পক্ষে ৪৫৪, বিপক্ষে ২, দীর্ঘ ২৭ বছর লোকসভায় পাশ মহিলা সংরক্ষণ বিল
শর্মিষ্ঠা ঘোষঃ গত কয়েক বছর ধরে সংসদে আটকে ছিল মহিলা সংরক্ষণ বিল। সোমবার ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে মহিলা সংরক্ষণ বিলটি(Women’s Reservation Bill) পাশ হয়। দীর্ঘ ২৭ বছর পর এদিন পাশ হল লোকসভায়। এই বিল কার্যকর হলে লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভার এক তৃতীয়াংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।
বুধবার সন্ধ্যায় গোপন ভোটাভুটিতে নরেন্দ্র মোদী সরকারের আনা বিলটি সমর্থন করেছেন ৪৫৪ জন সাংসদ। বিলে সংশোধন চেয়ে বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন মাত্র দু’জন। মঙ্গলবার এই সম্পূর্ণ বিল পেশ করেছিল মোদি সরকার। যার পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে, ‘নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম’। দেশের কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল ১২৮ তম সংবিধান সংশোধনী বিল হিসাবে মহিলা সংরক্ষণ বিল লোকসভায় পেশ করেন। অবশেষে সংসদের নিম্নকক্ষ স্বীকৃতি দিল মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণের দাবিকে। এরপর রাজ্যসভায় পাশ করিয়ে বিলটিকে পাঠানো হবে রাষ্ট্রপতির কাছে অনুমোদনের জন্য। রাষ্ট্রপতির ছাড়পত্র পেলেই কার্যকর হবে নিয়ম।
জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে মঙ্গলবার তাঁর ভাষণে বলেন, ‘‘২০১০-এ মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন মহিলা সংরক্ষণ বিল সংসদের এই কক্ষে পাশ হয়েছিল। কিন্তু এই সরকার আমাদের কৃতিত্ব দিতে চায় না।’’ অন্যদিকে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরি একই মন্তব্য করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘‘ওই সরকারের আর অস্তিত্ব এখন নেই। আর বিলটির মেয়াদও শেষ হয়ে গিয়েছে।’’ একই সঙ্গে বিজেপির একাংশ দাবি করতে থাকেন এই বিল পাশ করেছে মোদি সরকার কিন্তু তার ক্রেডিড নিতে চাইছে কংগ্রেস।
প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, তফসিলি-জাতি-জনজাতির মহিলাদের জন্য কোনও লোকসভা-বিধানসভা আসন চিহ্নিত করা হবে না। বরং পৌরসভা ও পঞ্চায়েত ভোটের ধাঁচেই প্রতি নির্বাচনে পর্যায়ক্রমে ১/৩ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত করা হবে। এই নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধিরা। এর আগে প্রবল বিরোধিতার কারণে গত ২৭ বছর ধরে আটকে রয়েছে এই বিল। ১৯৯৬ সালে সিপিআই সাংসদ গীতা মুখোপাধ্যায় এই মহিলা সংরক্ষণ বিষয়ে প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। সেই বছরই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়ার সরকার প্রথম সংসদে বিলটি পেশ করতে উদ্যোগী হয়েছিল।
পরবর্তী সময়ে বাজপেয়ীর আমলে মহিলাদের আসন সংরক্ষণে উদ্যোগী হয় কেন্দ্র। কিন্তু তাতেও বাধা আসে। সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি ও জেডিইউ-র মতো দল মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত এক তৃতীয়াংশ আসনের মধ্যেই আলাদাভাবে তফসিলি জাতি-জনজাতি ও ওবিসিদের জন্য সংরক্ষণ চালুর দাবি জানানো হয়। তবে, ঐকমত্যের অভাবে বিল সংসদে পাশ হয়নি। ২০০৬ সালে ইউপিএ জমানায় নতুন করে এই বিল সংসদে পেশ করা হয়। কিন্তু সরকারের সমর্থক ও বিরোধীদের একাংশের আপত্তির জেরে তা আর পাশ করানো যায়নি।
আরও পড়ুন ; ‘I.N.D.I.A’র কমিটিতে থাকবে না সিপিএম, একই লড়াইয়ে তৃণমূলকে এড়াতে সিদ্ধান্ত পলিটব্যুরোর