দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দির এক মাতৃসাধকের সাধনক্ষেত্র। তাঁর সিদ্ধিলাভের পুণ্যভূমি। এখানেই মাতৃসাধক গদাধর চট্টোপাধ্যায় দেবী জগদীশ্বরী ভবতারিণীর কৃপায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন যুগাবতার শ্রী রামকৃষ্ণ রূপে। দেবীর মাহাত্ম্যে পরবর্তী সময়ে রামকৃষ্ণদেবের এই সাধনক্ষেত্র পরিণত হয় তীর্থক্ষেত্রে।

আজ দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের ১৬৬ তম প্রতিষ্ঠা দিবস।কথিত রয়েছে, দেবী কালীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রানি রাসমণি। তিনি ছিলেন ধনী জমিদার বাড়ির গৃহবধূ।১৮৪৭ সালে রানি রাসমণি মনস্থির করেন দেবী অন্নপূর্ণার পূজো দিতে কাশীধামে তীর্থযাত্রা করবেন। ২৪টি নৌকায় আত্মীয়স্বজন, দাসদাসী এবং রসদ নিয়ে তীর্থযাত্রার আয়োজন করেন তিনি । কিংবদন্তি অনুসারে, তীর্থযাত্রার পূর্বরাত্রে দেবী কালীর স্বপ্নাদেশ পান রানি রাসমণি। দেবী তাকে স্বপ্নাদেশে বলেন, কাশী যাওয়ার প্রয়োজন নেই, গঙ্গাতীরেই মন্দির প্রতিষ্ঠা করে পূজোর সূচনা করতে। সেই মূর্তিতে তিনি স্বয়ং আবির্ভূত হয়ে পূজো গ্রহণ করবেন।

এই স্বপ্নাদেশের পরেই রানি দেবীর নির্দেশ মতো গঙ্গাতীরে জমি ক্রয় করেন এবং মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু করেন। ১৮৪৭ সালে এই বিশালাকার মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু হয়, এই নয়নাভিরামমন্দিরের নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৮৫৫ সালে।
তথ্য অনুযায়ী মন্দির নির্মাণের জন্য ২০ একর জমি জন হেস্টি নামে এক ইংরেজের কাছ থেকে কেনা হয়েছিল। স্থানীয় মানুষজনের কাছে জায়গাটি সাহেবান বাগিচা নামে পরিচিত ছিল। জায়গাটির একটি অংশ ছিল কচ্ছপাকৃতি মুসলমানদের গোরস্থান। তাই তন্ত্রমতে স্থানটি শক্তি উপাসনার জন্য উপযুক্ত বলে মনে করা হয়। আটবছর ধরে প্রায় নয় লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় এই নয়নাভিরাম মন্দিরটি। ১৮৫৫ সালের ৩১ মে স্নানযাত্রার পুণ্য দিবসে মহা ধুমধাম সহকারে মন্দিরে মূর্তিপ্রতিষ্ঠা করা হয়।

দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির চত্বরে কালীমন্দির ছাড়াও একাধিক দেবদেবীর মন্দির অবস্থিত রয়েছে। মূল মন্দিরটি হল নবরত্ন মন্দির। মূল মন্দির ছাড়াও রয়েছে ১২টি আটচালা শিবমন্দির,যা “দ্বাদশ শিবমন্দির” নামে পরিচিত। মন্দিরের উত্তরে রয়েছে রাধাকৃষ্ণ মন্দির যা “শ্রীশ্রীরাধাকান্ত মন্দির” নামে পরিচিত এবং দক্ষিণে রয়েছে নাটমন্দির। এছাড়াও মন্দির চত্বরের উত্তর-পশ্চিম কোণে রয়েছে রামকৃষ্ণদেবের বাসগৃহ।
দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরের মাহাত্ম্য সর্বজন বিদিত।পুণ্যার্থীদের কাছে দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরের মাহাত্ম্য এতখানি যে তা মহাতীর্থ রূপে বিবেচিত হয়।