হাসপাতালে ১৩ মাস কাটানোর পর, বিশ্বের সবচেয়ে ছোট শিশুটি (World’s Smallest Baby) অবশেষে নিজের বাড়ি ফিরল। সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হসপিটালে গত বছর ৯ জুন জন্ম নেওয়া কোয়াক ইউ জুয়ানের (Kwek Yu Xuan) ওজন ছিল ২১২ গ্রাম, অর্থাৎ একটি আপেলের ওজনের সমান। একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাঁর মায়ের প্রি-এক্লাম্পসিয়া (Pre-eclampsia) ধরা পড়ার কারণে ২৫ সপ্তাহ পর শিশুটি অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেয় এবং হাসপাতালের কর্মীদের তরফ থেকে বিশেষভাবে যত্ন করা হয় তাঁকে।
জন্মের সময়, তাঁর উচ্চতা মাত্র ২৪ সেন্টিমিটার ছিল। সদ্যজাতদের বিভাগের চিকিৎসক ও নার্সরা তাঁর ছোট আকার দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। হাসপাতালের মতে, শিশুটি জন্মের সময় এত ছোট ছিল যে তাঁকে সদ্যজাতদের দেখাশোনার ইউনিটে নিয়ে যেতে হয়েছিল। শিশুটির দেখাশোনা করার টিমের মধ্যে এক নার্স জানান, “আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম তাই বিভাগের অধ্যাপকের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। কারণ আমি ২২ বছর ধরে একজন নার্স হিসেবে কাজ করার পরও এত ছোট নবজাতিকাকে দেখিনি।”
হাসপাতালে ১৩ মাসের ক্রমাগত চিকিৎসা এবং কয়েক সপ্তাহ ভেন্টিলেটরে থাকার পর, শিশুর ওজন এখন ৬.৩ কেজি। তাঁকে গত মাসে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল এবং বিশ্বাস করা হয়, অপরিণত অবস্থায় জন্ম হওয়ার পর বেঁচে থাকা শিশুদের
মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট শিশু জুয়ান। হাসপাতালের মতে, জুয়ানের মতো শিশুদের বেঁচে থাকার হার প্রায় ৭০ শতাংশ এবং বেশিরভাগকেই চার থেকে ছয় মাস পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু জুয়ানের ক্ষেত্রে, এটি সম্পূর্ণভাবে অন্যরকম হল।
শিশুর বাবা মায়ের শিশুটির অপরিণত অবস্থায় জন্মের অনুমান ছিল না। গর্ভাবস্থায়, প্রি-এক্লাম্পসিয়া বা উচ্চ রক্তচাপের কারণে মাকে জটিল আপৎকালীন সিজারিয়ান অপারেশন করতে হয়েছিল। প্রসবের দায়িত্বে থাকা ডাক্তাররা প্রথমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় জানিয়েছিলেন, জন্মের সময় জুয়ানের ওজন তাঁদের প্রত্যাশার চেয়েও কম ছিল। ডাক্তার এনজি বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম যে তাঁর ওজন ৪০০, ৫০০ বা ৬০০ গ্রাম হবে, কিন্তু তাঁর ওজন হয় মাত্র ২১২ গ্রাম।” অপরিণত শিশুর চিকিৎসা করাও ছিল আরেকটি চ্যালেঞ্জ।
তাঁর ত্বক ছিল খুবই কোমল এবং যারা শিশুটির দেখাশোনা করছিলেন, শিশুটির জন্য উপযুক্ত ডায়পারও পর্যন্ত তাঁদের নিজেদের তৈরি করতে হয়েছিল। হাসপাতালের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, জন্মের সময় স্বাস্থ্য সমস্যার চ্যালেঞ্জগুলির বিরুদ্ধে তাঁর দৃঢ়তা এবং বৃদ্ধির দ্বারা তাঁর আশেপাশের মানুষদের সে অনুপ্রাণিত করেছিল। এই করোনাকালে তাঁকে আশার আলো বলে মনে হয়েছে সবার। একটি অসাধারণ শিশু বলে গণ্য করা যেতে পারে তাঁকে। জুয়ানকে হাসপাতাল থেকে ছাড়ার আগে তাঁর বাবা -মাকে চিকিৎসা সরঞ্জাম ব্যবহার করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে যাতে তাঁর দেখাশোনা বাড়িতেই করা যায়।
আরও পড়ুন
Covid-19 Vaccine: ভ্যাকসিন কি শিশুদের জন্য নিরাপদ? কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা