কিছুদিন আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল, “কাকুলি ফার্নিচার”, বাদাম বিক্রেতার “কাঁচা বাদাম” গান। তবে এবার ভাইরাল “১১৭৬ হরে কৃষ্ণ” (Hare Krishna 1176)। কী এর অর্থ ? গত ডিসেম্বর মাস থেকেই ফেসবুকে অচমকায় দু-একজন নাকি ফেসবুকে লিখেছিলে, ১১৭৬ হরে কৃষ্ণ। তারপর থেকেই সেই তালে তাল মেলাতে থাকেন নেটিজেনরা। সকলেই পোস্ট শুরু করেন “১১৭৬ হরে কৃষ্ণ”। কেউ কেউ দাবি করেন, এই ১১৭৬ বাংলা নম্বরের সঙ্গে হরে কৃষ্ণ লিখে পোস্ট করলেই নাকি পূরণ হচ্ছে মনের ইচ্ছে। একদম ম্যাজিক্যাল নম্বর। সমস্ত সুখ হাসিল করার ৪ ডিজিটের পিন নম্বর। যে যা চাইছেন তাই পেয়ে যাচ্ছেন। তারপর থেকে গত কয়েকদিনে ফেসবুকে ট্রেন্ড হয়ে উঠেছে “১১৭৬ হরে কৃষ্ণ” বা ১১৭৬ বা #১১৭৬হরেকৃষ্ণ।
এই নেটিজেনদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালিয়ের ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকরাও। কেউ লিখছেন, সকালেই লিখেছিলেন ১১৭৬ হরে কৃষ্ণ, আর হাতে হাতেই মিলেছে ফল। তার সঙ্গে সঙ্গেই নাকি ভালো কিছু ঘটে গিয়েছে। সুইগিতে পেয়েছেন ২৩ টাকায় মটন বিরিয়ানি। আবার কেউ লিখেছেন, সেই দুদিন আগে লিখেছি ১১৭৬, কিন্তু এখনও কোনও ভালো কিছুই হল না। কিছুজন শুধুই ১১৭৬ লিখছেন। আবার কেউ জুড়ে দিচ্ছেন, ১১৭৬ হরে কৃষ্ণ। বাংলা-ইংরেজি নানা ভাষাতেই ক্রমশ লিখেই চলছেন একই কথা। তবে, নানা যুক্তিবাদীদের কথায়, এটি নিছকই একটি গুজব। কেউ বা কারা কোনও উদ্দেশ্যে বা মজা করার জন্য এমন পোস্ট ভাইরাল করেছে। আজকের ডিজিটাল যুগেও সেই অন্ধবিশ্বাসে একের পর এক মানুষ পোস্ট করে চলেছেন। আর যা ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে।
এর সপক্ষে-বিপক্ষেও রয়েছে নানা মত। অনেকেই সপক্ষে লিখেছেন, ” হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র হল ১১৭৬ শব্দের একটি মন্ত্র যা রঘুনন্দন ভট্টাচার্য রচিত কলি-সন্তরণ উপনিষদে বর্ণিত এবং যা ষোড়শ শতাব্দীর সময় থেকে চৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষণের মাধ্যমে ভক্তি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মন্ত্রটি পরম সত্তার তিনটি সংস্কৃত নাম দ্বারা রচিত। গীতাতে উল্লেখ করা আছে যদি কেউ মন্ত্রটি না বলে হরে কৃষ্ণ বা রাধা কৃষ্ণর আগে ১১৭৬ পাঠ করে তাহলে সেই ব্যক্তি সিদ্ধি লাভ করতে পারে বা মনের বাসনা পূর্ণ হবার সম্ভবনা থাকে।”যদিও এই দাবি ভিত্তিহীন বলছেন অনেকেই। তাঁরা বিপক্ষে লিখছেন, “এটি সম্পূর্ণভাবে একটি মনগড়া অপ্রামানিক তথ্য। কেউ এইরকম কোনও কিছুতে বিভ্রান্ত হবেন না। কলিসন্তরন উপনিষদ রঘুনাথ ভট্টাচার্য রচিত নয়, মহর্ষি ব্যাসদেব বিরচিত। হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র ১১৭৬ শব্দের মন্ত্র নয়। হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র বলার আগে গুরু প্রনাম ও পঞ্চতত্ত্ব মন্ত্র বলা হয় । শুধু গীতায় নয়, কোনো বৈদিক শাস্ত্রেই উল্লেখ নেই ১১৭৬ বলার কথা।”
এবিষয়ে জানতে আমরা গুগল থেকে ইস্কন মায়াপুর আউটপোস্ট শাখার নম্বর জোগাড় করে বর্ধমান প্যামড়া শাখায় ফোন করি। ফোন তোলেন এই শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত সুবর্ণ সেন দাস মহাশয়, তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, এই যে বহু মানুষ ১১৭৬ হরে কৃষ্ণ লিখছে এটা আসলে কি ? তিনি বলেন, এটা কোথাও কোনওভাবে ভাইরাল হয়েছে হয়ত। অনেক কিছুই তো ভাইরাল হয়। তারপর সকলে লিখছে, এবিষয়ে আমরা কিছু জানি না। আমি ফেসবুকে খুব একটা সক্রিয় থাকিনা । তবে, কোনও বই বা নথিতে ১১৭৬ নিয়ে কিছু বলা আছে বলে জানি না । কোনও দিন শুনিনি।
এই শাখার আরেক প্রতিনিধি নীলাদ্রি জগন্নাথ দাসকেও একই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “হরে কৃষ্ণ নাম করলেই সমস্ত সমস্যা মিটে যাবে। এই মন্ত্রর আলাদা মাহাত্ম্য আছে। কিন্তু ১১৭৬ মানে কি তা আমরা জানি না। ইস্কন মায়াপুরে খোঁজ নেব এরকম কিছু আছে নাকি”।