Saturday, April 27, 2024

ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছাড়াই করা যাবে ডিজিটাল রুপির লেনদেন, নতুন প্রযুক্তি আনছে কেন্দ্র

বং লাইফ অ্যান্ড মোর, ডেস্ক; এবার অনলাইনে টাকা লেনদেন হতে চলেছে আরও সহজ, আরও সুরক্ষিত। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছাড়াই করা যাবে ডিজিটাল লেনদেন। কোনও রকম নজরদারি ছাড়াই পাঠাতে ও গ্রহণ করতে পারবেন টাকা। কমবে অনলাইনে আর্থিক প্রতারণার ঝুঁকি। হ্যাঁ, সত্যিই অভিনব। ‘ব্লক চেন’ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে এমনই অত্যাধুনিক হতে চলেছে ডিজিটাল ভারতের টাকা আদান-প্রদান। সম্প্রতি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের দ্বারা লঞ্চ করা হয়েছে ই-রুপি। আপাতত চলা পাইলট প্রজেক্ট শেষ হলেই আপনার পকেটেও থুড়ি মোবাইলের ওয়ালেটে রাখতে পারবেন কড়কড়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডিজিটাল নোট।

তাহলে এখন প্রশ্ন …

* কী এই ডিজিটাল রুপি বা সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ডিজিটাল কারেন্সি (CBDC) ?
* কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজিটাল রুপি চলবে ?
* UPI থাকতেও কেন আবার আলাদা করে ‘ডিজিটাল রুপির’ প্রয়োজন হল ?
* দৈনন্দিন লেনদেনে ডিজিটাল রুপির ব্যবহার কীভাবে করবেন ?
* এবং ডিজিটাল রুপির সুবিধা কী কী ?

প্রথম প্রশ্ন, কী এই ডিজিটাল রুপি বা CBDC ?
ডিজিটাল রুপি হল ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের জারি করা মুদ্রা নোটগুলির ডিজিটাল সংস্করণ। আপনি যেভাবে পকেট থেকে নগদ বের করে দোকানে গিয়ে বা কোনও ব্যক্তির সঙ্গে অর্থ আদান-প্রদান করে থাকেন ঠিক সেভাবেই কাজ করবে এই রুপি। শুধু পকেটের পরিবর্তে টাকা ঢুকবে আপনার ই-ওয়ালেটে। যা মূলত কনটাক্ট লেস বা যোগাযোগহীন আর্থিক লেনদেনের কাজ করবে। ২০২২-২৩ আর্থিক বর্ষের বাজেট পেশ করার সময়ই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ঘোষণা করেছিলেন, শীঘ্রই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া দেশের নিজস্ব ডিজিটাল মুদ্রা চালু করছে। সেই মত ২০২২ এর ১ ডিসেম্বর থেকে চালু হয়েছে সেই ডিজিটাল মুদ্রা ‘ই-রুপি’।
তবে পরীক্ষামূলকভাবে দেশের কয়েকটি বড় শহরেই আপাতত সীমাবদ্ধ রয়েছে এই পরিষেবা। খুব শীঘ্রই তা চালু হতে পারে সমগ্র দেশে। তবে, এই ই-রুপি বা CBDC দুই প্রকার। প্রথমটি হল খুচরো বা CBDC রিটেইল। এটি সকলেই ব্যবহার করতে পারবেন। অন্যটি হল পাইকারি বা CBDC হোলসেল। এই ধরনের ডিজিটাল মুদ্রা নকশা করা হয়েছে নির্বাচিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির ব্যবহারের জন্য।

দ্বিতীয় প্রশ্ন, কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজিটাল রুপি চলবে ?
এক কথায় বলা যায় যে প্রযুক্তিতে ‘বিটকয়েন’ চলে সেই ব্লকচেন প্রযুক্তিকে ব্যবহার করেই আনা হয়েছে ডিজিটাল রুপি। ‘বিটকয়েন’ হল ক্রিপ্টোকারেন্সি। কোনও ব্যাঙ্ক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন ছাড়াই চলে এর কর্মকাণ্ড। যা ব্লকচেন প্রযুক্তি নির্ভর ডিজাইন করা একটি বিকেন্দ্রীকৃত ডিজিটাল সম্পদ। সাধারণ ইন্টারনেট সিস্টেম বা ব্যাঙ্ক সার্ভার হ্যাক করা সম্ভব হলেও এই ব্লকচেন প্রযুক্তিতে ডিজিটাল কারেন্সি কখনও হ্যাক করা বা তথ্য পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। কারণ এর তথ্য একটি কম্পিউটার বা সার্ভারে নয় অংখ্য সার্ভারে রাখা হয়। তবে, এদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির সরকারি বৈধতা নেই। কিন্তু RBI-এর জারি করা সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ডিজিটাল কারেন্সি বা CBDC-র বিকল্প মুদ্রার আইনি বৈধতা কাগজের নোটের সমতুল্য।

UPI-এর সঙ্গে পার্থক্য কোথায় ?
এখন সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল UPI-এর মাধ্যমেও আমরা ডিজিটালি আর্থিক লেনদেন তো করছি। নিমেষে টাকা এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাঙ্কাউন্টে পাঠানো তো যাচ্ছেই। তাহলে আলাদা করে ই-রুপি কেন প্রয়োজন। আদতে ই-রুপি নিজেই একটি ডিজিটাল মুদ্রা। আপনার পকেটে থাকা ৫০০ টাকার নোট হোক বা ১ টাকার কয়েন, সবই পাবেন ডিজিটাল রূপে। এদিকে UPI হল একটি টাকা লেনদেনের মাধ্যম মাত্র। UPI দিয়ে একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো যায়। যা সরাসরি ব্যাঙ্কের পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু ই-রুপি ব্যবহারকারীরা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছাড়াই পরিষেবা পেতে পারেন। নির্দিষ্ট ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারবেন। ডিজিটাল নোটেও থাকে ইউনিক নম্বর, থাকবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের সই। UPI লেনদেনে নজরদারি চালানো গেলেও সরকার ঘোষণা করেছে ই-রুপি লেনদেনের তথ্য ট্রাক করা হবে না।

দৈনন্দিন লেনদেনে ডিজিটাল রুপির ব্যবহার কীভাবে করবেন ?
ই-রুপি আদতে এক ধরনের ই-ভাউচার। QR কোড অথবা SMS-এর মাধ্যমেও প্রেরকের থেকে সরাসরি প্রাপকের কাছে অর্থ পাঠানো যায়। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার তরফে পাইলট প্রকল্পের অধীনে ৮টি ব্যাঙ্ককে বেছে নিয়েছে যেখানে ডিজিটাল মুদ্রা কেনা-বেচা যাবে। স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, ICICI ব্যাঙ্ক, ইয়েস ব্যাঙ্ক ও IDFC ফার্স্ট ব্যাঙ্কের মাধ্যমে আপাতত মুম্বই, নয়া দিল্লি, বেঙ্গালুরু ও ভুবনেশ্বরেই ই-রুপির পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে। একে একে ব্যাঙ্ক ও ভৌগলিক সীমানাও বাড়ানো হবে। উল্লেখিত এই ব্যাঙ্কগুলিও তাদের নিজস্ব ডিজিটাল রুপি অ্যাপ লঞ্চ করেছে। গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোর থেকে ইন্সস্টল করতে হবে অ্যাপটি। অ্যাপ ওপেন করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ৫০০ টাকার নোট থেকে ১ টাকার কয়েন, সবই ‘লোড’ অর্থাৎ ওয়ালেটে যুক্ত করে লেনদেন করতে পারবেন। বর্তমানে নির্দিষ্ট কিছু দোকান ও সংস্থাতে এই ডিজিটাল রুপি দিয়ে ক্রয় করতে পারেন বা স্মার্টফোন বা কম্পিউটার-ল্যাপটপের মাধ্যমে অনলাইনে ‘পার্সন টু পার্সন’ ও ‘পার্সন টু মার্চেন্ট’ ই-রুপির লেনদেন করতে পারবেন।

ডিজিটাল রুপির সুবিধা কী হবে ?
কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়েছে, ই-রুপি ক্রিপ্টোকারেন্সির থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এই ডিজিটাল মুদ্রার সবথেকে বড় সুবিধা হল সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলিও এটিকে বৈধ আর্থিক লেনদেন হিসাবে গণ্য করে। অর্থাৎ এই ডিজিটাল মুদ্রা সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত। আপনি সহজেই ডিজিটাল মুদ্রাকে নগদ বা ব্যাঙ্কিং মুদ্রা হিসাবে পরিবর্তিত করতে পারবেন। ডিজিটাল মুদ্রা আইনত স্বীকৃত হওয়ায়, আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না থাকলেও আপনি ই-রুপি লেনদেন করতে পারবেন।

এছাড়াও নগদ টাকা নষ্ট হলেও, ই-রুপি নষ্ট হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। ক্রিপ্টোকারেন্সির তুলনায় ই-রুপি অনেক বেশি সুরক্ষিত কারণ তা কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে থাকবে। এছাড়াও টাকা ছাপাতে দেশের যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় তাও হবে না। ছাপানো টাকা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছানোর খরচও বাঁচবে। কমবে জাল নোটের কারবার। অন্যদিকে কাগজের ব্যবহার কমলে বজায় থাকবে পরিবেশের ভারসাম্যও। বাড়বে ক্যাশলেস লেনদেন। প্রয়োজনে অন্য দেশের সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেনও সহজ হতে পারে।

সম্ভাবনা
সম্প্রতি ই-রুপি ভাউচারের পরিসর বৃদ্ধির ঘোষণা করেছে RBI আগে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ব্যাঙ্কগুলি ই-রুপি ভাউচার ইস্যু করতে পারত। তবে এবার থেকে নন-ব্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠানগুলিও ই-রুপি ভাউচার ইস্যু করতে পারবে। শুধু তাই নয়, ই-রুপি ইস্যুর প্রক্রিয়াটি সরল করতে চায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ই-রুপির প্রসার ঘটাতেই এই পদক্ষেপ। সম্ভবত এটিই হবে ডিজিটাল ভারতের ভবিষ্যৎ।

আরও পড়ুন বিটকয়েনে ঝুঁকি বিনিয়োগে রাতারাতি টাকা দ্বিগুণ, প্রবল আগ্রহ বাড়ছে ভারতীয়দের

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Stay Connected

3,541FansLike
3,210FollowersFollow
2,141FollowersFollow
2,034SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles