গৌরব গুপ্ত: সাংসদের গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু ৬ বছরের শিশুর। গত বুধবার ১৬ নভেম্বর বিকেলে মুর্শিদাবাদের তৃনমূল কংগ্রেসের সাংসদ আবু তাহের খান, নওদা থেকে রওনা দিয়েছিলেন বহরমপুরের উদ্দেশ্যে। তার গাড়ি পিপড়েখালি নামক জায়গা পৌঁছতেই ঘটে যায় দূর্ঘটনা। ঘটনাস্থল থেকে সাংসদ আহত শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কিছুক্ষনের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়।
নওদা থানার গঙ্গাখালি এলাকার বাসিন্দা হাসান সরকার ছিলো বাবা মায়ের এক মাত্র সন্তান। বয়স হয়েছিলো ৬ বছর। বুধবার বিকেলে ছোট্ট হাসান কে নিয়ে স্থানীয় একটি ব্যাংকে এসেছিলেন তার মা । অন্যদিকে শাসক দলের বিধায়ক আবু তাহের খান নওদা থেকে রওনা দিয়েছিলেন বহরমপুর তাঁর বাড়ির উদ্দেশ্যে। ড্রাইভারের ঠিক পাশের সিটেই বসেছিলেন তিনি। সাংসদ এর গাড়ি যখন পিপড়েখালি ঢোকে, তখন দুরন্ত হাসানের মন আর বেগ সামলাতে পারে নি, কাজের সূত্রে মা যখন ব্যাংকে ব্যাস্ত, হাত ছিনিয়ে হটাৎই সে দৌড়ে আসে রাস্তার দিকে। একই সময় বিধায়কের গাড়ি দ্রুত গতিতে পৌঁছায় ওই জায়গায়। এখানেই গাড়ির গতির কাছে ছোট্ট হাসানের পা হার মেনে যায়। গাড়ির চালক জোরে ব্রেকের প্যাডেল চাপলেও গতি সামলাতে সক্ষম হয় নি। গাড়ি এসে সজোরে ধাক্কা মারে শিশুটিকে। হাত, পা সহ আঘাত লাগে শিশুটির মাথায় ও।
সাংসদের মন্তব্যে ঘটনাস্থলে অনেক মানুষ জড়ো হলেও তাদের মধ্যে শিশুটির মাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অতঃপর সময় নষ্ট না করে আহত হাসান কে নিয়ে সাংসদ যান মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে। উপস্থিত ডাক্তাররা শিশুটির মাথার আঘাত গুরুতর বুঝে তৎক্ষণাৎ সিটি স্ক্যান করেন। সাংসদের উপস্থিতিতেই এরপর চিকিৎসা শুরু হয়। একটানা তিন ঘণ্টা লড়াই এর পর আর শেষ রক্ষা করা যায়নি। হাসপাতালেই মৃত্যু হয় ৬ বছরের হাসানের। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ায় কষ্টে ভেঙ্গে পড়ে তার পরিবার।
এই ঘটনার জেরে মুর্শিদাবাদের নওদায় রাস্তা অবরোধ করে প্রবল বিক্ষোভ শুরু করেছেন স্থানীয়রা। পুলিশ ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে সাংসদের গাড়ির চালককে। আটক করছে সাংসদের গাড়িটিকেও। এই ঘটনায় সাংসদ বলছেন,’হঠাৎ করে বাচ্চাটি তাঁর গাড়ির সামনে চলে আসে। চালকের তখন কিছু করার ছিল না।’ অন্যদিকে মৃতের পরিবার অন্য অভিযোগ করে, হাসানের বাবা হামিদুল সরকারের অভিযোগ, “সাংসদের গাড়ি প্রচণ্ড গতিতে চলছিল। তাই চালক গাড়ি থামাতে পারেননি। সেই কারণেই আজ ছেলেকে হারালাম।” আমিনা বিবি নামে এক প্রত্যক্ষদর্শীও বলেন,’গাড়িটা খুব জোরে আসছিল। বাচ্চাটি রাস্তা পেরোতে যাচ্ছিল। কিন্তু গতি বেশি থাকায় গাড়িটি থামাতে পারেনি চালক। পরে দেখলাম ওটা এমপি সাহেবের গাড়ি।” যদিও গাড়ির গতি বেশী থাকার জন্যই যে দূর্ঘটনাটি ঘটেছে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল সাংসদ আবু তাহের খান।