World Environment Day : ভোরের স্নিগ্ধ আলোয় যদি পাখিদের মিষ্টি ডাকে আপনার ঘুম ভাঙে বা ওরা যদি কিচিরমিচির শব্দ করে আপনাকে সুপ্রভাত জানায় কিম্বা ধরুন ঘুম থেকে উঠে একটা সুন্দর মিষ্টি ফুলের সুগন্ধ যদি আপনার শরীর মনকে সতেজ করে তোলে। তাহলে আপনার সকালটা হয়ে উঠবে আরো বেশি সুন্দর। আর সকালের শুরুটা যদি এমন ভাবে হয় তাহলে হয়তো আপনিও আপনার দৈনন্দিন জীবনে কিছুটা এক্সট্রা এনার্জি যোগ করতে পারবেন।

আজ ৫ ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। প্রতিবছরই পরিবেশবিদরা সবুজায়নের বার্তা দিয়ে থাকেন। পরিবেশ রক্ষার্থে সচেতনতা অবলম্বন করার কথাও বলে থাকেন তারা। তারপরেও অসচেতনতার ছবি ধরা পড়ে আমাদের সামনে। অকারণে সবুজ ধ্বংস করা, পাখিদের বিপন্ন করে তোলার কাহিনিও নতুন নয়। তাই প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার্থে আমাদেরও এগিয়ে আসার প্রয়োজন রয়েছে। পাখিদের জন্য আশ্রয়স্থল তৈরি করে, পরিবেশ দূষণ রোধে গাছ লাগিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় আমরাও নিতে পারি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
পাখিদের আশ্রয়স্থল- আপনার ব্যালকনি বা বারান্দায় ওদের বসার জন্য বা দোল খাওয়ার জন্য একটা ছোট কাঠের লাঠির টুকরো ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। দু’দিকের মুখ খোলা মাঝারি আকারের টিনের কিম্বা প্লাস্টিকের কন্টেনার ঝুলিয়ে রাখুন যাতে ওরা অবাধে প্রবেশ করতে পারে এবং বেরোতে পারে। ইচ্ছা হলে যাতে ছোট্ট পড়শিরা সেখানে বাসাও বানাতে পারে।
খাদ্য- ওরা যেখানে এসে বসবে তার কাছাকাছিই মাটির বা প্লাস্টিকের ছোট পাত্রে ওদের জন্য খাবার রাখুন। পাখিকে দানাশস্যই দেওয়া ভালো। এমন কোন খাবার দেবেন না যাতে পিঁপড়ে লাগে বা নষ্ট হয়ে যায়।
পানীয়- জল অবশ্যই রাখবেন। গরমে ওদের জন্য জল খুব দরকারি। তাই ভারী কোন পাত্রে জল রাখুন যাতে সেটা উল্টে না যায়। ব্যালকনি, খোলা বারান্দা কিম্বা ছাদের কোনে ছায়াঘেরা কোনো অংশে জল রাখুন। ছায়াঘেরা ছাদের কোনো অংশে একটু বড় মাটির সরা বা প্লাস্টিকের গামলায় জল রাখুন। পাশে একটু বালি, নুড়িপাথর রেখে দিলে দেখবেন ছোট্ট পাখিরা কেমন স্নান করবে সেখানে। আমাদের একটু যত্ন ওদের নিশ্চিহ্ন হওয়া আটকাতে পারে। আর এইটুকু করতে পারলে দেখবেন ফিঙে, বুলবুলি, ছাতার, চড়াইরা কেমন আসর জমাবে আপনার চারপাশে।
দূষণ রোধে ইন্ডোর প্লান্ট:
আপনার ঘর দূষণ মুক্ত রাখতে ইন্ডোর প্লান্টের জুড়ি মেলা ভার। এমন কিছু গাছ রয়েছে যেগুলি আপনার অন্দরমহলের শোভা বৃদ্ধি করবে তারসঙ্গে আপনার বাড়ির পরিবেশকে করে তুলবে দূষণ মুক্ত। নাসা-র পক্ষ থেকেও এমন কয়েকটি গাছের কথা উল্লেখ করা হয়েছে যা বাড়ির বাতাসকে পরিশুদ্ধ করতে পারে। দূষণ রোধে বেশ কিছু ইন্ডোর প্লান্টের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে সেগুলি হল-

