Saturday, September 7, 2024
More

    Jaliyanwalabag full story: জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড, একটি পরিকল্পিত জেনোসাইড

    রিন্টু ব্রহ্ম

    ১৯১৯-এর ১৩ এপ্রিল। ‘ফায়ার’।এই একটা নির্দেশে পাঞ্জাবের মাটিতে কয়েক মিনিটেই লুটিয়ে পড়েছিল হাজার হাজার গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত দেহ। সেই দেওয়ালে গুলির দাগ আর রক্তের চিহ্ন এখনও স্পষ্ট। আজও সেখানে কান পাতলে শোনা যায় হাজার নিরস্ত্র, নিরীহ, সাধারণ মানুষের আর্তনাদ। আশা করি বুঝতেই পারছেন কোন ঘটনার কথা বলছি। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। জালিয়ানওয়ালাবাগ(Jaliyanwalabag incident) হত্যাকাণ্ড। একটি পরিকল্পিত জেনোসাইড। চলুন আজ বরং সেই ইতিহাসেরই পাতা উল্টানো যাক, বলা যাক সেই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের কথা। যে ঘটনা আমাদের স্বাধীনতা পাওয়ার লড়াইকে করে তুলে ছিল আরও তীব্র। জন্ম দিয়েছিল একের পর এক দেশপ্রেমিক, স্বাধীনতা সংগ্রামীর।

    jaliyanwalabag incident in bengali graphics image
    jaliyanwalabag incident in bengali – ছবিতে জেনারেল ডায়ার

    বিশ্বজুড়ে যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ডঙ্কা বেজেছে ব্রিটিশরা তখন পরাধীন ভারতকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়ে ভারতীয়দের নিয়ে তৈরি করেছে বিশাল সৈন্য বল। এই ভারতীয় সৈনিকদের উপর ভিত্তি করেই ব্রিটিশরা বিশ্বযুদ্ধের জয়ের পটভূমি তৈরি করে নেয়। যুদ্ধ জয়ের পর ভারতীয়দের স্বায়ত্তশাসন প্রদানের কথা বললেও যেমন কথা তেমন কাজ তারা করেননি। ১১ নভেম্বর, ১৯১৮ সালে যুদ্ধ শেষ হয়। কিন্তু ইংরেজ সরকারের নীতিতে কোন রকম পরিবর্তন দেখা যায়নি। যেসব সৈন্য যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল এসময় তাদের বেকার করে পাঠিয়ে দেওয়া নিজেদের গ্রামে হয়। দেখা দেয় অর্থনৈতিক মন্দা এবং দুর্ভিক্ষ । ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারিতে এক কোটির বেশি মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হয়। যা থেকে ভারতবাসীর মনে ক্ষোভ এবং ইংরেজ বিরোধী মনোভাবের সূচনা ঘটে। প্রতিবাদে দেশজুড়ে চলতে থাকে একের পর এক আন্দোলন। ফলত, তারা ভারতের স্বাধীনতা তো দূর, পরাধীনতাকেই আরও মোটা শিকলে বাঁধতে থাকে একের পর এক আইন বানিয়ে।

    jaliyanwalabag incident photo
    জালিয়ান ওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থল ও বর্তমানে দেখা যাচ্ছে দেওয়ালের গুলির দাগ

    ঠিক এরকমই একটা সময় ব্রিটিশরা ভারতে লাগু করে, রাওলাট আইন। সালটা ১৯১৯। এই আইনের বলে ব্রিটিশ সরকার ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী হোক বা সাধারণ কোনও ভারতীয়কেই শুধুমাত্র সন্দেহের বশে গ্রেপ্তার করতে পারে। এমনকি প্রয়োজন নেই আদালতে পেশ করারও। প্রমাণ ছাড়া বিনা বিচারে আটকে রাখতে পারে টানা ২ বছর। এই আইনের খবর শুনেই আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ভারতীয়রা। এই আইনের বিরুদ্ধে মহাত্মা গান্ধীর একের পর এক আন্দোলন তখন ব্রিটিশ সরকারের ভিত নরিয়ে দেয়। ততদিনে সুরাট অধিবেশনে কংগ্রেস নরমপন্থী আর চরমপন্থী দুই দলে বিভক্ত হয়ে যায়। আস্তে আস্তে সশস্ত্র এবং নিরস্ত্র দুভাবেই তীব্র হয়ে ওঠে স্বাধীনতা সংগ্রাম।

