গত বছরের ন্যায় এবছরেও জগন্নাথধাম পুরীতে ভক্তশূন্যভাবেই উদযাপিত হচ্ছে শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা উৎসব। পাশাপাশি মন্দির ও তৎসংলগ্ন এলাকায় জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা। করোনা মহামারীজনিত সীমাবদ্ধতার পরিপ্রেক্ষিতেই ভক্তদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ওড়িশা সরকারের এই সিদ্ধান্ত। তবে সারা বিশ্বজুড়ে থাকা জগন্নাথদেবের ভক্তদের জন্য এই উৎসবের লাইভ স্ট্রিমিং-এর ব্যবস্থাও করা হয়। বুধবার রাত ১০টা থেকেই প্রশাসনের তরফ থেকে গণপরিবহণ-চলাচল নিষিদ্ধ করা হয় এবং মন্দির চত্বরে পুলিশি টহলেরও ব্যবস্থা করা হয়।
এবিষয়ে মন্দিরের প্রধান প্রশাসক ডঃ কৃষ্ণ কুমার সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে জানিয়েছেন, “মন্দিরের বাইরে কোনও জমায়েত হবে না। আমরা কেবল ঐতিহ্যবাহী রীতি অনুসরণ করব। এরপরে, ভগবান জগন্নাথ ১৫ দিনের জন্য বিশ্রাম নেবেন এবং রথযাত্রার সময় পুনরায় উপস্থিত হবেন।”
শ্রী জগন্নাথ টেম্পল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (SJTA) নির্ঘণ্ট অনুসারে, আজ বৃহস্পতিবার ভোর ১টা নাগাদ ‘পাহান্ডি’ (বিভিন্ন দেবদেবীদের সঙ্গে নিয়ে শোভাযাত্রা) অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে স্নান পূর্ণিমার শুভ সূচনা হয় এবং তা চলে ভোর ৪টে অবধি।
সকাল সাড়ে দশটায় পুরীর রাজা (খেতাবি) দিব্যসিংহ দেবের মাধ্যমে ‘ছেড়া পাহাড়া’ (স্নানের জায়গায় ঝাড়ু) অনুষ্ঠিত হয়। দেবদেবীরা সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে গজবেশ দ্বারা শোভিত হন। এরপর শুরু হয় স্নানযাত্রাপর্ব। এই স্নানযাত্রায় অন্যান্য দেবদেবীদের সঙ্গে প্রভু জগন্নাথ, বলভদ্র, সুভদ্রাকে স্নান করানো হয়।
বিশ্বাস যে ভগবান বলভদ্র, দেবী সুভদ্রা এবং ভগবান জগন্নাথ স্নান সেরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই তাঁদের স্নানাগার থেকে ‘আনাসারা ঘর’-এ (অসুস্থ কক্ষ) নিয়ে যাওয়া হয়। স্নানাগার থেকে মন্দিরের অসুস্থ কক্ষে দেবদেবীদের প্রত্যাবর্তনের এই শোভাযাত্রা বিকেল ৫টা থেকে রাত্রি ৮টা পর্যন্ত চলবে। তারপর থেকেই আনাসারা (অসুস্থতা) অনুষ্ঠানটি শুরু হবে এবং পরবর্তী ১৫ দিন অব্যাহত থাকবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গোটা অনুষ্ঠান জুড়েই নিয়মের বিধিনিষেধ চূড়ান্ত। শুধু ভক্তদের ক্ষেত্রেই নয়, কড়াকড়ি বহাল রয়েছে সেবায়েতদের নিয়েও। করোনা ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ নেওয়া থাকলে তবেই তাঁরা এই স্নানযাত্রায় অংশ নিতে পারবেন। পাশাপাশি তাঁদের কোভিড রিপোর্ট নেগেটিভ থাকাও বাধ্যতামূলক।
প্রশাসনের নিয়ম অনুযায়ী মন্দিরের বাইরে ভিড় করতে পারবেন না ভক্তরা। করোনা সুরক্ষা সুদৃঢ় করতে তৈরি করা হয় ছ’টি জোন। মোতায়েন রয়েছেন ৫ জন অতিরিক্ত এসপি, ৩৫ পল্টন পুলিশ বাহিনী, ২৩ জন ডিএসপি, প্রায় ৪১ জনের বেশি ইন্সপেক্টর ও প্রায় ১৫০ জন আধিকারিক। এছাড়াও জগন্নাথ মন্দিরের চারপাশে ও প্রবেশপথে ১৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।