কৌশিকি মজুমদার: শীত ঋতুই মানে আমাদের মন বেড়াতে যাওয়ার জন্য উদ্বেগ হয়ে পড়ে । ভ্রমণ প্রিয় বাঙালির ঘুরতে যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় না থাকলেও শীত যেন বাঙালির ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছেটাকে এক অন্য মাত্রা এনে দেয় । সারা বছর যেমনই হোক না কেন অক্টোবর থেকেই যেন প্রকৃতি ঘোরার মনোরম এক পরিবেশ তুলে দেয় আমাদেরকে। বাঙালির মন যে সর্বদাই ভ্রমণ ভ্রমণাকাঙ্খিত সেই ভ্রমন পিপাসু মানুষদের জন্যই রয়েছে আমাদের রাজ্যের অনেক দর্শনীয় স্থান। পশ্চিমবঙ্গের এমন বেশকিছু জনপ্রিয় ভ্রমণ মূলক স্থান রয়েছে । যেখানে এই শীতে একবার অন্তত ঘুরে আসতেই হবে সেই অঞ্চলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
এই শীতে আপনার বাড়ির আশেপাশে যেসব অঞ্চলে খুব সহজেই ঘুরে আসা যায়।
শৈল শহরের রানী দার্জিলিং আর ভূ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবুজে ঘেরা পাহাড় চা ও মনোরম পরিবেশের জন্য বিখ্যাত ।এই শীত ঋতুই বাঙালির দার্জিলিং ভ্রমণের শ্রেষ্ঠ সময় ।মোহময় সৌন্দর্য আর মায়াবী আকর্ষণের সম্পূর্ণ সাধ উপভোগ করার। দার্জিলিংয়ের অন্যতম আকর্ষণ toy train যা অধিকাংশ ডিজেল ইঞ্জিন তবে কিছু পুরনো স্টিম ইঞ্জিনের ট্রেনে চলে, তাতে চেপে মেঘের চাদরে আবরণ সরাতে সরাতে পাড়ি দেওয়া যায় এক ঐতিহ্যময়ী অদ্ভুতযাত্রায়।
বাঙালির মন বরাবরই টানে আমাদের কবিগুরুর নিজের হাতে তৈরি করা শান্তিনিকেতনে। শান্তিনিকেতনে রয়েছে এক অদ্ভুত মায়াবী পরিবেশ যা শহরের জীবনযাত্রা তে তৈরি মানসিক অবসাদ কে কাটিয়ে মন হয়ে ওঠে প্রাণোচ্ছল। বিভিন্ন বিখ্যাত শিল্পীর শিল্পকর্মে সুসজ্জিত হয়ে এটি একটি শ্রেষ্ঠ পর্যটন স্থান ভ্রমণপিপাসী বাঙ্গালীদের জন্য। বিভিন্ন প্রাদেশিক নৃত্য কুটির শিল্প, হস্তশিল্পের পাশাপাশি লোকসংগীত এর জন্য বিখ্যাত এই শান্তির নিকেতন ।সকালের কাচঘরের প্রার্থনা রবীন্দ্রভবন ,সোনাঝুরি হাট ,কোপাই নদী এইসব ঐতিহ্য ও অনুষ্ঠান বাঙ্গালীর মনকে করে দেবে চাঙ্গা ।শান্তিনিকেতনের বেশ কিছু জায়গা ফটো তোলা নিষিদ্ধ সেই দিকে সতর্ক থাকা আবশ্যক।
নির্জনতা প্রিয় ভ্রমণপিপাসুরা বকাখালি সমুদ্র সৈকত ও লাল কাঁকড়ার জন্য পছন্দ করেন। বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী বকখালীতে রয়েছে ম্যানগ্রোভ বন এবং উন্মুক্ত চিড়িয়াখানা। অপূর্ব সুন্দর সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের জন্য বকখালীর সমুদ্র সৈকতটি হল বিখ্যাত বিশ্রাম নেওয়ার জন্য একটি আদর্শ স্থান বাঙালির । জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হেটেও হেনরি আইল্যান্ডে যেতে পারবেন ।এই সমুদ্র সৈকতে একই সরলরেখায় মনমুগ্ধকর দৃশ্য ও সবুজ ম্যানগ্রোভ এক অভূত দৃষ্টি নন্দন সৃষ্টি করে যা স্থানটিকে হয়তো মায়াবী স্নিগ্ধতা প্রদান করে।
গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত একটি ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক গন্তব্য হলো মায়াপুর। বাঙালি তথা শ্রীকৃষ্ণের অনুগামীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বিখ্যাত তীর্থক্ষেত্র এটি ।মায়াপুরে রয়েছে অতীব সুন্দর মুগ্ধময়ী ইসকন মন্দির এবং মন্দির নির্মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সমবেত প্রার্থনা ও ধ্যানের জন্য একটি প্রেক্ষাগৃহ। এটি গঙ্গা নদীর সঙ্গমস্থল যেখানে পূণ্য স্নানের জন্য ঘুরে আসতে পারেন। তাছাড়াও এখানে একটা দিন খুব অনায়াসে কাটিয়ে আসতে পারেন সেখানকার গোশালা এবং ময়ূরের সমাগম দেখার জন্য। নৌকায় করে গঙ্গার শান্ত স্রোতের আস্বাদন করতে পারবেন যেটি এই স্থানটি হয়ে ওঠে অনন্য।
শীতের শুরুতে ডুয়ার্স মানেই ভ্রমণ বিলাসীদের ছুটে আসা ।পাহাড় ও জঙ্গলের এক অভূত মিলনস্থল যা সর্বদাই পর্যটকদের মুগ্ধ করে তোলে এই ডুয়ার্স। পাহাড় বা সমুদ্রে ঘুরে আসা হয়ে গেলে বঙ্গবাসীদের এক অভূত সৌন্দর্য উপভোগ করতে একবার তো যাওয়া চলেই এখানে ।সবুজ ঘেরা দিগন্ত বিস্তৃত অরণ্যভূমি হল এই স্থান। সবমিলিয়ে দুর্দান্ত ঘোরার জায়গা এটি।