     

    এই বছরেরই এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে পাঞ্জাব যাওয়ার পথে গান্ধীজিকে গ্রেফতার করা হয়। তার মুক্তির দাবিতে পাঞ্জাবের আন্দোলন আস্তে আস্তে হিংসাত্মক রূপ নিতে থাকে। ধর্মঘটে এবং বিক্ষোভের লক্ষ্য হয়ে দাড়ায় সরকারি দপ্তর এবং যানবাহন ও ব্রিটিশ নাগরিকরা। সেই সময় পাঞ্জাবের দুই পরিচিত সংগ্রামী মুখ সত্যপাল এবং সাইফুদ্দিন কিচলুকে ব্রিটিশরা এই রাওলাট আইনকে কাজে লাগিয়ে জেল বন্দি করে। প্রতিবাদে এই দুই স্বাধীনতা সংগ্রামীকে মুক্ত করার দাবিতে প্রায় সমগ্র পঞ্জাব মরিয়া হয়ে ওঠে। অসংখ্যা স্বাধীনতাপন্থীরা ১২ এপ্রিল হিন্দু কলেজে একত্রিত হন। সিদ্ধান্ত নেন ঠিক পরের দিন অর্থাৎ ১৩ এপ্রিল তারা পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগ(Jaliyanwalabag incident) মাঠে বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ জমায়েত করবেন। এবং ব্রিটিশদের রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে ও সত্যপাল আর সইফুদ্দিনের মুক্তির দাবিতে একটি নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ মিছিল করবেন। স্ফুলিঙ্গের সঙ্গে ছড়াতে থাকে বিপ্লবের আগুন। ব্রিটিশদের কানে এখবর পৌঁছে যায় খুব তাড়াতাড়ি। ব্রিটিশ মিলিটারি জেনারেল রেগিনাল্ড ডায়ার এই জমায়েতের খবর শুনে রাগে ফেটে পরেন। ঐদিনই সমগ্র পাঞ্জাব জুড়ে কার্ফু জারি করে দেন তিনি। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি। সেদিন সকাল থেকেই জালিয়ানওয়ালাবাগ(Jaliyanwalabag incident) মাঠে এক এক করে জড়ো হতে থাকেন ভারতীয়রা।

    এই পরিস্থিতিতে জেনারেল ডায়ার সকাল ন’টা নাগাদ হেলিকপ্টার নিয়ে টহল দেন জালিয়ানওয়ালাবাগ মাঠে। তখন মাত্র কয়েকশ লোকের ভিড় সেখানে। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে মানুষের ঢল। দুপুর তিনটে নাগাদ মাঠ ভরে যায় প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার নিরস্ত্র লোকের জমায়েতে। জেনারেল ডায়ারের কানে এখবর পৌঁছাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তিনি। সৈন্য বাহিনী, লি-এনফিল্ড বন্দুক, গুলি বারুদ সঙ্গে নিয়ে তিনি রওনা দেন জালিয়ানওয়ালাবাগের দিকে। এই মাঠটি ছিল চারিদিকে উঁচু উঁচু দেওয়াল দিয়ে ঘেরা। এখানে প্রবেশের জন্য ছিল একটি দরজা আর বেরোনোর জন্য আরও একটি। আর গোটা মাঠের মধ্যে ছিল একটা বড় কুয়ো। ডায়ার সেখানে পৌঁছেই বেরোনোর প্রত্যেকটি দরজায় তার সৈন্য মোতায়েন করে দেন এবং নির্দেশ দেন এই নিরস্ত্র মানুষগুলির উপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করতে। মহিলা, শিশু সহ হাজার হাজার মানুষের উপর মিনিট খানেক ধরে প্রায় ১৬৫০ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে ব্রিটিশ অধীনস্থ সৈনিকরা। সেদিন ব্রিটিশদের ওই গুলি ততক্ষণ থামেনি যতক্ষণনা তা শেষ হয়েছিল। পালাবার পথ না পেয়ে জীবন বাঁচাতে বহু মানুষ ঝাঁপ দেন কুয়োতে। কিন্তু কুয়োতেও পাথর ফেলে হত্যা করা হয় তাঁদের। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডই ইতিহাসের পাতায় নামাঙ্কিত হয়েছে জালিয়ানওয়ালাবাগ(Jaliyanwalabag incident) হত্যাকাণ্ড নামে।