চাইনিজ এভারগ্রিন (Chinese Evergreen)- চিন দেশে এই গাছটি খুব জনপ্রিয়। বাতাসকে দূষণ মুক্ত করে তোলে, বাতাসকে বিভিন্ন ক্ষতিকারক পদার্থ থেকেও মুক্ত রাখে। ছায়াতে ভাল হয় এরা।

জারবেরা ডেইজি (Gerbera Daisy)- বাগানের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে জারবেরা। বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন উৎপাদন করার ক্ষমতা রয়েছে এর এবং বাতাস থেকে দূষিত কণা দূর করতে পারে। এই গাছটি রাখার জন্য আদর্শ জায়গা হল শোওয়ার ঘর ।

এরিকা পাম (Areca Palm)- বাতাস পরিশুদ্ধ করার বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে এর । প্রকৃতি সেভাবেই যেন তৈরি করেছে এই গাছটিকে। বসার ঘর গাছটির জন্য একেবারে আদর্শ জায়গা। অল্প আলোতেও ভালো থাকে, মাঝে মধ্যে জল দিলেই হয় তাছাড়া বিশেষ যত্নের দরকার পড়ে না।

স্নেক প্লান্ট (Snake Plant)- বাতাসে অক্সিজেনের যোগান বাড়ায় এবং বিভিন্ন দূষিত পদার্থ দূর করতে পারে এই গাছটি। এর বিশেষত্ব হল, রাতেও বাতাসে অক্সিজেনের যোগান দেয় গাছটি। একে রাখার সবচেয়ে ভাল জায়গা হল বাড়ির অন্দরমহল।

ডেভিলস আইভি বা পথোস (Devil’s Ivy)- মানিপ্লান্ট নামে সবার কাছে সুপরিচিত এই গাছ। যে কোনও ধরনের পরিবেশে সহজে বেঁচে থাকতে পারে। মাটি ছাড়াও শুধুমাত্র জলেও এই গাছ ভাল ভাবে বাড়তে পারে।
বেশ কিছু দূষিত পদার্থ শোষণ করার ক্ষমতা রয়েছে এর । যেমন জাইলেন, বেনজিন, ফর্মালডিহাইড।

ইংলিশ আইভি (English Ivy)- বাড়ির দেওয়াল জুড়ে বেড়ে ওঠে এই গাছ । ঘরের ভিতরে খুব সহজে এই গাছটিকে বড় করতে পারেন। তবে অতিরিক্ত গরম এরপক্ষে ভালো না। কার্বন মনোক্সাইড, বেনজিন, ফর্মালডিহাইডের মতো দূষিত পদার্থ শোষণ করতে পারে গাছটি।

স্প্যাথিফাইলাম বা পিস লিলি (Peace Lily)- সামান্য যত্নও এই গাছটিকে দিব্যি বাঁচিয়ে রাখতে পারে । তবে কড়া রোদ একে না রাখাই ভালো, সারা বছর সুন্দর সাদা ফুল হয় গাছটিতে। সেইকারণে এই গাছটিকে অনেকই খুব পছন্দ করেন। জাইলেন, বেনজিন, ফর্মালডিহাইড, কার্বন মনোক্সাইডের মতো দূষিত পদার্থ শোষণ করে বাতাস পরিশুদ্ধ করতে পারে গাছটি।

অ্যানথুরিয়াম বা ফ্ল্যামিংগো লিলি (Flamingo Lily)- ঘরের মধ্যে যে কোনও জায়গায় রাখতে পারেন। সারা বছর ধরে লাল রঙের ফুল ফোটে গাছটিতে। ভিজে পরিবেশ এর জন্য খুব ভাল । এরও দূষিত পদার্থ শোষণ করার ক্ষমতা রয়েছে ।যেযন জাইলেন, অ্যামোনিয়া, ফর্মালডিহাইড।

