Friday, April 19, 2024

Afghanistan: তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তান এখন চীন ও পাকিস্তানের নতুন খেলার ময়দান

দীপংকর সাহা: আমাদের একথা স্বীকার করতেই হবে যে তালেবানদের বিজয়ে সব থেকে বেশি লাভবান হয়েছে পাকিস্তান। ২০ বছর পর আফগানিস্তানে (Afghanistan) তালেবানের ক্ষমতা দখলের এই সাফল‌্যের পিছনে সব থেকে বড় ভূমিকা আছে পাকিস্তানের। পাকিস্তানে তালেবানদের আশ্রয় দেওয়া, ISI এর গোয়েন্দা তত্ত্ব তালেবানকে সরবরাহ করা ও পাকিস্তানের সার্বিক সমর্থন ছাড়া তালেবান কখনই ক্ষমতা দখল করতে সমর্থ হত না। তবে তালেবান পাকিস্তানের উপর কতটা কৃতজ্ঞ হবে তা দেখার বিষয়। কিন্তু পাকিস্তান (Pakistan) তালেবানের জন্য যা করেছে তা পাকিস্তান নিজের স্বার্থেই করেছে । তালেবানকে সাহায্য করার পাকিস্তানের কৌশল আফগানিস্তানে ক্রমবর্ধমান ভারতের প্রভাব বৃদ্ধির থেকেই উদ্ভূত।

পাকিস্তানের প্রধান আশঙ্কা ছিল ভারতের সাথে আফগান জোট, আফগানিস্তানে ভারতের উন্নয়ন প্রকল্প এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বালোচ বিদ্রোহীদের মদত ও ‘র’ এর বিশাল নেটোয়ার্ক বিল্ডআপ। আফগানিস্তানে ভারতের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ফলে আফগান জনগনের উপর ভারতের প্রভাব তৈরি হয়। আফগান ক্রিকেট উন্নয়নে ভারতের বিপুল সাহায‌্য, আফগান ছাত্রদের ভারতে পড়ার বৃত্তি প্রদান আফগানদের মনে ভারতের প্রতি ভালো ধারনার জন্ম দেয়। পাকিস্তান কখনই এগুলো সহজ মনে নেয়নি। ভারত ও তালেবানের সম্পর্ক বর্তমানে ভালো নয় এবং তাদের সাথে মিত্রতার সম্ভাবনা খুবই কম। অপর দিকে চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের শক্তিশালী জোট, যা ২০ বছর আগের চেয়ে অনেক বেশি সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী। পাকিস্তান আশা করছে আফগানিস্তানে চীন বিপুল পরিমান বিনিয়োগ করবে। চীনের এই বিনিয়োগ তালেবান সরকার পাকিস্তানি স্বার্থের পক্ষে কাজ করবে। পাকিস্তান তাই তালেবানদের বিজয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী।

আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ‌্যে একটি জটিল ইতিহাস আছে সেটা হল সীমান্ত সমস‌্যা। গত কয়েক বছর ধরে আফগান -পাকিস্তান শত্রুতার প্রধান কারণ এই সীমান্ত সমস‌্যা। ১৮৯০-এর দশকে, ব্রিটিশরা আফগানিস্তান এবং ভারতীয় সাম্রাজ‌্যের মধ্যে একটি সীমানা তৈরি করেছিল। যা “ডুরান্ড লাইন” নামে পরিচিত ।

আফগানিস্তান এই সীমান্তকে কখনো গ্রহণ করেনি। ১৯৪৭ সালে যখন ব্রিটিশ রাজের অবসান ঘটে, পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসাবে স্বকৃতি পায় তখন আফগান সরকার প্রাথমিকভাবে পাকিস্তানের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে। এই অস্বীকারের কারন ছিল ডুরাণ্ড লাইন। আফগানিস্তানের দাবি ছিল পাকিস্তান ডুরান্ড লাইন ভুলে পাকিস্তানকে তার পশতুন অঞ্চলগুলো যে অঞ্চলগুলি আফগানিস্তান দাবি করে সেগুলি আফগানিস্তানের কাছে হস্তান্তর করতে হবে । পাকিস্তান অস্বীকার করে।