    জালিয়ানওয়ালাবাগের ভয়ানক ও মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ব্রিটিশ শাসনের প্রকৃত নগ্ন রূপের প্রকাশ হয়। সরকার জেনারেল ডায়ারের কাজকে সমর্থন করে। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গোটা বিশ্ব শিহরিত হয়ে ওঠে। দেশে-বিদেশে সর্বত্র ব্রিটিশ সরকারের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে দেশের সর্বত্র ঘৃণা ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। আর ব্রিটিশ শাসনের এই বর্বরতা ভারতের বুকে জন্ম দিয়েছিল ভগৎ সিং, উধম সিং, চন্দ্র শেখর আজাদের মত অসংখ্য দুর্বার স্বাধীনতা সংগ্রামীর। এই ঘটনার পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রিটিশদের থেকে পাওয়া তার নাইট উপাধি ত্যাগ করেন।

     

    দিল্লির হাকিম আজমল খান তাঁর ‘মসিহ-উল-মূলক’ উপাধি এবং প্রথম শ্রেণীর ‘কাইসার-ই-হিন্দ’ স্বর্ণ মেডেল ব্রিটিশ সরকারকে ফেরত দেন। মহাত্মা গান্ধি শুরু করেন সত্যাগ্রহ আন্দোলন। নড়ে চড়ে বসে ব্রিটিশ সরকার। তারা এই ঘটনার তদন্ত করতে গঠন করে হান্টার কমিশন। কমিশনের রিপোর্টে দাবি করা হয়, জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল মাত্র তিন থেকে চারশ। যেখানে পরবর্তী কালে এই মৃত্যুর সংখ্যা জানা যায় কয়েক হাজার। আহতও হন কয়েক হাজার। তবে জেনারেল ডায়ারকে তার পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এবং ফেরত পাঠানো হয় ব্রিটেন। দুই দিন পরে, ১৫ এপ্রিল গুজরানওয়ালায় বিক্ষোভ সংঘটিত হয় অমৃতসর তথা জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ পদক্ষেপ নেওয়ায় ফের ১২ জন মারা যায়, ২৭ জন আহত হয়। পরবর্তীকালে ভারত স্বাধীন হওয়ার বহু বছর পর রাণী এলিজাবেথ জালিয়ানওয়ালাবাগ পরিদর্শন করেন ও দুঃখ প্রকাশ করেন।

    Read more History of Emergency: ৪৬ বছর আগে ভারতে কোন পরিস্থিতিতে জারি হয়েছিল জরুরি অবস্থা? জেনে নিন

    Reference  Links – https://www.youtube.com/watch?v=NRaCW7VPQeA

    https://en.wikipedia.org/wiki/Jallianwala_Bagh_massacre

    https://www.britannica.com/event/Jallianwala-Bagh-Massacre

    https://www.hindustantimes.com/india-news/jallianwala-bagh-massacre-a-look-back-at-the-horrific-tragedy-after-104-years-101681350564816.html

    Rintu Brahma
    Rintu Brahmahttp://www.bonglifeandmore.com
    With over six years of dedicated journalism experience, Rintu Brahma joined the role of Bengali Content Specialist at Inshort medialabs private limited after serving as a reporter at Sangbad Pratidin. Armed with a Master's degree in Mass Communication from The University of Burdwan, Mr. Rintu Brahma bring a deep understanding of media dynamics to work. From 2 years He have embarked on a new journey with Bonglifeandmore.com, where his aim to cover and report verious newses and take the editorial decisons.

    Related Articles

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here

    This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

    Stay Connected

    3,541FansLike
    3,210FollowersFollow
    2,141FollowersFollow
    2,034SubscribersSubscribe
    - Advertisement -

    Latest Articles