ব্যাম্বু পাম (Bamboo Palm)- যে কোনো মরসুমে এই গাছ খুব ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারে। তবে আর্দ্র আবহাওয়া পেলে ভাল হয়। এর উচ্চতা একটু বেশি হয় তাই একে বড় টবে লাগানোই ভাল হবে।
যে সব দূষিত পদার্থ শোষণ করার ক্ষমতা রয়েছে গাছটির তাহলো জাইলেন, বেনজিন, ফর্মালডিহাইড, কার্বন মনোক্সাইড।

বস্টন ফার্ন (Boston Fern)- ঘরের তাপমাত্রা কমানোর সঙ্গে ঘরের বাতাস পরিশুদ্ধ রাখতে পারে এই গাছটি। ছায়াঘেরা জায়গাতেই একে রাখা ভালো। প্রতিদিন জলও দিতে হবে।

অ্যালোভেরা (Aloe Vera)- এই গাছের উপকারিতা যে অনেক তা অনেকেরই জানা । এর পাতার ভিতরে থাকে জলীয় পদার্থ । ত্বক,চুল এবং স্বাস্থ্যের পক্ষে এই গাছ ওষুধের মতন কাজ করে। বাতাসকে পরিশুদ্ধ করতে এবং ঘরের তাপমাত্রা কমাতেও অ্যালো ভেরা সহায়ক।

স্পাইডার প্ল্যান্ট (Spider Plant) – মাকড়সার জালের মতন এর বিস্তার। এই গাছটিকেও ছায়ায় রাখতে হয়। একে ঘরের ভিতরে রাখলে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গাছটি বাতাস পরিশুদ্ধ করবে এবং ঘরের উষ্ণতাও কমাবে।
কিছু সাবধানতা- এই ইন্ডোর প্ল্যান্টগুলির মধ্যে এমন কয়েকটি গাছ রয়েছে যার পাতা কুকুর এবং বিড়ালের জন্য বিষাক্ত। তাই কিছু সাবধানতা অবলম্বন করে এই গাছ লাগান। আপনার পোষ্যের থেকে এদের দূরে রাখুন। শিশুদের ক্ষেত্রেও এই সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত ।
সাধের বাগান- পরিবেশ রক্ষায় গাছের গুরুত্ব যে কতখানি তা আমাদের সকলের কাছেই স্পষ্ট। তাই গাছ লাগানোর সুঅভ্যাস গড়ে তোলার প্রয়োজনও রয়েছে। আপনার বাড়ির সামনে এক টুকরো জমি থাকলে সেখানে নানা ধরনের গাছ লাগিয়ে সুন্দর বাগান তৈরি করেতে পারেন। তবে আধুনিক ফ্ল্যাট বাড়িতে তা সম্ভব নয়। তাই বারান্দায় বা ছাদে বানিয়ে ফেলতে পারেন আপনার পছন্দের বাগান।

সারা বছরই কোনো না কোনো ফুলের গাছ লাগাতে পারেন। এখন বর্ষার মরসুম শুরু হতে চলেছে তাই দোপাটি,বেলি, জুঁই ফুলের গাছ লাগাতে পারেন। দোপাটির রঙের বাহার, বেলি ও জুঁইয়ের মনমাতানো সুগন্ধ আপনার শরীর ও মনকে সতেজ করে তুলবে। লাগাতে পারেন পাতাবাহার গাছও। মনোবিদরা বলেন গাছ লাগালে তার যত্ন করলে মানসিক চাপ কমে। তাই অন্যকে এবং নিজেকে ভালো রাখতে গাছেদের বন্ধু করে নিন।
আরও পড়ুন
Business Idea : কম খরচ ও কম জায়গায় শুরু করা এই ব্যবসা দেবে বড় লাভ