মৌপর্ণা মণ্ডল
(হাটগোবিন্দপুর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপিকা) :
পর্ব:১
ভারত সীমান্ত সন্ত্রাসের শিকার
“জাতিসংঘের সদস্যরা সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞার ব্যাপারে এখনও আন্তর্জাতিক মানদন্ডে উন্নীত একটি সংজ্ঞায় উপনীত হতে পারেননি। একক সংজ্ঞা যা ১২ টি কনভেনশন ও প্রটোকলের নিরিখে সংজ্ঞায়িত হবে। দেখা যাচ্ছে , একটি রাষ্ট্রের কাছে যা সন্ত্রাসী, অন্য রাষ্ট্রের কাছে সেটা মুক্তিযুদ্ধ সন্ত্রাসবাদ হচ্ছে সংঘাতের একটা ধারাবাহিক ব্যবহার। ভয় বা ভীতি প্রদর্শনপূর্বক কিছু করা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতে, সন্ত্রাসবাদের আইনগত কোন ভিত্তি নেই। সাধারণ সংজ্ঞায় সন্ত্রাসবাদ বলতে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করে ধর্মীয় , রাজনৈতিক , আদর্শগত এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করা । সন্ত্রাসবাদ শব্দটি রাজনৈতিক ও আবেগদ্বারা আক্রান্ত। এর সংক্ষিপ্ত এবং সর্বজন বিদিত সংজ্ঞা দেওয়া কঠিন। সন্ত্রাসবাদের অন্তত একশটি সংজ্ঞা পাওয়া গেছে। রাষ্ট্র কর্তৃক সন্ত্রাসবাদের ধারণা কখনাে কখনাে বিতর্ক তৈরি করে। রাষ্ট্র তার উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কখনো কখনো নিরপরাধ মানুষকেও সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে থাকে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বৃহৎ পরিসরে সন্ত্রাসবাদের অনুশীলন ডানপন্থী বা বামপন্থী , জাতীয়তাবাদী চেতনা , ধর্মীয় , বিপ্লবী , এমনকি শাসকগােষ্ঠীও এটি ব্যবহার করতে পারে। এর একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে , সাধারণের উপর নির্বিচার প্রয়ােগ করে একজন ব্যক্তি বা গােষ্ঠী ব্যাপক প্রচারণা পেতে পারে । মানুষের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে উদ্দেশ্য হাসিল করা এর অন্যতম লক্ষ্য । সন্ত্রাসের শুরুটাই হল অসহিষ্ণুতা , হীনমন্যতা , ভারসাম্যহীন প্রেরণা তথা Disorganized thinking process এবং নষ্ট ইল্যুশনের মধ্য দিয়ে এই নষ্ট মাইন্ডসেট উদ্ভুত চিন্তা – চেতনা সন্ত্রাসীর মনােজগতে এমন ক্রোধ ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ ইচ্ছা সৃষ্টি করে যা তাকে টেনে নেয় হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে। এই নষ্ট কর্মের মধ্য দিয়ে নিজেদের ক্ষমতা বিস্তার করার পরিবেশ তৈরি হয় বলে মনে করে সন্ত্রাসীচক্র এবং তাদের পৃষ্ঠপােষকগণ । সন্ত্রাসীকর্ম প্রতিটি সন্ত্রাসীকে উচ্চমাপে নিয়ে যায় বলে তারা বিশ্বাস করে। একে ব্যক্তি ও গােষ্ঠীর চিন্তা ও পরিচয় অধিকতর পরিচিত করবার পথ বলে মনে করে সন্ত্রাসের পথে পা – দেওয়া মানুষগুলাে। আপাতদৃষ্টিতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বিচ্ছিন্নভাবে সংগঠিত ( Organized ) বা অসংগঠিত ( Disorganized ) – দুধরনেরই হতে পারে । জটিল , দীর্ঘস্থায়ী ও বড় সন্ত্রাসগুলাে অপেক্ষাকৃত সংগঠিত অপরাধ চিন্তার ফসল। ব্যক্তি ও গােষ্ঠী নিজেদের ইচ্ছা ও কল্পনাপ্রসূত চিন্তা সত্য জেনে পরিকল্পিতভাবে এমন ধ্বংসাত্মক কাজ করে যা রাষ্ট্র বা সমাজে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে । সন্ত্রাসের সর্বোচ্চ রূপই হল জাতিগত যুদ্ধ এবং পররাজ্যে আগ্রাসন- যা কিনা একটি সম্পূর্ণ সংগঠিত অপরাধ ( Organized Crime ) । সকল যুদ্ধই আরও যুদ্ধ , সংঘাত ও সন্ত্রাস টেনে আনে।
আধুনিক সন্ত্রাসের ইতিহাস ফরাসি বিপ্লবের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল এবং তখন থেকেই বিকশিত হয়েছে । সন্ত্রাসের সবচেয়ে সাধারণ কারণ বা শিকড়ের মধ্যে রয়েছে সভ্যতা বা সংস্কৃতির সংঘর্ষ , বিশ্বায়ন , ধর্ম , ইসরায়েল – ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব বা আফগানিস্তানে রাশিয়ার আক্রমণ। সন্ত্রাসবাদের জন্য আরাে ব্যক্তিগত বা ব্যক্তি ভিত্তিক কারণ হতাশা , বঞ্চনা , নেতিবাচক পরিচয় , নার্সিসিস্টিক রাগ এবং / অথবা নৈতিক বিচ্ছিন্নতা। পাঁচ ধরনের সন্ত্রাসবাদের সাথে পরিচিত হতে হবে।
রাষ্ট্র – পৃষ্ঠপােষক সন্ত্রাস , যা একটি রাজ্য বা সরকারের দ্বারা একটি রাজ্য বা সরকারের উপর সন্ত্রাসী কার্যকলাপ নিয়ে গঠিত ।
ভিন্নমত সন্ত্রাস , যা সন্ত্রাসী গােষ্ঠী যারা তাদের সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে ।
সন্ত্রাসবাদী এবং বাম ও ডান , যারা রাজনৈতিক মতাদর্শের গােষ্ঠী ।
ধর্মীয় সন্ত্রাস , যা সন্ত্রাসী গােষ্ঠী যা অত্যন্ত ধর্মীয়ভাবে অনুপ্রাণিত এবং
অপরাধমূলক সন্ত্রাস , যা সন্ত্রাসবাদী অপরাধ এবং অপরাধমূলক মুনাফায় সহায়তা করার জন্য ব্যবহৃত হয়।