দীপংকর সাহা: বর্তমান আফগানিস্তানে (Afghanistan) তালেবান ক্ষমতা দখল করেছে। আফগান সাধারন জনগনের উপর নেমে এসেছে তালিবানি শাসন। নারী স্বাধীনতা ও ব্যক্তি স্বাধীনতা বর্তমানে আফগানিস্তানে সোনার পাথর বাটি। সাধারন মানুষ কাবুলে ভিড় করেছে দেশ ছেড়ে পালানোর জন্য। আফগান মা তার সন্তানকে কাঁটাতার ডিঙিয়ে তুলে দিচ্ছে আমেরিকান সেনাদের হাতে। এই আশায় যে নিজে না বাঁচলেও তার সন্তান তো পৃথিবীর আলো দেখতে পারবে। কাবুল এয়ারপোর্টের বাইরে হাজার হাজার নারী পুরুষ ভিড় করে আছে বেঁচে থাকার আশায়। কিন্তু কতটুকু শ্বাসবায়ু তাদের ভাগ্যে আছে নিজেরাও জানে না। এমতাবস্থায় আফগানিস্তানের একমাত্র আশার আলো নরদ্যান অ্যালায়েন্স বা উত্তরের জোট। প্রয়াত ‘সিংহ অফ পঞ্জশির’ পুত্র, আহমদ মাসউদ সহ উপরাষ্ট্রপতি আমরুল্লাহ সালেহ, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিসমিল্লাহ খান মোহাম্মদী এবং অনেক সাবেক আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর যোদ্ধা তালেবানদের বিরুদ্ধে লড়াই করার অঙ্গীকার করেছেন।
আহমদ মাসুদের নেতৃত্বে তালেবান (Taliban) বিরোধী জোট গত কয়েক দিনে আফগানিস্তানের প্রায় দশ শতাংশ অংশ নিজেদের দখলে নিয়েছে।
আফগানিস্তানের ৩৪ টি প্রদেশের মধ্যে ৩৩ টির পতনের পর তালেবানরা কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়। যদিও এই ধরনের লড়াইয়ের ঘটনা এই প্রথম।
যদিও তালেবান আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি, তবে তালেবান এই জেলাগুলি পুনরায় দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে সূত্রের খবর।
যদিও তালেবানবিরোধী এই বাহিনীর সাফল্য নির্ভর করছে তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সাহায্য, বিদেশি রাষ্ট্রগুলির সামরিক সহায়তার এবং বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের উপর। তালেবান এই বিশ্বকে বোঝাতে চাইছে যে তারা একটি পরিবর্তিত দল। সাংবাদিক সম্মেলনে তারা নারী স্বাধীনতা ও সুরক্ষার উপর জোর দিয়েছে। এবং তারা “ভালো তালিবান” হিসাবে নিজেদের দাবি করছে। আসলে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈধতা অর্জন করতে চায়। কিন্তু তৃণমূল স্তরে তাদের প্রতিশ্রুতির প্রভাব নেই বললেই চলে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তালেবানদের কি বিশ্বাস করা যায়? এই প্রশ্নটাই এখন বড় হয়ে উঠেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২.৬ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয় করেছে আফগানিস্থানে এবং ২৪৪৮ জন সেনা হারিয়েছে এবং ২০,০০০ এরও বেশি আহত হয়েছে। এই আকস্মিক সেনা প্রত্যাহারকে যুক্তরাষ্ট্রের এক শ্রেনীর নীতি নির্ধারকরা সমর্থন করতে পারে নি । কারণ আফগানিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদ। আমেরিকার ছেড়ে যাওয়া শূন্যস্থান পূরণ করবে চীন। চীন আফগানিস্তানকে তার উচ্চবিলাশি বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের সাথে যুক্ত করতে সচেষ্ট হবে। চীন তার অর্থ শক্তি ব্যবহার করে উইঘুর ইসলামিক বিদ্রোহকে দমন করতে চাইবে এবং রাশিয়া আফগানিস্তানে আমেরিকার ছেড়ে যাওয়া নিরাপত্তা শূন্যতা পূরণ করবে। এবং তালেবানকে অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে নিজের অর্থনীতিকে সচল রাখতে সচেষ্ট হবে।
যদিও পাকিস্তান তালেবানদের সাফল্যে সব থেকে বেশি উচ্ছ্বসিত তবুও পাকিস্তান কিন্তু চিন্তামুক্ত নয়। কারণ তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এর মধ্যেই তার কাজ শুরু করে দিয়েছে পাকিস্তানে (Pakistan)।
আফগানিস্তানে পাঞ্জশির উপত্যকা বর্তমানে মানবতার একমাত্র ভরসা। যদিও তালেবান বিরোধি এই জোটের সাফল্য নির্ভর করছে বিদেশি শক্তির সাহায্যের উপর।
আরও পড়ুন
তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তান এখন চীন ও পাকিস্তানের নতুন খেলার ময়দান
নারীদের প্রতি কোনও বৈষম্য থাকবে না, দাবি তালিবানের
আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল তালেবানের, কী কী প্রভাব পড়বে ভারতের উপর?