রূপম দত্ত: কয়েক মাস আগেই ৭ টি নতুন জেলা গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। এর ফলে রাজ্যে জেলার সংখা হত ৩০টি। নতুন জেলা গঠন করলে প্রশাসনিক কার্যকলাপকে আরও বিস্তৃত করা যাবে, সরকারি সুযোগ সুবিধা সঠিকভাবে রাজ্যের সমস্ত মানুষের কাছে পৌঁছাবে তার সাথে কেন্দ্রের কাছ থেকেও আলাদা টাকা পাওয়া যাবে সেই জন্য এই উদ্দোগ বলে জানা যায় সরকারের তরফে। কিন্তু বৃহস্পতিবার এক প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী এই জেলা ভাগে স্থগিতাদেশ জানান।
জেলা ভাগের এই সিদ্ধান্তে রীতিমতো বিক্ষোভ এবং আন্দোলন ও চলতে থাকে কয়েকটি জায়গা জুড়ে। সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভ হয় নদিয়া জেলায়। জেলা ভাগ হলে যে নদিয়ার ঐতিহ্যে আঘাত করা হবে তা ভালো মতো টের পেয়েছিলেন সেখানকার বুদ্ধিজীবী থেকে আমজনতা। শ্রী চৈতন্যদেবের লীলাভূমি নদীয়া তাদের পরিচয়, তারা এই নামের পরিবর্তন চাননি। অন্যদিকে বিষ্ণুপুরের পৃথক জেলা হওয়ার আশায় একাধারে যেমন মিষ্টি বিতরণ ও শুভেচ্ছা মিছিল হতে দেখা গিয়েছিল, তেমনই বাঁকুড়া শহরে জেলা ভাগের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ‘বাঁকুড়া ভঙ্গ প্রতিরোধ মঞ্চ’ গড়ে শুরু হয়েছিল পাল্টা আন্দোলন।
বৃহস্পতিবার নদীয়ার রানাঘাটে ছাতিমতলার মাঠে প্রশাসনিক সভায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জেলা ভাগের এই সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশের কথা জানান। মুখ্যমন্ত্রী বলেন “এখন শুধু দু’টো নতুন জেলা হবে। উত্তর ২৪ পরগনা ভেঙে বসিরহাট এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা ভেঙ্গে সুন্দরবন।” অর্থাৎ নদীয়া, মুর্শিদাবাদ ও বাঁকুড়া ভাগের সিদ্ধান্ত আপাতত বাস্তবায়িত হচ্ছে না তা স্পষ্ট করেন তিনি। এই মত পরিবর্তনের কারন হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী সরকারি কর্মচারীর অভাবের কথাও জানান। কিন্তু এই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, হঠাৎ করে দুই মাস পর এই স্থগিতাদেশের কারণ শুধুই কি কর্মীর অভাব নাকি সরকারের আর্থিক সংকট?
গত আগস্টে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষনা করেছিলেন নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, উত্তর ২৪ পরগনা এবং দক্ষিণ২৪পরগনা ভেঙে রাণাঘাট, বসিরহাট, বহরমপুর, কান্দি, জঙ্গিপুর, সুন্দরবন, ইছামতি ও বিষ্ণুপুর এই নতুন ৭ টি জেলার গঠন করা হবে। কিন্তু এ নিয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে কোনও নির্দেশ পাঠানো হয়নি। নদীয়ার বিধানসভা নির্বাচনের ফল এমনিতেই সরকারের পক্ষে সন্তোষজনক নয়। মতুয়া ভোট, নাগরিকত্ব সংশোধন আইন, অনুপ্রবেশ এবং গোষ্ঠী কোন্দল একত্রে নিয়ে তৃনমূল এমনিতেই স্বস্তিতে নেই। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেরই মত এইসবের মধ্যে আবার জেলা ভাগ করে জনগনের রোষে পড়তে চাইছেনা শাসক দল, তাই এই নির্দেশ।