রূপম দত্ত: কিছুদিন আগেই পুরুলিয়ায় শৌচাগার লোহার দরজা ভেঙ্গে পড়ায় মৃত্যু হয় এক স্কুল ছাত্রের। তার কিছুদিন আগেই আবার মালদায় ও মুর্শিদাবাদে ঘটে একই রকমের ঘটনা। এবার তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আবারো ঘটতে চলেছিল এমনই ঘটনা, পুরুলিয়ার পারাবেলিয়া কোলিয়ারি হাইস্কুলে।
সোমবার ১৪ নভেম্বর সকালে পারাবেলিয়া কোলিয়ারি হাইস্কুলের গেট খুলে দেখা যায় ছাদ থেকে ভেঙে পড়া চাঙড়। স্কুলের দোতালার বারান্দার যেদিক দিয়ে শৌচালয়ে যাতায়ত করত ছাত্ররা সেখানের ছাদই ভেঙে পড়ে নিচে। ঘটনার সময় স্কুল বন্ধ থাকায় বড়োসড়ো দুর্ঘটনা এড়ানো গেলেও আতঙ্কে রয়েছে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা।
কিছুদিন আগেই শুক্রবার পুরুলিয়ার আদ্রার শ্যামসুন্দর গ্রামে ৯ বছর বয়সী মণিন্দ্র চিত্রকরের মৃত্যু হয় শৌচাগারের লোহার দরজা ভেঙে। বিদ্যালয় চত্বরে খেলার সময় শৌচাগারের দরজা ধরে ঝুলতে গিয়ে হঠাৎই তা ভেঙে ঘটে এই বিপত্তি। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত বলে ঘোষনা করেন। ঘটনার খোঁজ পেতেই বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেন রঘুনাথপুর ১ নম্বর ব্লকের বিডিও, এসডিপিও এবং বিদ্যালয় পরিদর্শক, আদ্রা থানার আইসি ও দুর্ঘটনা স্থল পরিদর্শন ও করেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার ১০ নভেম্বর মালদায় ঘটে এরকম আরেক মর্মান্তিক ঘটনা। মোথাবাড়ি থানা এলাকায় অবস্থিত বাঙ্গিটোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের দেওয়াল ভেঙ্গে মৃত্যু হয় একাদশ শ্রেণীর ছাত্র জিসান শেখের। এই ঘটনার তদন্তে পাঁচ জনের ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং’ টিম গঠনের নির্দেশ দেন মালদার জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া। ক্ষুদ্ধ জনতা ভাঙচুরও চালায় স্কুলে। এর ঠিক পরের দিন ১১ তারিখ মুর্শিদাবাদের একটি স্কুলে সিলিং ফ্যান ভেঙে পড়ায় আহত হন দুই শিক্ষার্থী।
পরপর একই ধরণের ঘটনা বারবার ঘটায় প্রশ্ন উঠছে স্কুল পরিকাঠামো ও তার রক্ষনাবেক্ষণা নিয়ে। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ দেবাশীষ সরকার বলেন,“কোনও বাড়ির সন্তান চলে গেল। আমরা সবাই সমালোচনা করব, কিন্তু যাঁদের বাড়ির সন্তান চলে গেল, তাঁদের ক্ষতি কেউ কোনওদিন পূরণ করতে পারবে না। কেন এই ঘটনা ঘটছে? স্বাভাবিকভাবেই সরকারি ব্যবস্থাপনার মধ্যে চলার পরিকাঠামো, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে ধরনের অনুদান, যে ধরনের নজরদারি থাকা দরকার, সেই জায়গায় নিশ্চিতভাবে একটি ধারাবাহিক ঘাটতি কাজ করছে। নাহলে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে কেন?” তাঁর আরও বক্তব্য, “দুই বছর বন্ধ থাকার পর স্কুলবাড়িগুলিকে ন্যূনতম পরিচ্ছন্ন করে ক্লাসরুমের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে খরচ হবে। তার জন্য অনুদান আসা দরকার। কিন্তু সেই সময় গণমাধ্যমে আমরা দেখেছিলাম, সেই কান্না থেকেই গিয়েছে। স্কুল ব্যবস্থার যে পরিকাঠামো রয়েছে, সেখানে কেন বার বার এই ঘটনা ঘটছে, তা ভাবা দরকার। রাজ্যজুড়ে স্কুলগুলির নজরদারি হওয়া দরকার যাতে আগামী দিনে এই ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে।”