ সালের অলিম্পিকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ১৯৫৯ সালে মিলখা সিং-কে পদ্মশ্রী সম্মানে সম্মানিত করা হয়।
মিলখা সিংয়ের প্রয়াণে শোকাহত সমগ্র দেশ এবং গভীর শোকপ্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, আমরা একজন ‘খুব বড়’ ক্রীড়াবিদকে হারালাম।
মোদী টুইট করে বলেছেন, “মিলখা সিং জির প্রয়াণে আমরা এমন এক সেরা ক্রীড়াবিদকে হারালাম, যিনি অসংখ্য ভারতীয়দের হৃদয়ে বিশেষ স্থান নিয়েছিলেন। তার মৃত্যুতে আমি আহত হয়েছি। আমি কয়েকদিন আগে মিঃ মিলখা সিং জির সঙ্গে কথা বলেছি। আমি জানতাম না এটাই আমাদের শেষ কথা হবে। অনেক উদীয়মান খেলোয়াড় তার জীবন থেকে অনুপ্রেরণা পাবেন। তাঁর পরিবার এবং বিশ্বজুড়ে তাঁর প্রশংসকদের প্রতি আমার সমবেদনা।”
স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (SAI) টুইট করে বলেছে, ‘কমনওয়েলথ গেমস এবং এশিয়ান গেমসের স্বর্ণপদক বিজয়ী মিলখা সিং-এর ৪০০ মিটারের জাতীয় রেকর্ডটি ৩৮ বছর ধরে ছিল। তাঁর পরিবার এবং লক্ষ লক্ষ ব্যক্তির প্রতি সমবেদনা যাদেরকে উনি অনুপ্রাণিত করেছিলেন।’