ফলে, আফগান সরকার ডুরান্ড লাইনকে আইনি সীমানা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বরাবরই অস্বীকার করে। পাকিস্তানের পশতুন জাতি যারা আফগানিস্তান থেকে ডুরাণ্ড লাইন টানায় আলাদা হয়ে পড়ে, আফগানিস্তান এই জনগোষ্ঠীকে বিচ্ছিন্নতাবাদে সব সময় মদত দিয়ে এসেছে। জবাবে, প্রায় বহু বছর ধরে পাকিস্তান আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে তালেবানের বিদ্রোহকে সমর্থন দিয়ে আফগানিস্তানকে প্রভাবিত বা দুর্বল করার চেষ্টা করে গেছে ।

এটাই ছিল আফগান তালেবানের (Taliban) জন্য পাকিস্তানি আশ্রয়ের মূল কারণ। মজার বিষয় হল আফগান মুজাহিদিন নেতৃত্ববৃন্দ এবং আফগান তালেবান উভয়ই স্পষ্টভাবে ডুরান্ড লাইনকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে এসেছে ।

১৯৮০ এর দশক থেকে আফগানিস্তান সম্পর্কে পাকিস্তানের আর একটি আশঙ্কার কারণ হল আফগান শরণার্থী। আশির দশকের আফগান যুদ্ধের সময়, প্রায় ত্রিশ লাখের বেশি পশতুন শরণার্থী পাকিস্তানে পালিয়ে যায়। এই শরণার্থী শিবিরগুলো প্রথমে মুজাহিদিনদের জন্য, তারপর তালেবানদের জন্য মানবশক্তি অর্থাৎ তালেবান যোদ্ধা সরবরাহের প্রধান ক্ষেত্র হয়ে ওঠে। তালেবান ক্ষমতা দখল করায় পাকিস্তান আশা করছে এই শরনার্থী দের তালেবান ফেরত নেবে।

পাকিস্তানের আফগান তালেবানকে সাহায্য করার অন্য কারণটি হল তালেবান পাকিস্তানের অভ্যন্তরে পশতু ইসলামপন্থী বিদ্রোহকে সমর্থন করবে না। অবশ্য আজ পর্যন্ত তারা তা করেনি এবং ভবিষ্যতে যাতে না করে তা নিশ্চিত করা পাকিস্তানের কৌশলের কেন্দ্রবিন্দু ।

পাকিস্তান আশা করছে চীনের বিশাল অর্থনৈতিক শক্তির দ্বারা পাকিস্তান তার আফগান লক্ষ্যে সাহায্য পেতে পারে। বেইজিংয়ের প্রধান উদ্বেগের বিষয় হল আফগানিস্তান চীনের বিরুদ্ধে উইঘুর বিদ্রোহীদের ঘাঁটি যাতে না হয় । যাইহোক, চীন আফগানিস্তানে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ চীনের লক্ষ‌্য আফগানিস্তানের আয়নেকের একটি বিশাল তামার খনি এবং দেশের উত্তরে তেল ও গ্যাসের মজুদ।

চীনের তামা রপ্তানির জন্য নতুন পরিবহন সংযোগের প্রয়োজন হবে। ফলে চীন আফগানিস্তানকে পাকিস্তানের পরিবহন নেটওয়ার্ক অর্থাৎ চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) এর সাথে সংযুক্ত করতে চাইবে।

যাইহোক আফগানিস্তানকে নিয়ে চীন ও পাকিস্তানের এই বিপুল পরিকল্পনা কতটা সফল হয়। তবে ভারত যে খেলোয়ার হিসাবে বসে থাকবে না তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে মধ‌্য এশিয়ার এই গ্রেট গেমে কে জেতে তা সময়ই বলবে।

আরও পড়ুন

আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল তালেবানের, কী কী প্রভাব পড়বে ভারতের উপর?

নারীদের প্রতি কোনও বৈষম্য থাকবে না, দাবি তালিবানের

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Stay Connected

3,541FansLike
3,210FollowersFollow
2,141FollowersFollow
2,034SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles