রিন্টু ব্রহ্ম
How to Join NSG: মনে পড়ে ২০০৮ সালে ২৬/১১-তে মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসবাদী হালমার ঘটনা ! যখন একদল সন্ত্রাসবাদী হাতে AK47 মেশিনগান, হ্যান্ড গ্রেনেড সহ অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করছিল নিরীহ নাগরিকদের। মৃত্যু উপত্যকা বানিয়েছিল ‘City of Dreams’-কে। যাদের রুখতে হিমশিম খাচ্ছিল মুম্বাই পুলিশ। যখন সন্ত্রাসবাদীদের দমন করতে একে একে বন্ধ হচ্ছিল সব পথ। তখন ‘মশিহা’ হয়ে এসেছিল জঙ্গিদের যম। ‘চুন চুন কে’ খতম করেছিল বন্দুকবাজদের। এরকমই কঠিন পরিস্থিতিতে জঙ্গি হামলা কিংবা দেশের আভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস থেকে দেশকে বাঁচাতে শেষ আশার নাম ‘NSG’। ভারতের ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড। কিন্তু কীভাবে জন্ম হয়েছিল NSG-র ? NSG কমান্ড হওয়ার যোগ্যতার মাপকাঠি কী ? কেমন হয় একজন NSG কমান্ডর জীবন ? চলুন আজ আমরা আলোচনা করব দেশের সেই ‘Zero Error Force’-এর বিষয়েই।
এককথায় সন্ত্রাসবাদ তথা দেশবাসীর সুরক্ষার স্বার্থে তৈরি হয়েছিল এই বিশেষ কমান্ডো রেজিমেন্ট “NSG” ওরফে ব্ল্যাক ক্যাট। বারবার সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ থেকে দেশকে বাঁচাতে ১৯৮৬-এ গঠিত হয় NSG। যাঁদের প্রধান স্লোগান হল ‘সর্বত্র সর্বোত্তম সুরক্ষা’ ।
আপনি কি জানেন NSG কমান্ডো কী করে হওয়া যায় ? ভারতীয় সশস্ত্র সেনা কিংবা পুলিশ বাহিনীর থেকে NSG-র সিলেকশন হয়ে থাকে। সেখান থেকে বাছাই করে নেওয়া হয় ‘রিয়েল সুপার হিরোদের’। ১৪ মাসের কঠোর শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমে সফল হলে সুযোগ দেওয়া হয় NSG-তে। কাঁচা ইস্পাত থেকে তাঁদের তৈরি করা হয় ‘লৌহ মানবে’। যারা সর্বদা প্রস্তুত হয়ে যায় যেকোনোও পরিস্থিতি মোকাবিলায়। প্রয়োজনে প্যারাগ্লাইডিং করে সুপারম্যানের মতো পৌঁছে যেতে পারে শত্রুর ডেরায়। আবার দড়ি ধরে দেওয়াল বেয়ে নিমেষে উঠে যেতে পারে ৩ থেকে ৪ তলার উঁচু বিল্ডিং-এ। যেই কাজে স্পাইডার ম্যানের থেকে কম নয়। বন্দুকের নিশানাতেও নির্ভুল। বন্দি করে রাখা সাধারণ নাগরিকের কানের পাশ থেকেও নিখুঁত নিশানায় জঙ্গিদের খতম করতেও মাহির এরা। NSG কামান্ডোদের গাড়ির চালকরাও ততটাই পারদর্শী। ডান-বাম দুই হাতেই স্টিয়ারিং ঘোরাতে সক্ষম শুধু তাই না প্রয়োজনে তীব্র গতিতে ব্যাক গিয়ারেও গাড়ি ছোটাতে সক্ষম ‘ফর্মুলা -১’ এর চালকদের মতো। ১৯৮৬ সাল থেকে NSG মোট ২৪টি কঠিন ও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মোকাবিলায় সফল হয়েছে। এর পাশাপাশি মোট ২২জন NSG কমান্ডার ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্মান গ্যালেন্টারি আওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন। যাদের মধ্যে অন্যতম সূর্যন সিং ভান্ডারী (কীর্তিচক্র), শহিদ মেজর সন্দীপ উন্নি কৃষ্ণান (অশোক চক্র) পেয়েছেন।
