রূপম দত্ত: প্রত্যেক বছর নাড়া পোড়ানোকে আটকাতে সরকারি উদ্দোগে চলে সচেতনতা প্রচার। সরকারি প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কিছুতেই রোখা যাচ্ছে না জমির নাড়া পোড়ানো। শীত পড়ার শুরুর দিকে ফের বর্ধমান জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু হয়ে গেছে নাড়া পোড়ানো। কোথাও দেখা গেলো পুড়ছে পাকা ধান তো কোথাও পুড়ছে আস্ত ট্রাক্টর।
সরকারি সূত্রের খবর,গলসি ১ ব্লকের সুন্দলপুর গ্রামে নাড়ার আগুনে পুড়ে যায় এক আস্ত ট্রাক্টর। বছর খানেক আগেও শোনা যায় নাড়ার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় কম-বেশি বিঘা খানেক ফসলি জমি। গলসি ১ ও ২ ব্লকের গলসি, মসজিদপুর, ভূঁড়ি, শিড়রাই, পারাজ-সহ অনেক পঞ্চায়েত এলাকায় বৃহস্পতিবারও নাড়া পোড়ানোর ছবি ধরা পড়ে। নাড়া পোড়ানোর ফলে একদিকে যেমন ফসল নষ্টের সম্ভাবনা প্রবল, তেমনই অন্যদিকে পরিবেশ দূষন-বিশেষ করে বায়ু দূষণ হয় প্রবল। যেই অঞ্চলে নাড়া পোড়ানো হয় সেই অঞ্চল ধোঁয়ার চাদরে ঢেকে যায়, যার ফলে বায়ু দূষন জনিত কারনে প্রানহাণীর সম্ভাবনাও থাকে।
গলসির মসজিদপুর পঞ্চায়েতের আতুসী এলাকা নাড়ার ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছিল এদিন। গলসি ২ পঞ্চায়েতের সভাপতি বাসুদেব চৌধুরী বলেন, “আমরা আতঙ্কে রয়েছি। এত প্রচার করেও মানুষকে সচেতন করতে পারছি না।”শিড়রাই পঞ্চায়েতের প্রধান শেখ আবদুস সামাদ বলেন, “দু’দিন আগেই আমাদের এলাকায় নাড়ার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে একটি ট্রাক্টর। নাড়া পোড়ানো রুখতে গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় মাইকে প্রচার করেছি।”সুন্দলপুর গ্রামের এক চাষির কথায়, “যন্ত্র দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে। ধানগাছের অবশিষ্ট অংশ জমিতে পড়ে থাকছে। আলু চাষ করতে হবে। নাড়ার জন্য চাষ করা যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই নাড়া পোড়াতে হচ্ছে।”
রাজ্যের বুদ্ধিজীবী সামাজের প্রশ্ন “হরিয়ানা এবং পাঞ্জাব রাজ্যে নাড়া পোড়ানোর ফলে সমগ্র দিল্লি কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় এ খবর আমরা অনকেই জানি,তা সত্বেও পাশাসন কেন সঠিক পদক্ষেপ নিচ্ছে না।” কৃষকদের কথায়,”আগে ধান কেটে পাশে থাকা খামার বাড়িতে রাখা হতো এবং ধান ঝাড়াইয়ের পর সেই খড় গবাদি পশুকে খাওয়ানোর কাজে লাগত,কেউ ঘরের ছাউনি দিতেন তো কেউ বিক্রি করতেন,কিন্তু বর্তমানে ধান কাটার জন্য মেশিন ব্যবহৃত হওয়ায় এসব আর সম্ভব হয়ে উঠছে না ফলে সেই নাড়া পুড়িয়ে দিচ্ছে সকলেই।”
সূত্রের খবর অনেক কৃষকই চাইছেন না বাড়তি খরচা করে সেই খড় বাড়ি নিয়ে যেতে তাই দিনদিন বেড়েই চলেছে নাড়া পোড়ানো। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, ‘নাড়া পোড়ানোর ফলে মাটির ক্ষতি হয়। অনেক বন্ধু পোকাও মারা যায়। তাছাড়াও ব্যাপক পরিবেশ দূষণ হয়। তাই নাড়া পোড়ানো বন্ধ করতে বাসিন্দাদের সচেতন করার জন্য আরও বেশি প্রচার চালানো হবে।’