৬ জনের ইন্টারভেনশন টিম গঠন করে শুরু হয় ট্রেনিং। যেই টিমে প্রত্যেক সদস্যের কাছে কিছু না কিছু বিশেষ স্কিল থাকে। কারোর ওষুধ সম্পর্কে জ্ঞান, কেউ বন্দুকদের টেকনলেজি সম্পর্কে পারদর্শী হয়ে থাকে। তাঁদের উঁচু থেকে লাফ দেওয়া, দৌড়ানো, পাহাড় চড়া, জঙ্গল কিংবা জল যেকোনও জায়গার বাধা অতিক্রম করতে সক্ষম বানানো হয়। কখনও কখনও সারপ্রাইজ ট্যাস্কও দেওয়া হয়। যার মধ্যে টিয়ার গ্যাসের ঝাঁঝালো চোখে জ্বালা সহ্য করানোর ক্ষমতা বাড়ানো, স্নিপার ডগ সামলানোতেও পারদর্শী করানো হয় কমান্ডোদের। বাস্তব পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কাউন্টার হাইজ্যাক মক ড্রিল, ড্রোন ব্যবহার, ১ কিমি দূর থেকেও স্নাইপার বন্দুকে নির্ভুল নিশানা লাগানোতে মাহির করা হয়। এমনকি কঠিন পরিস্থিতিতে না ঘুমিয়ে টানা ৪৮ ঘণ্টার স্ট্রেস চ্যালেঞ্জে দেওয়া হয়। যাতে টানা লড়াই করে যাওয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি। মাথা ঠাণ্ডা রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলার সক্ষমতা দেখতে কমান্ডোদের ঢোকানো হয় গ্যাস চেম্বারেও। শেখানো হয় বম্ব ডিস্পোস করা। তারপর তৈরি হয় একজন ব্ল্যাক ক্যাট।
বিশেষ কিছু কমান্ডোকে যুদ্ধের কলাকৌশলীর প্রশিক্ষণ নিতে পাঠানো হয় ইসরাইল। ইসরাইল আরবান ওয়ারফেয়ারের জন্য বিশ্ব বিখ্যাত। শ্রেষ্ঠ এনএসজি কমান্ডোদের নিয়ে গঠন করা হয় ‘ফ্যানটম কমান্ডো টিম’। জানলে অবাক হবেন সম্পূর্ণ এনএসজি কমান্ডো গ্রুপের মধ্যে মাত্র ১ শতাংশ কমান্ডই ফ্যান্টম কমান্ডো রূপে নির্বাচিত হয়। একজন NSG কমান্ডো মোট ৩ থেকে ৫ বছরের জন্য দায়িত্বে থাকতে পারে। NSG-র নতুন কামান্ডো প্রসেনজিৎ তোমার ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ইন্ডিয়াকে একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, “শারীরিক পরীক্ষায় পাশ করেই NSG-তে যোগ দেওয়া সম্ভব হয়”।
NSG তৈরি হওয়ার পর থেকেই একের পর এক দুর্ধর্ষ পরিস্থিতির সাথে মোকাবিলা করে এসেছে। যাদের মধ্যে অন্যতম হলো অপারেশন ব্ল্যাক থান্ডার, অপারেশন ক্লাউড ব্রাস্ট, অপারেশন চক্র বুহ এবং অপারেশন ব্ল্যাক টর্নেডো। ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বাই শহর সহ তাজ হোটেলে শুরু হয় আতঙ্কবাদীদের হামলা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রথমে ডাক আসে মার্কোস কমান্ডোদের। ৮ জনের একটি মার্কস বাহিনী এই আতঙ্কবাদীদের ততক্ষণ দমিয়ে রাখে যতক্ষণ না এনএসজির কমান্ডোরা সেখানে হাজির না হয়। এনএসজি-র কাছে এটি ছিল একটি আরবান ওয়ার ফেয়ার। এই অপারেশনে এনএসজির লক্ষ্য ছিল আতঙ্কবাদীদের মারার পাশাপাশি সাধারণ মানুষদের উদ্ধার করা। তাই তারা এই অপারেশনের নাম রাখে ‘অপারেশন ব্ল্যাক টর্নেডো’। NSG কমান্ডোরা আসা মাত্রই তারা এক একটি ফ্লোর এবং এক একটি ঘরে রেইকি করা শুরু করে। এই সূত্রেই আতঙ্কবাদীদের সাথে এনএসজি কমান্ডোদের গোলাগুলি শুরু হয়। ৭২ ঘণ্টা পরে মুম্বাইকে জঙ্গি মুক্ত করতে সফল হয় NSG। এই অপারেশনে শহিদ হন NSG-র মেজর সন্দীপ উন্নি কৃষ্ণান। যার জীবনী নিয়ে ‘মেজর’ নামে একটি সিনেমাও নির্মিত হয়েছে। যা নেটফ্লিক্সে উপলব্ধ রয়েছে।
NSG ডিরেক্টর জেনারেল IPS M A গণপতি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ইন্ডিয়াকে একটি সাক্ষাৎকারে জানান, “NSG-র মূল কাজ যেকোনও ধরণের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা। যখন এমন কঠিন পরিস্থিতিতে সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় তখন NSG-কে শেষ আশা হিসাবে দেখা হয়”।
আবার IG ট্রেনিং সেন্টার NSG-র মেজর জেনারেল AK ভার্মা বলেন, ARMY ও সেন্ট্রাল পুলিশ থেকে NSG-তে ভর্তি করার জন্য এখানে বিশেষ ট্রেনিং দেওয়া হয়”।
Read more: Army Day : আজকের দিনটি সেনা দিবস হিসেবে পালন করা হয় কেন?
Reference – https://www.youtube.com/watch?v=4URAuBhT7Ck